শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন : সুস্থ থাকুন

| প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ নিয়মগুলো মেনে চললেই রোগ আপনার থেকে দূরে থাকবে, জীবন হয়ে উঠবে নিরোগ ও আনন্দময়। এবার সে নীতিনির্দেশিকাগুলো নিয়ে আলোচনা করছি।

সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি ঃ ১) রোজ গোসল করে পরিষ্কার জামাকাপড় পরিধান করা উচিত। ২) ভিতরের জামাকাপড় রোজ পাল্টানো উচিত। ৩) বাইরে থেকে ঘরে এসে কাজকর্ম করে বাড়ি ফিরে অবশ্যই হাত-পা ধৌত করা ও জামাকাপড় বদলানো উচিত। ৪) হাত ও পায়ের নখ নিয়মিত কেটে ফেলা উচিত। ৫) রান্না করা ও খাওয়ার সময় হাতের আংটি খোলা উচিত। ৬) যেখানে সেখানে থুথু, পানের পিক ফেলা, প্রস্রাব, পায়খানা করা উচিত নয়। ৭) খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। ৮) যে কোন কিছু বিশেষত মিষ্টি, চকলেট খাওয়ার পর মুখ ভাল করে ধোওয়া উচিত। ৯) বাইরের খোলা খাবার বা কাটা ফল না খাওয়া ভাল। ১০) খাবার সর্বদা ঢেকে রাখা উচিত।

রান্নার ধরণ ঃ ১) সবজি কাটার পূর্বে পানিতে কমপক্ষে এক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা প্রয়োজন। ২) সবজি কাটার আগে ধোওয়া উচিত, পরে নয়। যতটা সম্ভব সবজির খোসা না বাদ দেওয়া এবং বড় মাপের টুকরো করে কাটা ভালো। ৩) সর্বদা ঢাকা পাত্রে (প্রেসার কুকারে হলে আরও ভাল) রান্না করা উচিত। ৪) রান্নায় শুকনো লংকার গুঁড়ো ব্যবহার করা উচিত নয়। ৫) তেলে সরাসরি আদা, পেঁয়াজ, রসুন ভাজা ঠিক নয়। ৬) অতিরিক্ত ভাজা বা কষা উচিত নয়।

খাবার নিয়ম ঃ * খাওয়ার পূর্বে এবং পরে হাত ও মুখ ধোওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। * খাবার সর্বদা খুব ভালো করে চিবিয়ে খেতে হয়। খেতে খেতে কথা বলা, কাগজ পড়া, গল্পের বই বা টিভি দেখা উচিত নয়। * ভরপেট খাওয়া কখনো উচিত নয়। সর্বদা পেট কিছুটা খালি রেখে খাওয়া উচিত। * খেতে খেতে এবং খাওয়ার পরপর কখনো পানি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে আধঘন্টা বা এক ঘন্টা পর পানি পান করা উচিত। * দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পর তিন থেকে পাঁচ মিনিট বজ্রাসন করা যেতে পারে।* মূল খাবার দিনে ৩ বার গ্রহণ করা ভাল (সকাল, দুপুর, রাত)। * সকালে খাবারের পরিমাণ বেশি রাখা এবং দুপুরে ও রাতে ক্রমশ কমানো উচিত। * অনবরত টুকিটাকি খাবার ঠিক নয়। * খুব মানসিক চাপ থাকলে বা কাজের তাড়া থাকলে তখন পুরো খাবার না খেয়ে শরবত পান করা ভাল।

পানি পানের নিয়ম ঃ ১. যথাযথ পরিমাণে পানি পান করা উচিত। শরীরের প্রতি কেজি ওজনে ৫০ মিলিলিটারে পানির প্রয়োজন হয়। ২. সর্বদা গ্লাসে চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে পানি পান করা উচিত। ৩. কাজকর্মের সময় ঘেমে-নেয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে সঙ্গে পানি না খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে পান করা উচিত। ৪. পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করে ঢেকে রাখা উচিত। ৫. কখনো পাত্রে হাত ডুবিয়ে পানি তোলা উচিত নয়। ৬. ফিল্টার ব্যবহার করলে ক্যান্ডেল সপ্তাহে কমপক্ষে একবার পরিষ্কার করা উচিত। ৭. গরমের সময় ফ্রিজের পানি না খেয়ে মাটির বা পেতলের কলসের পানি পান করা উচিত। ৮. কম দামি প্লাস্টিকের বোতলে দীর্ঘক্ষণ পানি না রেখে স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ব্যবহার করা ভাল।

ঘুমানোর নিয়ম ঃ ১) শোওয়ার সময় কখনোই সোজা হয়ে শুতে নেই, সাধারণত পাশ ফিরে শোয়া উচিত। ২) বালিশ ছাড়া শোওয়া ঠিক নয় এবং মোটা বালিশ নয়, পাতলা বালিশে শোওয়া ভাল। ৩) অতিরিক্ত নরম ও অসমান গদিতে শোওয়া ঠিক নয়। ৪) সুস্থাবস্থায় ৬-৭ ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট। ৮ ঘন্টা বা তার বেশি ঘুম মানুষের আয়ু কমিয়ে আনে। ৫) শোওয়া থেকে ওঠার সময় সর্বদা পাশ ফিরে ওঠা উচিত। সোজা অবস্থায় কখনোই উঠতে নেই। ৬) ঘুম থেকে ওঠার পর ধীরে ধীরে বিছানা ত্যাগ করা উচিত।

দৃষ্টি ভাল রাখার উপায় ঃ ১. দিনে এক থেকে দু’বার ঠান্ডা পরিষ্কার পানিতে আলতো করে চোখ ধুয়ে নিন। ২. চোখ উপর-নীচ, ডান-বাম পাশ, কোণাকুনি ওপর-নীচ এবং গোল করে ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘুরে, সেভাবে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিক করে ধীরে ধীরে দশবার করে ঘোরানো উচিত। ¬ দুটো ভ্রুর মাঝখান দিয়ে অসুবিধা না হওয়া পর্যন্ত স্থিরভাবে সামনে দেখা ভ্রুমধ্য দৃষ্টি। ৩. অসুবিধা না হওয়া পর্যন্ত সমতলে এক মিটার দূরে কিছু রেখে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। ৪. হাতের তালু ঘষে নিয়ে চোখের উপর আলতো করে ঢাকা দেওয়া। ৫. ভিটামিন এ যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া ভাল। ৬. নিয়মিত এককাপ করে গাজরের রস খাওয়া ভালো।

কিছু উপসর্গ দেখা দিলে ঃ ১. রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে বাম নাসাপুট দিয়ে শ্বাসগ্রহণ করে ডানা নাসাপুট দিয়ে ৫ মিনিট ছাড়া। ২. ঘুম না হলে বা কম হলে সোজা হয়ে বসে কোন একটি বিন্দুর দিকে বড় করে যতটা সম্ভব চেয়ে থাকা। ৩. টেনশন হলে সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পান করে অথবা যতটা সম্ভব লম্বা সময় দম বন্ধ করে রাখা। ৪. অম্বল হলে সকালে খালি পেটে পানি খেয়ে বমি করা। ৫. নাক বন্ধ বা শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে পানি নেতি খুব উপকারী। নাতিশীতোষ্ণ পানি বাম নাকের ফোটা দিয়ে বের করতে হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস মুখ দিয়ে নেওয়া ছাড়া করতে হবে। ৬. শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হলে প্রাণায়াম উপকারী। এতে গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া-ছাড়া করতে হবে। শ্বাস-প্রশ্বাস একটা নির্দিষ্ট নিয়মে করা জরুরি।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন