দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। দুদকের কর্মকর্তারা চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে সারাদেশে তাদের অফিসের সামনে মানববন্ধন করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দিন (উপসহকারী পরিচালক) দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
দুদকের বিধিমালার ৫৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে ৯০ দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা ৯০ দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।
তবে এ ধারায় শরীফ উদ্দিনকে যে ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আইনজীবিদের মতে তা বেআইনী। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, অসদাচরণ বা কোনো দোষের কারণে ৫৪(২) ধারায় কাউকে চাকরিচ্যুত করা যায় না। চাকরিবিধিতে এই ধারা থাকে তার কারণ হলো কেউ যখন কোনো কারণে কর্মীদের বেতন না দিতে পারে বা অন্যকোনো কারণে মন্দাঅবস্থা দেখা যায় বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো সমস্যা থাকে তখন তাকে ৯০ দিনের বেতন দিয়ে অপসারণ করা যাবে। তবে এটি কোনো অপরাধ, অসদাচরণ বা দোষের কারণে করা হয় না। এই ধারায় কেউ অপসারিত হওয়ার পর অন্যকোনো জায়গায় যদি চাকরি নিতে যান তাহলে তাকে কিন্তু বলতে হবে না যে, আমাকে অপরাধ বা অসদাচরণের কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ৫৪(২) ধারায় চাকরিচ্যুত করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই ডিসিপ্লিনারি প্রসিজার অনুযায়ী যেতে হবে। সেই অভিযোগের তদন্ত হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তারপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তিনি বলেন, দুদক বলছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এভাবে অপসারণ করা যায় না। শরীফ উদ্দিনকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অপসারণ করা হয়েছে। এই অপসারণ দুদকে আর যারা আছেন, যারা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন তাদের জন্য এক ধরনের হুমকি। তারা সবাই এখন আতংকে থাকবেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, শরীফ উদ্দিন এমন একজন ব্যক্তি যিনি বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনাগুলো উদঘাটন করছেন এবং যেসব প্রভাবশালী মহল বা সিন্ডিকেট এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করেছেন। তাকে এই ভাবে অপসারণ করা অত্যন্ত বিতর্কিত একটি ঘটনা।
তিনি বলেন, যাদের দুর্নীতি উদঘাটনের জন্য শরীফ উদ্দিন সততার সঙ্গে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে অগ্রসর হয়েছিলেন, কোনো অপশক্তির স্বার্থ দেখেননি, দুদকের উচিত ছিল তার পক্ষে দাঁড়ানো, তাকে সুরক্ষা দেওয়া, তাকে সমর্থন করা, নিরাপত্তা দেওয়া। তা না করে তাকে কেন অপসারণ করা হলো এই প্রশ্নটি ওঠা স্বাভাবিক। যারা শরীফ উদ্দিনের উদ্যোগের কারণে নাখোশ হয়েছেন, বিরাগভাজন হয়েছেন তাদের প্ররোচনা, তাদের নির্দেশনায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে কি না এই প্রশ্ন ওঠাটাও অনেকটা যৌক্তিক। দুদককে অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন