শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রূপগঞ্জে ২৩৫ ওয়েল্ডিং কারখানা

পরিবেশ ও শব্দদূষণ বাড়ছে : হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অননুমোদিতভাবে ২৩৫ শতাধিক ওয়েল্ডিং কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানার শিখা, শব্দ ও বিষাক্ত ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কগুলোর দুই পাশে যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ওয়েল্ডিং কারখানায় প্রায় ৬০০ শিশু শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। পরিবেশ আইন ও কারখানা অধিদফতরের আইন না মেনে এসব যত্রতত্র কারখানা গড়ে ওঠায় ঝালাইকালে তীর্যক অতিবেগুনি রশ্মির বিচ্ছুরণ ও উচ্চ শব্দ ছড়িয়ে পড়ায় বিপদের মধ্যে পড়ছে কোমলমতি শিশু, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, পথচারী, গর্ভবর্তী নারী ও বয়স্করা। ফলে পরিবেশের ওপর পড়েছে বিরূপ প্রভাব, হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। সড়ক দখল করে কাজ করার কারণে প্রায়শ’ দুর্ঘটনাও ঘটছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, রূপগঞ্জে এসব কারখানার সংখ্যা ২৩৫। এর মধ্যে হাতে-গোনা কয়েকটির অনুমোদন রয়েছে। উপজেলার প্রধান স্টেশন রোড ও প্রধান সড়কে দীর্ঘদিন ধরে এসব কারখানা থাকলেও এখন বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ওই সব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কারখানার অনুমতি (লাইসেন্স) নেই। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ও আইনের তোয়াক্কা না করে এসব কারখানার মালিকরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কারখানার ভেতরে ও পেছন দিকের বর্ধিত অংশে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার কথা। কিন্তু কারখানাগুলো ছোট পরিসরে হওয়ায় সড়কের ওপরই ওয়েল্ডিংয়ের কাজ হয়। এতে পথচারী ও শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কারখানাগুলোর লোহা পেটানো ও স্টিলের ড্রামশিট তৈরির শব্দ এবং লোহা গলানোর অ্যাসিডের বিষাক্ত ধোঁয়াও পরিবেশের ক্ষতি করছে। নিয়ম রয়েছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানা চালু রাখার নিয়ম থাকলেও এসব কারখানা কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ওয়েল্ডিং থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি রশ্মি চোখের কর্নিয়া নষ্ট করে দিতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন লৌহজাত উপাদান গলানোর কাজে নাইট্রিক অ্যাসিডের বর্জ্য, বিষাক্ত ধোঁয়া শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া চোখের পানি পড়া, যন্ত্রণা, জ্বালাপোড়াসহ নানা সমস্যা হতে পারে। আতলাপুর এলাকার ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া জানান, ওয়েল্ডিং কারখানার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বাজার এলাকায় এসব কারখানা থাকায় শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কারখানায় ছয় শতাধিক শিশু কাজে যুক্ত। এসব কারখানায় খোলা স্থানে সড়কের পাশে জনসমক্ষে দিন-রাত ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলে। এছাড়া প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়কের দুই পাশ দখল করে বাস এবং ট্রাকের জোড়াতালি ও ওয়েল্ডিং, গাড়ির পার্টস কাটা ছেঁড়া ও জোড়া লাগানোর কাজ ও ঝালাই দেয়া, পুরোনো আনফিট গাড়ি জোড়াতালি দেয়া, ঝালাই দেয়া ও রং করা ইত্যাদি
সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা এসব দোকানের বাক্স, দরজা ও জানালার গ্রীল, লোহার রড ইত্যাদি ফুটপাত দখল করে রাখায় পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। আবাসিক এলাকার প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশে খোলামেলাভাবে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করায় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে পুরো এলাকাবাসী। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি পথচারী চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দেখা গেছে, ওয়েল্ডিং কারখানার সঙ্গে যুক্ত যুবক ও শিশু শ্রমিকরা চোখে কালো গগলস ব্যবহার করছে না। ওয়েল্ডিংয়ের কাজের সময় তীব্র তীর্যক আলো বিচ্ছুরণের ফলে অতিবেগুনি রশ্মি যাতে বাইরে যেতে না পারে এ জন্য ঘরের ভেতর আড়াল করে এবং কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখানকার শ্রমিকরা এসব নিয়ম মানছে না।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। যদি অনুমোদন ছাড়া এসব কারখানা চলে তবে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন