দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানসহ তিন প্রতিষ্ঠান প্রধান যখন মতামত পেশ করবেন তখন আইনজীবী কিংবা অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ যদি হাইকোর্টের শুনানিতে সংযুক্ত হতে না পারেন তাহলে তারা নিজ নিজ পক্ষে একজন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ তার আদেশে এ শর্ত দেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশিত হয় গতকাল সোমবার। আদেশ অনুযায়ী আগামী ৯ মার্চ তিন প্রতিষ্ঠান প্রধান মতামত দেয়ার কথা। ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান মতামত দেবেন। হাইকোর্ট তাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এবং বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনকে এ প্রথম তলব করেন হাইকোর্ট।
আদেশে বলা হয়েছে তিন প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য শুনানির সময় আইনজীবী বা অন্য কেউ আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। ওইদিন আদালত একাই সরাসরি তাদের মতামত জানবেন।
আদেশ সম্পর্কে পিপলস লিজিং কোম্পানির কৌঁসুলি ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের মতামত দেয়ার জন্যে আগামী ৯ মার্চ তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। যদি এই তিন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ হাইকোর্টের শুনানিতে সংযুক্ত না হতে পারেন তা হলে তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আলাদা তিন জন প্রতিনিধিকে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মেজবাহুর রহমান বলেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক ও বিএসইসির চেয়ারম্যানের মতামত জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। আগামী ৯ মার্চ তাদের বক্তব্য শোনার দিন নির্ধারিত রয়েছে। লিখিত আদেশে বলা হয়েছে, যদি তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত না হতে পারেন তাহলে তাদের পক্ষে তিন প্রতিনিধিকে আদালতে সশরীরে হাজির হতে হবে। আর ওইদিন তিন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আদালতের ভেতরে অন্য কোনো আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন না। এ সময় আদালতে কোনো ব্যক্তিও উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
প্রসঙ্গতঃ পিপলস লিজিংয়ের ঋণ খেলাপিদের শুনানিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চের বিচারক মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক ভার্চুয়াল বেঞ্চে দুদক ও বিএসইসির চেয়ােরম্যান এবং বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে বক্তব্য শুনতে সময় নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের দেয়া এ তালিকা আদালত গত ২১ জানুয়ারি ২৮০ জনকে তলব করেন। তাদের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক অর্থাৎ ১৪৩ জন আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপস্থিত হন ৫১ জন। দ্বিতীয় দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি বাকি ১৩৭ জনের হাজির হওয়ার কথা ছিল। উপস্থিত হন ৩৬ জন। ইতঃপূর্বের আদেশে হাইকোর্ট খেলাপিদের সশরীরে আদালতে হাজির হওয়াসহ ২৮০ জনকে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ দর্শাতে বলেন।
গত ২১ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল ওয়াহাব। কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বলেন, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড কোম্পানি অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। আদালত এ কোম্পানি থেকে ঋণগ্রহীতাদের তালিকা চেয়েছিলেন। আমরা সে তালিকা দিয়েছিলাম। সেই তালিকা থেকে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ঋণখেলাপি এমন ২৮০ জনকে শোকজ করেছিলেন। ঋণ গ্রহণ ও খেলাপির বিষয়ে এ ২৮০ জনকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
দুদক কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অর্থ পাচার করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে পি কে হালদার তার আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে যে চারটি ব্যাংকবহিভর্‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন তার একটি হলো পিপলস লিজিং। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মধ্যে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন