হযরত শাহসুফি ইয়াসিন (রহ:)-এর পূণ্যভূমি চাঁদপুরের ইসলামপুর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনে ফসলি জমি, বসতভিটা ও কবরস্থান ডাকাতিয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন থেকে পৈত্রিকভিটা রক্ষায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেও গত এক বছরে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ অজ্ঞাত কারণ দেখিয়ে বরাদ্দ স্থগিত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নে ইসলামপুর ও চরণবলিয়া গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২/৩ বছরে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশ’ বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা। ভাঙনের মুখে পড়েছে ইসলামপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি, খান বাড়ি, ফরাজী বাড়ি, তপাদার বাড়ি এবং চরণবলিয়া গ্রামের পাটোয়ারি বাড়ি, মিজি বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ির বসতভিটা, কবরস্থান এবং ফসলি জমি।
শান্তশিষ্ট ডাকাতিয়া নদী এখন রুদ্র রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে বর্ষা এলেই ভাঙনের তীব্রতা দেখা দেয়। সড়কপথে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডাকাতিয়া নদীতে নৌযান চলাচল পূর্বের তুলনায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রæতগামী শত শত বালুভর্তি বলগেট, ইট-সিমেন্ট ও পণ্যবাহী কার্গোর ঢেউ আছড়ে পড়ে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার (৮০) বলেন, হযরত শাহসুফি ইয়াসিন (রহ:)এর পূণ্যভূমিতে তাদের শত বছরের বসবাস। ইতোমধ্যে তাদের ফসলি জমি এবং পূর্বপুরুষদের কবরস্থান ভেঙে গেছে। আগামী বর্ষায় ভাঙন বৃদ্ধি পেলে তাদের বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নেছার মুন্সি ও হেলাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন থেকে ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ইসলামপুর মাদরাসা, মসজিদ, পোস্টঅফিস ও বাজার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আবু তাহের মজুমদার (৭০) ও আবুল হোসেন ফরাজী (৬৩) বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকেই ডাকাতিয়া নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই ভাঙন বেড়ে চলছে।
মো. রফিকুল ইসলাম তাপাদার বলেন, আমার প্রতিবেশী খান বাড়ির পূর্বপুরুষদের কবরস্থান এখন ডাকাতিয়ার পেটে। কবর জিয়ারত করতে হয় নদীর দিকে তাকিয়ে। কয়েকজনের বসতঘরে বর্ষায় ঢেউ আছড়ে পড়ে।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, হঠাৎ করেই ইসলামপুরে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জোর দাবি জানান। তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত জামিল ইনকিলাবকে জানান, তিনি অল্প ক’দিন আগেই চাঁদপুরের যোগদান করেছেন। তাই ইসলামপুর গ্রামে ডাকাতি নদীর ভাঙন সম্পর্কে তিনি পুরোপুরি অবগত নন। তবে তিনি এ ব্যাপারে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো জানান, অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের বদান্যতায় ডাকাতিয়া নদীতে একটি সমীক্ষা চলছে। বিশেষ করে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চাঁদপুর জেলা শহরের মোলহেড পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে কোথাও কোথাও খনন এবং ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। সমীক্ষা শেষে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলে নিশ্চয়ই ইসলামপুর গ্রাম তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিস ইনকিলাবকে জানান, তিনি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙন সম্পর্কে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন