নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে রাজউকের অধীনে নির্মাণাধীন পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরের অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম করে আসছে কতিপয় ঠিকাদার। অধিক মুনাফার লোভে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, মাপে অনিয়মসহ নানাভাবে নামেমাত্র কাজ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাজউকের আওতায় ১৯৯৬ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও দাউদপুরের ইউনিয়নসহ গাজীপুরের কালীগঞ্জের বেশ কয়েকটি মৌজায় পূর্বাচল উপশহর জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। বালু ব্রিজের পর থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত ৬ হাজার ২২৭ দশমিক তিন ছয় একর জায়গাজুড়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প গড়ে তুলছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ প্রকল্পের ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক তিন ছয় একর ও গাজীপুরের কালিগঞ্জ অংশে পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫শ’ একর জমি। প্রকল্পে ২৫ হাজার ১৬টি আবাসিক প্লটের পাশাপাশি থাকছে বাণিজ্যিক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালের প্লট।
অভ্যন্তরীণ রাস্তা ঘাটের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রাজউকের ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি সেক্টরে বাড়ি নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৬০ ভাগ প্লট বুঝিয়ে দেয়ায় তাদের প্লটের জিপিএস কার্যক্রম পরবর্তি উন্নয়নের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। অন্যদিকে নতুন এ শহরের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ঘাটের কাজও চলছে। এতে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রভিত্তিক উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। কিন্তু ওই দরপত্র পেয়েই কতিপয় ঠিকাদার নিয়েছেন দুর্নীতির আশ্রয়। জোনভিত্তিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারের নিযুক্ত লোকজন এমন অনিয়ম করে যাচ্ছে। এতে দেখভালের অভাবে নামেমাত্র রাস্তা রাজউককে বুঝিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারি অর্থ।
গত রোববার দুপুরে এই সংবাদদাতা পূর্বাচলের ৫নং সেক্টরের ৪০৫ নং রোডের একটি কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখতে পান। রেজা কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে সেক্টরটিতে অভ্যন্তরীণ রাস্তা পাকাকরণ কাজ চলমান। দরপত্র বিধি অনুযায়ী আরসিসি ঢালাই কাজে মানসম্পন্ন বালি, পাথর, ইট ও সুরকী ব্যবহার করার কথা। এছাড়াও ৬ সুতা রড ও ৮ ইঞ্চি গ্যাপ রেখে স্কয়ার প্রজেক্টে সমাধান করার কথা থাকলেও এখানে কোন নিয়ম মানা হয়নি। ঠিকাদারের নিযুক্ত ম্যানেজার কাজী আতিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সুপারভাইজর সৌরভ তার শ্রমিকদের দিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় যোগ করেছেন ৩ সুতার দুর্বল গ্রেড সম্পন্ন এমনকি পুরাতন রড। ফাঁকা রাখা হয়েছে ১৮ ইঞ্চি থেকে ৩-২ ফুটের অধিক। আর ওই রোডটিতে ব্যবহারের জন্য পাশেই রাখা হয়েছে নিম্নমানের ইট, ভিটি বালুকে আস্তর বালু হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও যে সিমেন্ট ব্যবহারের কথা তাও রাখা হয়নি ওই ঠিকাদারের কাজে। এভাবে পাশের আরেকটি রোডে কাজের সময় একই ঠিকাদার ৩ ইঞ্চি পিচ ঢালাই কাজে হাফ ইঞ্চি পিচ ব্যবহার করেছেন। এসব বিষয়ে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেখভালের অভাব থাকায় এমন অনিয়ম করছেন বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। তবে সুপারভাইজার সৌরভ মিয়া বলেন, ‘ঠিকাদার আমাদের যা মাল মসলা দিবে তাই দিয়ে কাজ করতে আমরা বাধ্য। আমরা লেবার মানুষ হুকুমের গোলাম মাত্র’।
পূর্বাচলের ৫নং সেক্টরের অস্থায়ী বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, রেজা কনস্ট্রাকশন ইচ্ছে করেই তার সব কাজে অনিয়ম করেছে। তাকে নাকি কেউ কিছু বলার নেই। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মামলার ভয় দেখিয়েছে তার ম্যানেজার আতিকুর।
এসব বিষয়ে রেজা কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার কাজী আতিকুর রহমান বলেন, পুরাতন রড ব্যবহারের নিয়ম নেই। নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারেরও নিয়ম নেই। তবে ১২ ইঞ্চি গ্যাপ রাখার কথা। এতে আমাদের পোষে না। তাই একটু দূরত্ব রেখেছি। শ্রমিকরা দু’একটি পুরাতন রড ব্যবহার করে ফেলেছে। এটা দোষের কিছু না। তবে রেজা কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত¡াধিকারী রেজাউল করিম বলেন, আমার সাইডে কোন শ্রমিক বা কেউ অনিয়ম করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এসব বিষয়ে পূর্বাচলের প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের প্রথম পরিকল্পিত শহর ও এশিয়া মহাদেশের সুপরিসর স্যাটেলাইট উপশহর গড়ে ওঠেছে ঢাকাকে যানজট ও নগর চাপ থেকে মুক্তি দিতে। এ শহরে কারো কোন গাফিলতি রাজউক সহ্য করবে না। এসব কাজে কোন প্রকার অনিয়ম পেলে আমরা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে মাটি ভরাট কাজ ও রাস্তা নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। ৯৫ ভাগ কাজের আওতায় ইতোমধ্যে আদিবাসি ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের শৈল্পিক শৈলি প্রয়োগ করে রুপ দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ আধুনিকতার ছোঁয়ায়। তাতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩শ’ ফুট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কের সংযোগ সৃষ্টি করে অর্থবহ করে তোলা হয়েছে পূর্বাচলের পরিধি ও সৌন্দর্য। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নেয়া নতুন পদক্ষেপে যুক্ত হয়েছে ১শ’ ফুট প্রশস্ত লেক। কিন্ত এর অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন