শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দুপচাঁচিয়া প্রধান পোস্ট অফিস বৃষ্টিতে ভেজার ভয়ে কম্পিউটার ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ঢেকে রাখা হয় পলিথিন দিয়ে

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে

দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের প্রধান ডাকঘরটি দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না করায় বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে মান্ধাতা আমলের নিয়মেই কাজ-কাম চলছে। ফলে এলাকার গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বগুড়া জেলার বৃহত্তর উপজেলার মধ্যে দুপচাঁচিয়া একটি উল্লে­খযোগ্য। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে উপজেলাটি সুপ্রতিষ্ঠিত। একইসাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত উন্নত। দেশের বিভিন্ন কর্মকা-ের সাথে গতিশীল রেখে উপজেলা প্রশাসনের কাঠামোর ব্যাপক পরিবর্তনের সাথে দুপচাঁচিয়া পোস্ট অফিসটি কাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৮৫ সালে ডাক বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে উপজেলা সদরের পূর্ব পাড়াস্থ পুরাতন মাটির ডাক ভবনটি ভেঙে পাকা ইমারত তৈরি করা হয়। পোস্ট অফিসের প্রশাসনিক কাজে ফিরে আসে গতিশীল। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের এই ডাক বিভাগটি সার্বিক উন্নয়নের মাঝেও ব্রিটিশ আমলের নিয়ম ও পদ্ধতিতে কার্যক্রম চলার ফলে গ্রাহকদের দুুুর্ভোগ পোহাতে হয়। এক্ষেত্রে গ্রামীণ ডাকঘরের কার্যক্রম আরো করুণ। উপজেলার পোস্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, অত্র উপজেলা পোস্ট অফিসের আওতায় ১২টি শাখা পোস্ট অফিস রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি পাকা। এগুলো হলোÑ তালুচ ডাকঘর, চামরুল ডাকঘর ও মোস্তফাপুর ডাকঘর। বাকি ৯টি ডাকঘর থাকলেও এদের নিজস্ব ভবন নেই। পোস্ট মাস্টাররা কোনো না কোনো দোকান বা জায়গা ভাড়া নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর ফলে মূল্যবান চিঠিপত্র পার্সেল বা ডকুমেন্টগুলো সবসময় হুমকির মুখে পড়ছে। গ্রামের ডাকঘরগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুকান্ত রানার কবিতা, আবার রবীন্দ্রনাথের পোস্ট মাস্টারের করুণ কাহিনীর অনুভূতির কথা স্মরণ করে দেয়। সারাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আত্মীয়স্বজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, ব্যাংক-বীমাসমূহের বিভিন্ন খবরা-খবর ও তথ্য আদান-প্রদান করা হয়, এই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বর্তমানে আধুনিক যুগে চিঠিপত্রসহ বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ঐসব গ্রামীণ পোস্ট অফিসের কর্মরত পোস্ট মাস্টার ও পিয়নদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। গ্রামীণ এসব পোস্ট অফিসে কর্মরত কেউই সরকারি কর্মচারী নয়। তবে সরকার থেকে সামান্য অঙ্কের সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন। সেই কারণেই হয়তো ডাকঘরগুলো সময়ানুবর্তিতা যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়। ডাকঘরগুলো খোলা হচ্ছে ইচ্ছামত সময়ে। আর চিঠিপত্র বিলি বণ্টন হচ্ছে নানা হাত ঘুরে। উপজেলার অধিকাংশ পোস্ট অফিসগুলো একজনকেই পোস্ট মাস্টারের কাছ থেকে চিঠিপত্র সংগ্রহ ও বিলি বণ্টনের কাজ করতে দেখা যায়। অপরজন এজষ্ট্রা ডিপার্টমেন্টাল মেলিং কেরিয়ারের সহজ ভাষায় ইনি সুকান্ত বাবু রানার। অপরদিকে উপজেলার প্রধান ডাকঘর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের নির্মিত নতুন ভবনটির অবস্থাও করুণ। ভবনটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। ছাদের ও ছাদের বীমের প্লাস্টার উঠে গিয়ে রডগুলো কঙ্কালের মতো বের হয়ে পড়েছে। অফিস সংলগ্ন পোস্ট মাস্টারের বাসভবনটি ইতোপূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও পোস্ট মাস্টার ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে এ ভবনেই বাস করছেন। জরাজীর্ণ পোস্ট অফিসে এই ভবনেই নিয়মিত কাজকর্ম চলছে। ভবনটির ছাদের প্লাস্টার উঠে যাওয়ায় বৈদ্যুৎতিক ফ্যানগুলো খুলে রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গরমের তীব্রতার মাঝেও কর্তব্যরত পোস্ট মাস্টার ও কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে, আকাশের বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার ও অন্যান্য জিনিসপত্র আকাশে মেঘ দেখলেই পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে। ডাকঘরটির পশ্চিম পার্শ্বে সীমানা প্রাচীর বহু পূর্বে ভেঙে পড়েছে। এব্যাপারে পোস্ট মাস্টার আহম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ‘দৈনিক ইনকিলাব’-কে জানান, ভবনটি সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে ডাক বিভাগের বগুড়া বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। জরুরি সংস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে সরেজমিনে স্কিম তৈরিও করেছেন। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গেলেই ভবনটি সংস্কার করা হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধান এই ডাকঘরেরও লোকবলের অভাব রয়েছে। এখানে পোস্ট অপারেটর ২ জনের স্থলে কর্মরত রয়েছে ১ জন, পোস্টম্যান ২ জনের স্থলে কর্মরত রয়েছে ১ জন। ফলে উক্ত ডাকঘরের আওতায় উপজেলা সদরের বিভিন্ন অফিস, ব্যাংক-বীমাসহ ৪১টি গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামে চিঠিপত্র বিলি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পোস্ট অফিসটি গুরুত্বপূর্ণ লেনদেন এসবি সঞ্চয়পত্র ও এফডি যাতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার চরম অভাব রয়েছে। সেই সাথে লোকবলের অভাবে গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পোস্ট অফিস উপজেলা রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস। অথচ তা পড়ে রয়েছে অবহেলায়। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তির পাশাপাশি দিন দিন তাদের মাঝে ক্ষোভের দানা বাঁধছে। এব্যাপারে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা দ্রুত ডাক বিভাগের ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন