আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সুরা বাকারার ২৩২ নম্বর আয়াতে ‘পূর্ণ দু-বছর পর্যন্ত বাচ্চাদেরকে মায়ের দুধ পান করানো’র নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে অনেক মুসলিম পরিবারে মায়ের শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে বাচ্চাদেরকে নেয়ামত থেকে মাহরুম করা হচ্ছে তাকে কেনা দুধ ও কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। যদি মা নিজ সন্তানকে ভালোবাসা ও মমতায় বুকে না জড়ান, তাহলে কাল এ সন্তানই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে, তার অন্তরে মায়ের প্রতি দূরত্ব ও ঘৃণা সৃষ্টি হবে। কারণ সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ও মমতা প্রদর্শনে এবং তার অধিকারে ত্রুটি করলে ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে ভালো আশা করা বৃথা। সন্তানের তরবিয়তের একটি বড়ো অংশই হলো, মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাবে। যদি তা-ই না হবে, তাহলে কেনো আল্লাহতায়ালা সন্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বুকে দুধ দান করলেন। অথচ সন্তান হবার পূর্বে তার বুকে কোনো দুধই ছিলো না। আবার যে মায়েদের এ নেয়ামত এবং বরকত নসিব হয়, তাদের মাঝে অনেকেই এমন আছেন, যারা টিভি চালু করে দেখছেন আর সন্তানকে দুধ পান করাচ্ছেন। এতে নিজে তো গোনাহ করছেনই, অন্যদিকে তার দুধের মাধ্যমে এই গোনাহের প্রভাব বাচ্চার মাঝেও প্রবেশ করছে। মা তো নিজের দায়িত্ব পূর্ণ করে ফেললেন, কিন্তু তার ব্রেনে যে খারাপ বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং অন্যান্য যে গোনাহ তার দ্বারা সংগঠিত হচ্ছে, তা বাচ্চার মাঝেও তার দুধের সঙ্গে স্থানান্তরিত হচ্ছে যে শিশুর মাঝে মা নিজেই মন্দের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, সে বাচ্চা বড়ো হয়ে কিভাবে ভালো হবে এবং তাদের বাধ্য সন্তান হবে!
৫. বাচ্চা যখন কথা বলা আরম্ভ করে, তখন প্রথমে তাকে আল্লাহ এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলা শেখানো, অথচ অধিকাংশ পিতামাতা দুনিয়াবি কথা আগে শেখান দাদা, মামা, নানা বললে তারা আনন্দে ফুলে যান অন্যের কাছে গর্ব করে তা বলে বেড়ান। এরপর বাচ্চার সামান্য বুঝ তৈরি হওয়া থেকেই তাকে শেখানো, কে তাকে সৃষ্টি করেছেন, কে তাকে রিজিক দান করেন, তার পালনকর্তা কে, তার ভালো-মন্দের ফয়সালাকারী কে, তার মৃত্যুদাতা কে? এভাবে তার মনে আল্লাহর বড়োত্ব ও তার একত্ববাদ সৃষ্টি করা। যেনো তার মনের সবকিছুর একমাত্র দাতা ও ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে আল্লাহর বিশ্বাস প্রগাঢ়রূপে সৃষ্টি হয়।
আরেকটু বয়স হলে তাকে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করা। ৭ বছরে পৌঁছুলে পূর্ণভাবে নামাজ শেখানো এবং ১০ বছর থেকে নামাজ ছাড়ার অপরাধে প্রয়োজনমতো প্রহার করা। ঘরের কিছু ভেঙে ফেললে তো অধিকাংশ পিতামাতা সন্তানকে রাগ করেন। কখনও প্রহার করেন। কিন্তু তারা নামাজ ছাড়ার কারণে তার ওপর হাত তোলেন না। এক মা একজন বুজুর্গ ব্যক্তির কাছে এসে বললেন-‘আমার সন্তানের ঘুম বেশি। ফজরের সময় অধিকাংশ দিন উঠতে পারে না। আমি তার জন্য কি করতে পারি?’ তিনি বললেন-‘যদি তোমার ঘরে আগুন লাগে আর সে ঘুমিয়ে থাকে, তখন তুমি কি করবে?’ মা বললেন-‘আমি তাকে জাগাবো।’ বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন-‘তার ঘুম যদি ঘন হয়, তখন কি করবে?’ মা বললেন-‘আল্লাহর কসম! আমি তার ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে আসবো এবং আগুন থেকে বাঁচাবো।’ তিনি বললেন-‘নামাজের জন্য জাগাতেও তুমি তার সঙ্গে এমনটা করবে।’
এ বয়স থেকে বাচ্চাদেরকে রোজার অভ্যাস করানো, নিষ্পাপ হাতে দান করা শেখানো, নিষ্পাপ বয়স আল্লাহর কাছে চাওয়া ও দোয়া করার অভ্যাস গড়া। ঘুমের আদব, ঘুম থেকে জাগ্রত হবার আদব, বাথরুমে যাওয়া ও বেরুবার আদব, সাক্ষাতের আদব, ইত্যাদি শেখানো উচিত। তখন একটি বাচ্চা শিশুকাল থেকে শিখবে এবং তার সুন্দর তরবিয়ত হবে।
৬. শিশুর শিক্ষার বয়স হলে তার জন্য এমন পাঠশালা নির্বাচন করা। যেখানে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা অক্ষুণ্ণ থাকে, যেখানে সন্তানের স্বভাব-চরিত্র সুন্দর হবে। যেখানকার পরিবেশ ধর্মীয় শিক্ষার অনুকূল হবে এমন পাঠশালায় ভর্তি না করা, যেখানে পড়ে, আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) সম্পর্কে অজানা থাকবে, যেখানে পড়ে আল্লাহর প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলবে শুধু ধ্বংসশীল দুনিয়াই চিনবে। পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো পাঠশালা থেকে ফিরলে তার প্রতি কড়া নজর রাখা- সে কী শিখছে সেখানে! আমল-আখলাক সুন্দর হচ্ছে না খারাপ হচ্ছে! সে কি সঠিক আকিদা শিখছে, না ভুল আকিদায় তার জীবন গড়ছে! এমনটা না করা হলে বড়ো হয়ে বখাটে হবে, ইসলামের নামে কলঙ্ক হবে এবং পিতামাতাকে দূরে সরিয়ে দেবে।
একজন পিতামাতা তার সন্তানকে পাঠশালায় ভর্তি করেন একজন আদর্শ ও শিক্ষিত সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। পাঠশালায় এ দায়িত্বটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষক পালন করেন। তিনি এ সন্তানকে আদর্শ ও শিক্ষিতরূপে গড়ে তোলার জন্য দিনরাত মেহনত করতে থাকেন। তার ভালোর জন্য এ সংশোধনী পথে কখনও যদি শিক্ষক তাকে প্রয়োজন মনে করে প্রহার করেন, তখন অধিকাংশ অবিভাবক এ শিক্ষকের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন