লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ফজুমিয়ারহাট বাজারের মূল্যবান সরকারী খাস জায়গা (দোকান ভিটি) প্রভাবশালীদের কে বন্দোবস্ত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এতে প্রকৃত গরিব অসহায় নিরীহ মানুষসহ সর্বসাধারনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনরুপ যাছাই বাছাই ছাড়া সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত উপায়ে দামী এ জায়গা বন্দোবস্ত দিয়ে থাকেন।স্থানীয় একজন গরিব অসহায় লোকের প্রায় ২০ বছরের দখলে থাকা ঐ জায়গা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে একাধিক প্রভাবশালীকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।প্রভাবশালীমহল ঐ জায়গায় দোকানঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।জানা যায়,২০১৬ খ্রীঃ সনে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে তৎকালীন কর্মরত ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার),উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এই অনৈতিক কাজের সূচনা করেন। বন্দোবস্ত পাওয়ার অনুপযোগী বিস্তর সম্পত্তির মালিক সরকারি চাকুরিজীবী ব্যবসায়ী বাজারের একাধিক দোকানঘর মালিকের নামে সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত প্রদান করে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, ছিন্নমূল অসহায় মানুষের মাঝে সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গা পতিত জমি দোকান ঘর নির্মাণ উপযোগী স্থান বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য স্পষ্ট নীতিমালা বিদ্যমান থাকলে ও লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট বাজারের খাস জায়গা দোকান ভিটি ও ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে এই নীতিমালা মানা হয়নি।নতুন করে ১০ টি দোকানঘর বন্দোবস্তে সম্পুর্ন প্রভাবশালীদের কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।'টাকা যার সরকারি সম্পত্তি বন্দোবস্ত তার' এমন নীতিতেই বন্দোবস্ত দেওয়া হয় ফজুমিয়ারহাট বাজারের খাস জমি দোকান ঘর বন্দোবস্ত।একজনের দীর্ঘদিনের দখলে থাকা জায়গা অন্যজনকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।এতে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে।টাকার নিকট হেরে গেলেন গরীব অসহায় ও নিরীহ মানুষ।প্রকৃত ভূমিহীন হত দরিদ্র ভিটেমাটি হারা নদী ভাঙ্গন কবলিত অসহায়রা উপেক্ষিত। ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত।সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খামখেয়ালিপনা আর ঘুষ বাণিজ্যের কারনে প্রকৃত ভূমিহীন লোকজন বন্দোবস্ত না পেয়ে পেয়েছে ধনীক শ্রেণির লোকেরা। বন্দোবস্ত পাওয়া অনেকেরই ঐ বাজারে একাধিক দোকানঘর রয়েছে। যারা বার বারই অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কতিপয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বার বার একই গোষ্ঠী স্থানীয় এ বাজারের বিভিন্ন স্থানে থাকা পতিত সরকারি খাস মূল্যবান জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকেন।এ নিয়ে সর্বসাধারনের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠে।ক্ষুব্ধ নিরীহ জনগণ এহেন দুর্নীতি অনিয়মের রুখতে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিলকরন মানববন্ধনসহ প্রশাসনের আবেদন জানানোর পরিকল্পনা করছেন।
মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতিতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের।
চরকাদিরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সুত্রে জানাযায়,তৎকালীন ভূমি উপ সহকারি (তহসিলদার) সানাউল্লাহ থাকাকালীন সময়(২০১৬খ্রীঃ) ফজুমিয়ারহাট বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি নতুন গলি নির্মাণ করার লক্ষ্যে সরকারের ১ নং খাস খতিয়ান ভূক্ত জমিতে দোকান ভিটির জন্য আবেদন করেন ঐ এলাকার প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিরা।এদের প্রত্যেকের নিজের নামে ও আত্মীয় স্বজনদের নামে ফজুমিয়ারহাট বাজারে একাধিক দোকান ঘর রয়েছে।রয়েছে বিশাল সম্পত্তি আলিশান বাড়িঘর। রাতের আধাঁরে সম্পুর্ন গোপনীয় ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি অসাধু কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে তাদের কে বন্দোবস্ত পাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
বন্দোবস্ত পাওয়া তালিকায় রয়েছে নুরুল ইসলাম ,সারওয়ার হোসেন, সোহেল বাংগালী, মিলন মিয়া,আনোয়ার হোসেন হিরন হাওলাদার, শাহজালাল মানিক,আব্দুল মালেক মেম্বার ও ডালিম কুমার শ্রীপদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে অবৈধ উপায়ে বন্দোবস্ত নেয়া একজন সারওয়ার হোসেন জানান এই ভিটি গুলো বন্দোবস্ত নিতে আমাদের প্রত্যেক লোকের প্রায় লক্ষাধিক টাকার মত খরচ হয়েছে।আপনারা লেখালেখি করলে হয়তো বন্দোবস্ত বাতিল হয়ে যাবে।এ বিষয়ে লেখালেখি না করতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের অনুরোধ জানান।
আবার অনেকে টাকা দিয়েও দোকান ভিটি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ তৎকালীন তহশিলদার সানা উল্লাহ সার্ভেয়ার এসিল্যান্ড যৌথভাবে কমলনগরের এ গুরুত্বপূর্ণ বাজার ফজুমিয়ারহাটের কিছু দালালের সহায়তায় পতিত খাস ভূমিতে দেকান ভিটি উপযোগী প্রতি ভিটির জন্য ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ টাকা করে আরো প্রায় ১০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্ত তাদের নামে কোন দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।
কিন্ত এই পতিত জমি ও ভিটি উপযোগী স্থানটি পুর্ব থেকে অন্য লোকজনের দখলে রয়েছিল।বর্তমানে ও তারা ভোগদখলে থেকে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে যাচ্ছেন।নিয়মানুযায়ী আগের দখলে থাকা ব্যক্তি ঐ জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার রাখেন।কিন্তু তাদের কে না জানিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয় ভাবে তারা এই দোকান ভিটি গুলো বন্দোবস্ত নেন। সরকারের সকল আইন ও বিধিমালা লংঘন করে সম্পুর্ন একতরফা ও গোপনীয় ভাবে এই ভিটি গুলো বন্দোবস্ত দেন কর্মকর্তারা। এই নিয়ে ফজুমিয়ারহাট বাজার ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের এখনো ক্ষোভের কমতি নেই।যেকোনো মূহুর্তে দীর্ঘদিনের প্রকৃত ভোগ দখলকারি নিরীহ
এলাকাবাসী ও অবৈধ উপায়ে বন্দোবস্ত পাওয়া দখলবাজদের মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।
বাজার ব্যবসায়ী ইসমাইল, স্বপন,আবুল হোসেন ও ইউছুপ জানান উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজার উপজেলার চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষ জনসাধারনের জন্য একটি বড় বাণিজ্যক কেন্দ্র। জায়গার অভাবে এ বাজারে কোন যাত্রী ছাউনি টোল ঘর ও পাবলিক টয়লেট করা যাচ্ছে না।অথচ সরকারী এই জমিতে সরকারি মার্কেট নির্মাণসহ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার মত যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।সরকারিভাবে মার্কেট নির্মাণ করে তা ইজারার মাধ্যমে ভাড়া দেয়া হলে সরকারি রাজস্ব আয়ের বিরাট খাত সৃষ্টি হতো। তাই জনবহুল এই বাজারের উন্নয়নের স্বার্থে প্রভাবশালী
দের নামে দেওয়া জমির বন্দোবস্ত বাতিল করে সরকারি উদ্যোগে একটি মার্কেট ও পাবলিক টয়লেট ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করার দাবী এলাকাবাসী ও বাজার ব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে চরকাদিরা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল আলী বলেন,ঐ জায়গাতে যাত্রী ছাউনি ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা যেতে পারে।কিন্তু এখন তো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ভাল বলতে পারবেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি পুদম পুষ্প চাকমা বলেন আমি নতুন এসেছি।বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন