শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নারায়ণগঞ্জের তল্লা মসজিদ ট্রাজেডি : ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১০:৫৩ এএম

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের কাছে এই অভিযোগ পত্র দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
তবে অভিযুক্ত আরও ৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তী সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলো-মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া (৬০), সামসুদ্দিন সরদার (৬০), মোঃ শামসু সরদার (৫৭),শওকত আলী (৫০), অসিম উদ্দিন (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (৪০), শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (৪৫), মোঃ নাঈম সরদার (২৭), তানভীর আহমেদ (৪৫), আল আমিন (৩৫), আলমগীর সিকদার (৩৫),আলহাজ্ব মাওলনা আল আমিন (৪৫), সিরাজ হাওলাদার (৫৫), নেওয়াজ মিয়া (৫৫), নাজির হোসেন (৫৬), আবুল কাশেম (৪৫), আব্দুল মালেক (৫৫), মনিরুল (৫৫), স্বপন মিয়া (৩৮),আসলাম আলী (৪২),আলী তাজম (মিল্কী) (৫৫), কাইয়ুম (৩৮), মামুন মিয়া (৩৮), দেলোয়ার হোসেন, বশির আহমেদ (হৃদয়) (২৮), রিমেল (৩২), আরিফুর রহমান (৩০), মোবারক হোসেন (৪০) ও রায়হানুল ইসলাম (৩৬)।

চার্জশিটে যা উল্লেখ করা হয়

অভিযোগপত্রে উল্লেখ্য করা হয়, ৪ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। এই অগ্নিকান্ডে মসজিদে ইবাদাতরত ৩৭ জন মুসল্লি ‘ও ১ জন পথচারী অগ্নিদগ্ধ হয়। এরমধ্যে ৩৪ জন মুসল্লি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এবং ৪ জন এখনও নিজ নিজ বাড়ীতে চিকিৎসারত আছেন। অগ্নিকান্ডে মসজিদের এসি, থাই গ্রাসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ঘটনার ১৫ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় সিআইডি। তদন্তকালে সিআইডি ক্রাইমসিনসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ ও অগ্নিকান্ডের মূল কারণ উদঘাটন করে। সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার জন্য তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোঃ লিঃ এর ফতুল্লা জোনের দায়িত্বরত ৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদেরকে ২ দিন পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিপিডিসির ১ জন মিটার রিডার ও ২ জন ইলেকট্রিশিয়ানসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ইলেকট্রিশিয়ান মোবারক ও রায়হান অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। তদন্তে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার প্রমান পাওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আ: গাফুরকেও গ্রেপ্তার করা হয় ।

সিআইডির তদন্তে অগ্নিকান্ডের মূল কারণ উদঘাটন করা হয়। ঘটনার পুর্ব হতে প্রায় তিন মাস যাবৎ মসজিদের পাশে তিতাস গ্যাস পাইপের লিকেজ হতে গ্যাস বের হয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে। বাধাহীনভাবে গ্যাস উদগিরণ হয়ে মসজিদ গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ঘটনার ৭/৮ দিন পূর্ব হতে গ্যাসের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মুসল্লিরা বিষয়টি মসজিদ কমিটিকে জানায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
ঘটনার দিন এশার নামাজের সময় বৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে গেলে ম্যানুয়াল চেঞ্জওভারের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হলে বিদ্যুতের স্পার্ক হয়। তখন বিদ্যুতের স্পার্ক ও মসজিদে জমে থাকা গ্যাসের সমন্বয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। তাৎক্ষনিক স্থানীয় লোকজন অগ্নিদগ্ধ মুসল্লিদের অটোরিক্সা/রিক্সাযোগে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে বার্ণ ইউনিট না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় অগ্নিদ্বগ্ধ ৩৪ জন মুসল্লি মৃত্যুবরণ করেন এবং ০৪ জন মুসল্লি চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাড়ীতে আছেন।

মসজিদ কমিটির সঠিকভাবে মসজিদ পরিচালনায় অবহেলা, অ-ব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষনাবেক্ষন না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা না নেয়া ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ (ডিপিডিসি) এর মিটার রিডিং কালেক্টর ও ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণভাবে মসজিদের অভ্যন্তরে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ঘটনাইল এলাকার তিতাস গ্যাসের দায়িত্বে থেকে দায়িত্বে অবহেলা, গ্যাস লাইনের সঠিকভাবে তদারকি না করা, পাইপের লিকেজ মেৱমিত না করা, গ্যাস লাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে পিন/স্থানান্তর করার কারণে ভয়াবহ এই “অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়ে ৩৪ জন মুসলি অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ও ৪ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে সিআইডির তদন্তে সাক্ষ্য প্রমান পাওয়া গেছে।
তদন্ত গ্রহণের পর থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরলসভাবে তদন্তকার্য পরিচালনা করে সিআইডি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে ভয়াবহ এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া সহ মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে সিআইডি। অভিযুক্ত আরও ৮ জন সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী হওয়ায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে।

প্রসঙ্গত গত ৪ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের সময় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয় ৩৭ জন মুসল্লি ও একজন পথচারী।এরমধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর্যাক্রমে ৩৪ জন মসুল্লির মৃত্যু হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন