শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ফ্লাইওভারে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

যানজট নিরসনের লক্ষ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একেকটি ফ্লাইওভার নির্মান করা হয়েছে। গত এক দশকে তৈরী হওয়া রাজধানী ঢাকার ফ্লাইওভারগুলো শহরের যানজট নিরসনে কতটা অবদান রেখেছে তা এখন বিতর্কের বিষয় হলেও ফ্লাইওভারগুলো নির্মিত হওয়ার পর এর উপর ও নিচ দিয়ে চলাচলকারী পথচারি ও যানচালকদের নিরাপত্তাহীনতা এখন আর বিতর্কের বিষয় নয়। এত বিপুল ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মান করা হলেও এর নিচের রাস্তাগুলো বছর ভরে খানা-খন্দক, ময়লার ভাগাড় এবং নানা রকম দখলবাজির শিকার হয়ে জনদুর্ভোগ ও পথচারিদের নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতর ফ্লাইওভার নির্মান করে দায়িত্ব শেষ করলেও এসব ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা, গািতশীলতা, নান্দনিক সৌন্দর্য রক্ষার কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকার প্রধান ৬টি ফ্লাইওভারের ৪টিতেই রাত্রে ঠিকমত বাতি জ্বলে না। এ কারণে প্রায়শ ঘটছে দুর্ঘটনা। মাসের পর মাস ধরে ফ্লাইওভারের উপরে ও নিচের রাস্তাগুলোতে বাতি না থাকায় রাতের বেলা এসব ফ্লাইওভার পেশাদার ছিনতাইকারী, ভাসমান পতিতা ও অপরাধীচক্রের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়।

ফ্লাইওভারগুলোর প্রবেশপথে নান্দনিক স্টল বসিয়ে দিনরাত টোল উত্তোলন করা হলেও এর নিচে এবং উপরের নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতাসহ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যপারে কোনো কর্তৃপক্ষেরই যেন মাথাব্যথা নেই। সিটি কপোর্রেশন, ডিএমপি, ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ এবং ফ্লাইওভার বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্¦ পালনে অনীহা ও অবহেলা এখানে স্পষ্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান (মেয়র হানিফ) ফ্লাইওভারের নিচে বছরের পর বছর ধরে দখলবাজির মচ্ছব চলছে। কয়েক কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারের নিচে রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ, ঘোড়ার আস্তাবল, ময়লার ভাগাড়, মুরগির খামার, ভাতের হোটেল, নার্সারি ইত্যাদি সবই চলছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। ফ্লাইওভারের নিচে যে সব অংশে নিরাপত্তা ও সংরক্ষণের জন্য লোহার ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে, সেখানেও ছিন্নমূল টোকাই, ভাসমান পতিতা ও মাদকাসক্ত ও মাদক বিক্রেতা, ছিনতাইকারীসহ অপরাধিচক্রের খোলামেলা আড্ডাখানা গড়ে উঠেছে। খানা-খন্দ, ময়লার ভাগাড় এবং দখলবাজির কারণে সঙ্কুচিত রাস্তায় সাধারণ পথচারিদের চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। রাস্তার বেহালদশা, ময়লার দুর্গন্ধ এবং দৃষ্টিকটু-অসামাজিক চক্রের দখলবাজি পুরো পরিবেশকেই কলুষিত করে তুলেছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের উপরে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে প্রায়শ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা, পর্যাপ্ত বাতি এবং নিরাপত্তামূলক নজরদারি না থাকায় দুর্ঘটনা, ছিনতাই-চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। এটি শুধু মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের চিত্র নয়। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত প্রায় সবগুলো ফ্লাইওভার ও ফুটওভারব্রীজে অভিন্ন চিত্র দেখা যায়।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিক নগর জীবনে বহুমুখী ও বহুতল ফ্লাইওভার একটি বিকল্পহীন অনুসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বল্প পরিসর রাস্তায় যানজটমুক্তভাবে বিপুল সংখ্যক গাড়ী চলাচলের জন্য ফ্লাইওভারগুলো চমৎকার কাজ করছে। সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংককের মত শহরগুলোতে ফ্লাইওভারগুলো শুধু যানজট নিরসনই করছেনা, সেই সাথে শহরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। আমাদের ফ্লাইওভারগুলোর নির্মান নকশায়ও সৌন্দর্য বর্ধন, গাছপালা ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়গুলো রয়েছে বলে জানা যায়। তবে বাস্তবে সে সবের কোনো তোয়াক্কা করছে না বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইওভারের নিচে ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা, সামান্য বৃষ্টিতে কাঁদাপানি ও ময়লা জমে পুঁতিগন্ধময় হয়ে ওঠার চিত্র বড়ই বেমানান ও অসঙ্গত। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে দুইজন সুশিক্ষিত ও প্রতিশ্রæতিশীল নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকার নাগরিক বিড়ম্বনা, যানজট নিরসন, ফুটপাথ, ওভারব্রিজ ও সরকারি জমিতে দখলবাজি-চাঁদাবাজি উচ্ছেদ করতে তারা নগরবাসির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। ফ্লাইওভারের নিচে দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশন অভিযান শুরু করছে বলে জানা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের ফ্লাইওভার, ফুটওভারব্রীজগুলোকে দখলবাজি, মাদক ও অপরাধমুক্ত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা সুরক্ষা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও সচেতনভাবে দায়িত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন