বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার পৌর শহরের প্রধান ও আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কার হয়নি। চলাচলের অযোগ্য এসব সড়কে প্রতিনিয়তই স্থানীয়দের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। কক্সবাজার বাসটার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় এলাকা পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। প্রতিদিনই এই সড়কগুলোতে চলাচল করে পর্যটকসহ অর্ধলক্ষ মানুষ। দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশা এই শহরের। ভাঙা, খানাখন্দ আর কাদা পানিতে একাকার। যান চলাচলে অযোগ্য এই শহরে বিড়ম্বনার শেষ নেই স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার জনপ্রতিনিধি আর সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ভাঙা সড়কের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কক্সবাজার পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, উপ-সড়কের বর্তমান অবস্থা এতই খারাপ যে, যানবাহন চলাচল দূরের কথা হেঁটে চলাচলেরই অবস্থা নেই। কক্সবাজার পৌরসভার হাঙরপাড়া, পশ্চিম টেকপাড়া, পূর্ব টেকপাড়া, মধ্যম টেকপাড়া, উত্তর টেকপাড়া, জনতা সড়ক, আমেনা খাতুন স্কুল সড়ক, বার্মিজ স্কুল রোড, সিকদার মহল, পুরাতন ম্যালেরিয়া অফিস রোড, কবি নজরুল সড়ক, পেশকার পাড়া, কুমিল্লা পাড়া, চাউল বাজারসহ আরও কয়েকটি এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ৪ নং ওয়ার্ড। বিগত ৩ বছরে বৃহত্তর এই ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। টেকপাড়া চৌমুহনী থেকে চাউল বাজার পর্যন্ত সড়কটি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা ড্রেইনগুলোর। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ড্রেনে আবর্জনা জমে গেছে। বার্মিজ স্কুল রোডের সড়ক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। কার্পেটিং উঠে গিয়ে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা পুরোপুরি অসহায়, শহরের ভেতরের রাস্তাগুলো সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে তা শুরু হচ্ছে না। রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে, প্রায়ই অনেক মালবাহী পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশাসহ আরো অনেক গাড়ি যাতায়াত করে এ রাস্তাটি দিয়ে। একই দশা অন্যান্য ওয়ার্ডেরও। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হাসপাতাল সড়ক, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও স্টেডিয়াম সড়ক নিয়ে দুঃখ শেষ নেই পথচারীদের। খানা খন্দকে মুছে গেছে সড়কের চিহ্ন। গোলদিঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ী দিপু দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখান সড়কের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে চলাচলে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে পথচারিদের।
বাস টার্মিনাল থেকে হলিডে মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু কাজ করে গর্ত ভরাট করে পৌরসভা, কউক আর সড়ক বিভাগ। কিন্তু তাদের এসব কাজে কিছুদিন পরই সড়কের আবারও একই অবস্থা হয়। কলাতলী মোড় থেকে হোটেল সায়মন পর্যন্ত সড়কটি হরহামেশা পানিবদ্ধতায় আবদ্ধ থাকে। আশপাশের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা পানি রাস্তায় এসে জমে থাকে। আবর্জনায় নালা ভরাট থাকায় ময়লা পানিও রাস্তায় চলে আসে।
এছাড়া প্রধান সড়কের আলির জাহাল, রুমালিয়ারছড়া, খুরুস্কুল রাস্তার মাথা, তারাবনিয়ার ছড়া, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা থেকে হলিডের মোড় পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে খানা-খন্দক ও অগণিত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসক্লাব রোড ও জেলা পরিষদ সড়কের শোচনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সড়কগুলোতে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই সড়কে ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। কউক দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান সড়ক কয়েক দফায় সংস্কার করা হয়। এক মাসের মধ্যে হলিডের মোড় থেকে হাসেমিয়া মাদরাসা পর্যন্ত প্রধান সড়কের কাজ শুরু করা হবে। পরবর্তীতে কিছু জটিলতা লাঘব হলে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের কাজ করা হবে। এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়েছেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় জনসংখ্যা বেড়েছে, বর্ধিত হয়েছে পৌরসভা। কিন্তু সেই অনুপাতে পৌরসভায় জনবল বাড়েনি, বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধাও। পৌরসভার ওপর জনগণের নানাভাবে চাপ বেড়েছে। চাপ পড়েছে সড়ক ও নালার উপর। এসব সমস্যা সমাধানে এখনো সরকারি কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। নাগরিকদের কর বাড়ানো হয়নি। সীমিত আয়ে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে শতকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। একটি সড়কও ভাঙা থাকবে না। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সকল সড়কের সংস্কার করা হবে। এক বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে পর্যটন শহরের চেহারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন