শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

চলনবিলে হাঁসের খামারে শামুকের অপব্যবহার

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

 সিরাজগঞ্জ-পাবনার বৃহত্তম চলনবিল এলাকায় এখন হাঁসের খামারে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শামুককে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে বিস্তীর্ণ চলনবিলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিরাজ করছে। প্রতিদিন প্রায় কয়েক টন শামুক বিল থেকে উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলে এই বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে প্রায় ৫ হাজার হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন এই হাঁসের খামারে খাদ্য হিসেবে শামুকের ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রচন্ড রোদে এই শামুকগুলো পানির গরম তাপে মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকে। সূর্য ডোবার পূর্বে থেকে এই জলজ প্রাণী মাটির ওপর ভেসে উঠে আর তখনই এলাকার হাঁস খামারি মালিকেরা মই জাল দিয়ে টনকে টন শামুক তুলে তা হাঁসের খাদ্য হিসেবে দিয়ে থাকে। যদিও হাঁসের খাদ্য হিসেবে ধান, গমের খুদ, এমনকি ফিড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে শামুকের ব্যবহার বৃদ্ধি করে নগদ মূল্যে কেনা অন্যান্য খাদ্য হ্রাস করছে। বিনা মূল্যে শামুক পাওয়া যায় বলে এখন প্রতিটি খামারি মালিক এই শামুকের ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। আবার কেউ কেউ এই শামুক তুলে বিক্রি করছে। ফলে শামুকের ব্যবহার অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে।
এক বা দুই শত হাঁস পালিত ছোট খামারে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ মণ শামুক খাদ্য হিসেবে দিতে হয়। এ অঞ্চলে প্রায় ২/৩ হাজার হাঁস একত্রে করে খামার তৈরি করা হয়েছে। তাতে কি পরিমাণ শামুকের ব্যবহার হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। বিস্তীর্ণ চলনবিল জুড়ে প্রায় ৪/৫ হাজার খামারে প্রতিদিন টনকে টন শামুক নদী থেকে উত্তোলন করে হাঁসের খামারে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হাঁস খামারি জানান, দেশাল জাত, ক্রস জাত ও ছিনুক জাতের প্রায় ২/৩ শত হাঁসের খামার তার রয়েছে। তাদের শামুক দিলে নাকি ডিম পুষ্ট বা বড় হয়। তাই প্রতিদিন সন্ধার পূর্ব থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলনবিলের নদী থেকে মইজালের মাধ্যমে প্রায় ১৫/২০ মণ শামুক (ক্ষুদ্রাকৃতির) তুলে হাঁসের খামারে দিতে হয়। যেসব বড় খামারিতে ২/৩ হাজার হাঁস একত্রে পালন করে তাদের পাইট কামলা নিয়োগ করে চলনবিলের নদী থেকে মণকে মণ শামুক তুলে হাসের খাদ্য সরবরাহ করা হয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, অনেকে ব্যবসা হিসেবে শামুক তুলে বাজারে বিক্রি করছে। ১৫/২০ কেজি শামুকের একটি বস্তা তারা ২/৩ শত টাকা বিক্রি করে থাকে। এভাবে চলনবিল অঞ্চলে হাজার হাজার মণ শামুক তুলে খামারিদের কাছে বিক্রি করছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। শামুকের এহেন ব্যবহারে কোন বাঁধা এসেছে কিনা তা জানতে চাইলে জানায়, কৃষি অফিসার থেকে শুরু করে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এলাকায় আসে। তারা কখনো বাঁধার সৃষ্টি করেনি।
বন্যা মৌসুমে সমগ্র চলনবিল এলাকায় প্রায় ৪/৫ হাজার খামারিতে প্রতিদিন কি পরিমাণ শামুক উত্তোলন করা হয় তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও উল্লাপাড়া উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসার মো. মোর্সেদ এ প্রতিনিধিকে জানায়, প্রতিটি হাঁসের জন্য মাথাপিছু আড়াইশ গ্রাম শামুক খাদ্য হিসেবে প্রয়োজন হয়। সে হিসেব অন্তত এক হাজার হাঁসের খাদ্যের প্রয়োজন হয় প্রায় সাড়ে ছয় মণ। সে অনুযায়ী বিস্তীর্ণ চলনবিল অঞ্চলে আনুমানিক পাচ হাজার হাঁসের খামারে গড়ে পাচশ করে হাঁস ধরা হলেও পচিশ লাখ হাঁসের শামুকের খাদ্যের প্রয়োজন হয় ১৫ হাজার ৬২৫ মণ অর্থাৎ প্রায় ৫৮০ টন। সুতরাং একদিনের খাবার যদি এই পরিমাণ হয় তবে ৬ মাসে কি পরিমাণ শামুক চলনবিল থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। এলাকাবাসীর মতে পরিবেশ বান্ধব এই প্রাণী পরিবেশ রক্ষায় অবশ্যই কিছু না কিছু উপকার করে থাকে। তারপরেও এ আঞ্চলে শামুক উত্তোলন করে খামারে সরবরাহ করা বন্ধ হচ্ছে না।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন জলজ প্রাণী পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় কম বেশি ভ‚মিকা রাখে। আমরা আমাদের অজ্ঞতার কারণে এভাবে জলজ প্রাণী ধ্বংস করে থাকি। যেভাবে এই শামুকের যথেচ্ছে ব্যবহার করা হয় তাতে পরিবেশ বিপর্যয়ের খুব সম্ভাবনা থেকেই যায়। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের জরূরীভাবে সু-ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভবিষ্যতে আমাদেরকে নানা সমস্যায় জর্জরিত হতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন