মাদকের ভয়াল ছোবলে দিশেহারা রাঙ্গুনিয়ার যুবসমাজ। হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দসই মাদক। পাড়া-মহল্লায় মাদকের সয়লাব হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে চলছে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়। চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম, ফেরিঘাট, মিশন কুষ্ঠ হাসপাতাল, মিশন হাসপাতাল পুরো এলাকায়, জমজমাট ইয়াবা, বাবা নামের মাদক বিকিকিনির জমজমাট স্পট। সরফভাটা ইউনিয়নের উপজাতিপল্লী বড়খোলাপাড়া চোলাইমদ (বাংলা মদ) বিকিকিনির নিরাপদ রোড। উপজেলার পোমরার মালিরহাট হয়ে শান্তিরহাট বুড়ির দোকান থেকে সিএনজি অটোরিক্সা দিয়ে সুকৌশলে চট্টগ্রাম শহরে পাঁচার হচ্ছে শতশত লিটার বাংলা মদ। এছাড়া বেতাগীর কর্ণফুলী নদীর তীরে টংঘর, সিকদারপাড়া, বড়–য়া পাড়া, বেপারিপাড়ার নদীর ওপার বোয়ালখালী থেকে বাংলা মদ আসছে প্রতিদিন হাজার লিটার। এই বাংলা মদের উৎপত্তিস্থান জঙ্গল সরফভাটার বড়খোলাপাড়া। পুলিশ এই পর্যন্ত চিহ্নিত কোন শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ২/১ জন কদাচিৎ ধরা পড়লেও দ্রæত জামিনে এসে আবারও দ্বিগুণ উৎসাহে মাদক কারবার শুরু করে। দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলেই রাঙ্গুনিয়া শীর্ষ মাদক কারবারিরা গা ঢাকা দেয়। এদের মধ্যে রোয়াজাহাটের কালুসহ একডজন শীর্ষ মাদক কারবারি গা ঢাকা দেয়। পুলিশ মাদক আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের মধ্যে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। এরা আত্মগোপনে চলে গেলেও একদিনের জন্যও মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অর্ধশতাধিক স্পটে বিভিন্ন কৌশলে মাদক বিকিকিনি হচ্ছে। সরফভাটা বড়খোলাপাড়া মদের আড়ৎ থেকে পুলিশ প্রশাসন, শাসক দলের নাম ভাঙিয়ে জনৈক এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাসিক মোটা অংকের অর্থ উত্তোলন করে থাকেন।
সূত্র জানায়, পুলিশ অভিযানে যাওয়ার আগে কথিত সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে কারবারিরা সর্তক হয়ে যায়। যার ফলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাক্ষিত সুফল পায় না। অপরাধীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কথিত সোর্স নামধারি পুলিশের নাম ভাঙিয়ে টাকা উত্তোলন করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে গোডাউন নামক সিএনজি স্টেশন ও পুরাটমিলের সামনে সৈয়ন নামের এক ব্যক্তি পুলিশের নাম ভাঙিয়ে প্রতিদিন রাতেদিনে চাঁদা সংগ্রহ করে আসছে। চাঁদা তোলা ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ডেমকেয়ারভাবে বলেন, পুলিশের চাঁদা সংগ্রহ করার কাজ ২৮ বছর চালিয়ে আসছি কই কেউতো কিছু করতে পারেনি। সাংবাদিক আর কি করবে? যদি পারেন লেখেন। নতুন সার্কেল অফিসার এসে চাপ প্রয়োগ করায় চাঁদা তোলা কমে আসছে। চন্দ্রঘোনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, অপসংস্কৃতি ও মাদকের চোবলে ধ্বংসের পথে আমাদের যুব সমাজ। মাদকের আমদানিকারকরা ধরা ছোয়ার বাইরে। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
মানবাধিকার বাস্থবায়ন সংস্থা রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার বলেন, সমাজের সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে রোধ করার জন্য তাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার ধারণা তৈরি করা। এখানে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার ব্যাপারে। তারপর সমাজিক বিভিন্ন সংগঠন, স্কুল-কলেজ এবং গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। গণমাধ্যমে যদি মাদকের ক্ষতিকর দিক প্রচার করে তাহলে বিষয়টির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হতে পারে। মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে যুব সমাজ, পরিবার ও দেশকে রক্ষা করতে আগে দরকার পরিবারের সচেতনতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন