শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা বায়ুদূষণে প্রতিদিনই শীর্ষে

বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন ২০ কারণ দূষণ রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি : পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিনই যেন বেড়েই চলেছে প্রায় আড়াই কোটি জনবসতির এ মহানগরে বায়ুদূষণের মাত্রা। বাতাসের মান যাচাইকারী আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে চলতি মাসের প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা দূষণের শীর্ষে উঠে আসছে। ২১ জানুয়ারি সকালেও শীর্ষে ছিল। দূষণের মাত্রা এত বেশি যে সেটাকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ২১ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গড়ে ঢাকা প্রথম অবস্থানে ছিল এবং দূষণের সূচক ৩২৬ পর্যন্ত উঠেছিল। এর আগের দিনও সকাল ৯টায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। একই অবস্থা ছিল মঙ্গলবার, সোমবারও। চলতি সপ্তাহে দিনের কোনও না কোনও সময়ে দূষণের এক নম্বরে ছিল ঢাকা।
বায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, সূচক ৩২৬ মানেই দুর্যোগপূর্ণ। এখনই দূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, দূষণ কেন হয়, কীভাবে হয়, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা সবাই জানে। তবে শুধু মুখে বললে তো হবে না। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও কাজ দেখতে পাই না।
গতকাল শুক্রবারও বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সকাল ১০টা ৩২ মিনিটে ২১৬ একিউআই স্কোর নিয়ে রাজধানীর বাতাস বিবেচিত হয় ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে। এ সময় ভিয়েতনামের হ্যানয় এবং আফগানিস্তানের কাবুল যথাক্রমে ২০৯ ও ২০৫ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে।
শীতের শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছরই ঢাকার বাতাস গুরুতর হয়ে উঠে। তবে এবার কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চলাচল সীমিত এবং সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মনে করা হয়েছিল বাতাসের মানে উন্নতি হবে। কিন্তু নির্মাণ কাজের আধিক্যের কারণে বাতাস অস্বাস্থ্যকরই থেকে গেছে।
একিউআই সূচকে ১৫১ থেকে ২০০ এর মাঝে স্কোর থাকার অর্থ হলো বাতাসের মান অস্বাস্থ্যকর। এ সময় প্রত্যেকের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর সংবেদনশীল মানুষদের ঝুঁকির মাত্রা থাকে গুরুতর।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে, ১। ইটভাটা, ২। রাস্তা নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ ও মেরামত, ৩। সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ৪। বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল), ৫। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, ৬। সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু, মাটি, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন, ৭। রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো, ৮। ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ৯। ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো, ১০। বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান, ১১। ফুটপাত ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙা অংশের মাটি ও ধুলা, ১২। ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া, ১৩। বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি, ১৪। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, ১৫। বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ১৬। ঢাকা শহরের দ‚ষণপ্রবণ এলাকার ধুলা, ১৭। হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা, ১৯। অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার ও ২০। জনসচেতনতার অভাব।
জানতে চাইলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলছে। এরপরের অনেক কারণ নিয়ে আমরা সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ’র সঙ্গে আলোচনা করেছি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাস্তার পাশে ময়লা রাখা, সকালে ঝাড়ু দেওয়া, নির্মাণাধীন ভবনের ময়লা, হাসপাতালের বর্জ্যসহ যাবতীয় আবর্জনা সরানো ও পরিষ্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে নিয়মিত মনিটরিং করছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এবং মেট্রোরেল প্রকল্পকে নিজস্ব উদ্যোগে পানি ছিটানোর অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব যানবাহন দ‚ষণের জন্য দায়ী সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ’কে বারবার বলছি। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
তবে দূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কী কী কারণে দূষণ বাড়ছে তা আমরা বিভিন্ন সময়ে জানাচ্ছি। কীভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তাও বলছি। মন্ত্রণালয়ের সবাই জানে এগুলো। এখন আসল কাজ হচ্ছে দূষণ নিয়ন্ত্রণে যেসব উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা। দীর্ঘমেয়াদে যে দূষণের ক্ষতি অনেক বেশি এটা সরকারকে বুঝতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন