বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শর্তের বেড়াজালে প্রকল্প

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর রহস্যের জালে আটকে আছে ‘বরিশাল পর্যটন মোটেল ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং সেন্টার’ প্রকল্পটি। অথচ ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ এ প্রকল্পের জন্য বিআইডবিøউটিএ’র কাছ থেকে লিজকৃত ১ একর জমি হস্তান্তর হয়েছে আরো প্রায় ৪৭ মাস আগে। এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় একবছর আগে পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থাপনের পরেই এক অনাকাঙ্খিত ও অপ্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পরে প্রকল্পটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কির্তনখোলা নদীর তীরে বিআইডবিøউটিএর পরিত্যক্ত মেরিন ওয়ার্কসপের এক একর জমি ২০১৭ সালে ৩০ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করে পর্যটন করপোরেশন। পরে নিজস্ব তহবিল থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে লিজমানিও পরিশোধ করছে। পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নির্মাণের জন্য জমি ইজারা প্রদানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও দিক-নির্দেশনাতেই সম্পন্ন হয়। ডিপিপি অনুযায়ী বরিশালে মোটেল ও টুরিজম ট্রেনিং সেন্টারটির কাজ গত জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২২-এর জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় ‘অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির জন্য তহবিল সংস্থানে সম্মত আছে’ মর্মে সম্মতিপত্র প্রদানের শর্ত আরোপ করা হয়। দেশে প্রতিবছর যে বিপুল সংখ্যক প্রকল্প অনুমোদিত হচ্ছে সেখানে এ ধরনের শর্ত খুবই বিরল বলে জানা গেছে। গত ফেব্রæয়ারিতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ডিপিপিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে মতামতের জন্য ডিপিপিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণেরও প্রায় দু’মাস পরে দেশে করোনা সঙ্কট শুরু হয়। কিন্তু প্রথমদিকে প্রকল্প-প্রস্তাবটি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ না থাকলেও পরবর্তীকালে করোনা মহামারীর অজুহাতে আর বিষয়টি নিয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারারম্যান রাম চন্দ্র দাশ টেলিফোনে জানান, বরিশালের মোটেল ও ট্রেনিং সেন্টার প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি। করোনা সঙ্কটের কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে এ সংক্রান্ত ডিপিপি অনুমোদনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রের মতে, কোন প্রকল্পে তহবিল সংস্থানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক-অনুমোদনের খুব একটা নজির নেই। আর যেখানে সরকারি একটি সংস্থার জমি লিজ নিয়ে আরেকটি সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে, সে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন তড়ান্বিত করাই উচিত ছিল বলেও মনে করছে ওই সূত্র।
বরিশালই একমাত্র বিভাগীয় সদর যেখানে এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যটন প্রতিষ্ঠানের কোন আবাসন সুবিধা নেই। নতুন এসব অবকাঠামো নির্মিত হলে শুধু বরিশাল মহানগরী নয় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন সুবিধাই সম্প্রসারিত হবে। প্রস্তাবিত এ পর্যটন মোটেল কুয়াকাটাসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। বরিশালে একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজম ট্রেনিং সেন্টার স্থাপিত হলে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উপকৃত হবে দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুণ সমাজ।
প্রস্তাবিত ৮তলা মোটেল ভবনটিতে ৮০টি কক্ষ থাকবে। একাধিক লিফট সম্বলিত এ মোটেলে দুটি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৩৮টি দ্বৈত শয্যার কক্ষ ও ৪০টি তিন শয্যার কক্ষ থাকবে। এছাড়াও অত্যাধুনিক মানসম্মত রেস্টুরেন্ট, পুল ক্যাফে, সুইমিং পুল, জিম ও স্পা সুবিধা থাকবে এ মোটেলটিতে। ভবিষ্যতে এখানে রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা সম্বলিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এখান থেকে পর্যটকরা মোটেলটির পার্শ্ববর্তী কির্তনখোলা নদীতে নৌবিহারও করতে পারবেন। পাশাপাশি এ মোটেলকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলে প্যাকেজ ট্যুরেরও ব্যবস্থা করা হবে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
পর্যটন মোটেল সংযুক্ত ট্রেনিং সেন্টারটিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজমের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। সাড়ে ৩ মাসের এ প্রশিক্ষণ শেষে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফেকেট প্রদান করা হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন