রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মানবাধিকার ও ইসলাম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

তেরো
বুখারী ও মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত এক হাদীসে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ সা. স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন- “শক্তি-সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজ শ্রমিকদের উপর চাপাবে না। যদি তার সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কোন কাজ তাকে দাও তাহলে সে কাজে তাকে সাহায্য কর। “হোসেন, মুহাম্মদ ফরহাদ, প্রাগুক্ত, পৃ. ১২”।
মহানবী সা. এভাবে শান্তি, মৈত্রী, ক্ষমা, দয়া, শ্রমের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের যে মহান আদর্শ রেখে গেছেন- মানব মর্যাদা ও মানবাধিকারের ধারণা ও তা অর্জনের ক্ষেত্রে তা এক অতুলনীয় দিক-নির্দেশনা। তাঁর এই গুণাবলি ও দৃষ্টিভঙ্গীতে মুগ্ধ বিখ্যাত দার্শনিক, সাহিত্যিক জর্জ বার্নড শ’ তাই বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি- “If all the world was united under one leader, Mohammad would have been the best fitted man to lead the peoples of various creeds, dogmas and ideas to peace and happiness. “কাইয়্যূম, অধ্যাপক হাসান আব্দুল, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪২”।
৩। নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাসূল সা. এর গৃহীত কর্মপন্থা : নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। নারী মুক্তির প্রবক্তা হিসেবে আমরা হয়ত কেট মিলে (kate Millet), জার্মেন গ্রীয়ার (Germaine Greer) বা অ্যানী নূরাকীন (Anne Nurakin) প্রমুখের নাম জানি; এছাড়াও রয়েছে মেরী উলষ্টন, অ্যানী বেসান্ত, মার্গারেট সাঙ্গাঁর, সুলতানা রাজিয়া, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ মহীয়সী মহিলাদের সংগ্রামের ইতিহাস।
কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে নারীর অধিকার ও মর্যাদার জন্য যে ব্যক্তি প্রথম সোচ্চার হয়ে ওঠেন, নারীকে সংযম ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ হিসাবে যে ব্যক্তি প্রথম স্বীকৃতি দেন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীর অধিকার পরিপূর্ণ আকারে যে ব্যক্তি প্রথম প্রচেষ্টা করেন, সত্যিকার অর্থে নারীর জাগরণ ও নারী মুক্তির যিনি প্রবক্তা তিনি হচ্ছেন মুহাম্মদ সা.। একথা বলা অত্তুক্তি হবে না যে, জীবনে অন্যকিছু না করলেও শুধু নারী জাগরনের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানই বিশ্ব মনীষার মুহাম্মদ সা. কে সুউচ্চ আসনে সুদৃঢ়ভাবে অধিষ্ঠিত করবে। ‘‘আলী, সৈয়দ আশরাফ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, সীরাত স্মরণিকা, ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১৪১৭ পৃ. ২৩’’
নারীর প্রতি রাসূল সা. এর দর্শন এসেছে মূলত কুরআনের নীতি-দর্শন থেকে। প্রকৃতপক্ষে তাঁর জন্মকালে নারীকে বিশ্বের কোথাও এমনকি স্বাধীন মর্যাদাবান মানুষ হিসেবেও বিবেচনা করা হতো না। নারীকে ‘ভোগের বস্তু’ লাঞ্ছনা ও পাপের প্রতিমূর্তি’ এবং কোথাও কোথাও অন্যান্য অস্থাবর সম্পতির মত ‘সম্পত্তি’ মনে করা হতো। কুরআনে সূরা আন-নাহল- এ আল্লাহ তা’আলা তৎকালীন সমাজে নারী সম্পর্কে মানুষের মানসিকতাকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। “যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তার মুখমন্ডল কোলে হয়ে যায়, সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সংবাদ দেয়া হয় তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্তে¡ও সে তা রেখে দেবে না মাটিতে পুঁতে দেবে। “আল-কুরআন, ১৬ : ৫৮ - ৫৯”।
এভাবে নারীর প্রকৃত মুক্তি, তার স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মহানবী সা. এক অনন্য সাধারণ দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন যা বর্তমান নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির ধারণার চেয়ে বহুগুণে উন্নত, পরিণত ও সুদূর প্রসারী। প্রখ্যাত লেখিকা নাসিমা খাতুন তার একটি গবেষণা নিবন্ধে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন- “Wihin the twenty-three yers during which the prophet Muhammad (peace be upon him) promulgated the Message of Islam, the position of position of woman was raised from the lowest degradation to the greatest heights of esteem, honour and respect” Nasima Khatun, the status and Righyts of women in islam, Social Science Review, A Journal of the Faculty of Social Science, University of Dhaka, Vol-xvi, No-1 June 1999, P, 410”। রাসূল সা. এর প্রতিষ্ঠিত নারী স্বাধীনতা ও নারী মর্যাদাকে সমসাময়িক অন্যান ধর্মমত ও জীবনদর্শনের সাথে তুলনা করে নাসিমা দেয়িছেন যে, যে, “...compared to all other civilizations and law of the world Islamic law has given women her rights to the highest degree, before everybody also and most disinterstedly and recognized her ture dignity Nasima Khatun, Ibid, P-413” মনীষী পিয়েরে ক্রাবাইট এর মতে, He (Muhammad) was probably the greatest champion of womens rights the world has ever seen. “আলী, সৈয়দ আশরাফ, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩”।
৪। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে শাস্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা : অনেক ধর্মগুরু, ধর্মপ্রচারক বা মহাপুরুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন কিভাবে কেটেছে তা জানা যায় না। কিন্তু মুহাম্মদ সা. এর পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। রাসূল সা. পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তির’ পথ তিনি পরিহার করে চলেছেন। বরং তাঁর মতে পরিবার ও সমাজে শান্তি, সাম্য, ন্যায়বিচার, ও আল্লাহর আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করাই প্রকৃত ধর্মাচরণ। আমরা ইত:পূর্বে ‘বিবাহ’ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবারের ভিত্তি রচনা, পুত্র সন্তানের পাশাপাশি কন্যা সন্তানকে স্বাগত জানানো এবং কন্যাকে অধিক গুরুত্বদান, স্ত্রীর অধিকার প্রভৃতি সম্পর্কে তাঁর জীবন-দর্শন আলোচনা করেছি- যেখানে দেখা গেছে মানুষের জীবনের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে অধিকার ও মানবতা প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে। এখানে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান সম্পর্কে অন্য কয়েকটি বিশেষ দিকের উপর আলোকপাত করা হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন