কিডনি বা বৃক্ক শিমের বিচির মতো কালচে বাদামি বর্ণের অঙ্গ, ওজনে প্রায় ১২৫ থেকে ১৭০ গ্রাম হয়। বৃক্ক দু’টি মানবদেহের উদরগহবরের কটি অঞ্চলে মেরুদন্ডের উভয় পাশে পেরিটোনিয়ামের নিচে, পৃষ্ঠ প্রাচীরসংলগ্ন অবস্থায় অবস্থিত। আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ঘন ঘন ইউরিন ইনফেকশন, অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়া, অতিরিক্ত ওজন ছাড়া আরো নানা কারণে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে যা কিডনি বিকলও করতে পারে। আগে থেকে সচেতন হলে এ সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই, শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলমূলসহ সব খাবারেই রয়েছে ভেজাল ও বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি। ভেজালের প্রক্রিয়ায় খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক, নিম্নমানের, ক্ষতিকর, অকেজো ও অপ্রয়োজনীয় বহির্জাত দ্রব্য সরাসরি মেশানো বা যোগ করা হয়। এগুলো কিডনির কার্যক্ষমতা সরাসরি কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি যকৃত, চোখ, হৃৎপিন্ড ইত্যাদির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই বাজারের শাকসবজি ও ফলাদি কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ও কেনার পর ভালো করে ধুয়ে রান্না করা উচিত। কিডনি রোগী শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লাখ লাখ লোক কিডনি অকেজো হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। কিডনি অকেজো রোগীর নানাবিধ জটিলতায় রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে ব্যর্থ।
কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে কিডনি অকেজো রোগী নবজীবন লাভ করতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। দানকৃত কিডনিস্বল্পতার জন্য প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ হাজার ৫০০ কিডনি রোগী কিডনি সংযোজনের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে এবং মাত্র ১৫ হাজার কিডনি সংযোজন হয়ে থাকে। কিডনি মানুষের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে অপরিহার্য। মানুষের দু’টি কিডনি যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক কাজ করে তবে একটি কিডনি দান করে একজন কিডনি রোগীর জীবন বাাঁচাতে পারে। সারা বিশ্বে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ লোক জীবিত অবস্থায় কিডনি দান করেন এবং ৬০ ভাগ কিডনি মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে নেয়া হয়। আমাদের দেশে অবশ্য মৃত ব্যক্তির কিডনি দান শুরু হয়নি, আমরা আশা করি জনগণের সচেতনতা ও সরকারের সহযোগিতায় এই প্রদ্ধতিতে কিডনি সংযোজন শুরু করা যাবে।
কিডনি রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত নিয়ম পালন করুন:
* নিজের স্বাস্থ্য অটুট রাখুন ও সুস্থ থাকুন।
* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
* সুষম খাদ্য খান ও শরীরের ওজন অতিরিক্ত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রাখুন ।
* ধূমপান প্রতিরোধ করুন।
* লবণ কম খান - খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র এক চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে।
* কোমল পানীয় ত্যাগ করুন - অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকম অ্যানার্জি ড্রিংকস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
* যথাযথ নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, পরিবারের যে কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত থাকলে কিডনি রোগের পরীক্ষা করুন।
এ ছাড়া মদপান থেকে বিরত থাকা, মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া, উত্তেজনা পরিহার করা, প্রতিদিন তাজা শাকসবজি ও ফল খাওয়া, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও দৈহিক পরিশ্রম করা উচিত।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাইল : ০১৭১৬ ২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন