ঢাকার বায়ুদূষণকে দুর্যোগপূর্ণ বলা হলেও এর প্রতিরোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘমেয়াদী দূষণের ফলে রাজধানীবাসী শ্বাস কষ্টসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকতে ভবিষ্যতে স্বাস্থঝুঁকি আরও বাড়বে বলে পরিবেশবিদরা মনে করেন। তারা বলেন বায়ুদূষণের ২০টি কারণ চিহ্নিত হলেও এর প্রতিরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয় নির্বিকার। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ‚ষণ রোধে দৃশ্যমান কোনও কাজই দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়কে অগ্রাধিকার না দিলে এ দ‚ষণ কমবে না। ক্রমাগত শীর্ষেই থাকবো আমরা।
চলতি মাসের শুরু থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। বাতাসের মান যাচাইকারী আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে এ মাসের প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্বের বায়ুদ‚ষণের শীর্ষে উঠে আসছে। ২১ জানুয়ারি সকালেও শীর্ষে ছিল। দ‚ষণের মাত্রা এত বেশি যে সেটাকে ‘দুর্যোগপ‚র্ণ’ বলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি ঢাকার বায়ু দূষণের সূচক ৩২৬ পর্যন্ত উঠেছিল। যা বিশ্বের মধ্যে দূষণের শহরের তালিকায় প্রথম অবস্থানে ছিল। এর আগের দিনও শীর্ষে ছিল ঢাকা। গত ২৪ জানুয়ারি দূষণের মাত্রা ছিল ২৬৭, ২৫ জানুয়ারি ২২৪ এবং ২৬ জানুয়ারি ছিল ২৫৬ পিএম। এই তিন দিনই ঢাকার বাতাস ছিল দুর্যোগপূর্ণ। গতকাল ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ১৯৩ পিএম। যা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য ২০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে, ইটভাটা, রাস্তা নির্মাণ-পুনঃনির্মাণ ও মেরামত, সেবা সংস্থাগুলোর নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বড় উন্নয়ন প্রকল্প (এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল), সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, সড়ক বা মহাসড়কের পাশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বালু উত্তোলন ও সংগ্রহ, ট্রাক বা লরিতে বালু-মাটি সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী উন্মুক্ত অবস্থায় পরিবহন, রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌর বর্জ্য স্তূপাকারে রাখা ও বর্জ্য পোড়ানো, ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা, ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে ধুলাবালি ছড়ানো, বিভিন্ন সড়কের পাশে থাকা অনাবৃত স্থান, ফুটপাত ও রাস্তার আইল্যান্ডের মাঝের ভাঙা অংশের মাটি ও ধুলা, ফিটনেসবিহীন পরিবহন থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর ধোঁয়া, বিভিন্ন যানবাহনের চাকায় লেগে থাকা কাদামাটি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কলোনির ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো, বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনের আবর্জনা ও ধুলাবালি রাস্তায় ফেলে দেওয়া, ঢাকা শহরের দ‚ষণপ্রবণ এলাকার ধুলা, হাসপাতালের বর্জ্য রাস্তায় ফেলা, অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার ও জনসচেতনতার অভাব।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলছে। এরপরের অনেক কারণ নিয়ে আমরা সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ’র সঙ্গে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এবং মেট্রোরেল প্রকল্পকে নিজস্ব উদ্যোগে পানি ছিটানোর অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব যানবাহন দূষণের জন্য দায়ী সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ’কে বারবার বলছি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে রাস্তার পাশে ময়লা রাখা, সকালে ঝাড়ু দেওয়া, নির্মাণাধীন ভবনের ময়লা, হাসপাতালের বর্জ্যসহ যাবতীয় আবর্জনা সরানো ও পরিষ্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে নিয়মিত মনিটরিং করছে।
তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ রোধে দৃশ্যমান কোনও কাজই দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. আব্দুল মতিন বলেন, দূষণ কেন হয়, কীভাবে হয়, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা সবাই জানে। তবে শুধু মুখে বললে তো হবে না। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও কাজ দেখতে পাই না। মাঝে মাঝে দুয়েকটা অভিযান পরিচালনা করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দরকার অনেক বেশি অভিযান। এ ছাড়া বায়ুদূষণ রোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন