উৎসবভিত্তিক নাটক নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের থাকে আলাদা প্রস্তুতি ও আকাক্সক্ষা। সা¤প্রতিক সময়ে সেটা চোখে পড়ে ২০১৭ সালের বড় ছেলে নাটকের পর। এই নাটক দিয়েই শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেন অপূর্ব ও মেহজাবীন জুটি। সেই থেকে গত পাঁচ বছরে আরও বেশ কয়েকজন তরুণ অভিনয়শিল্পী নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে সিনিয়র ও জুনিয়র শিল্পীদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নাট্যাঙ্গণে একে ‘শীতল লড়াই’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ লড়াই যেমন সিনিয়রদের অবস্থান ধরে রাখা, তেমনি তরুণদের জন্য অবস্থান শক্ত করার। ফলে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে জোট বেঁধে অভিনয় করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে ‘ভিউ’ বেশি এমন অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে জোট বেঁধে কাজ করছেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা। এছাড়া অনেক প্রযোজক আগেই তারকাদের শিডিউল কবজা করে নিয়েছেন। আর তারকারাও নিজেদের পছন্দের নির্মাতাদের শিডিউল দিচ্ছেন। কারণ, ঈদে টেলিভিশন, ইউটিউব, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচুর নাটক প্রচার হবে। এ ধারার শিল্পীরা মনে করছেন এসব নাটকের যেগুলো যত বেশি ভিউ এবং ভাইরাল হবে, তত তাদের চাহিদা এবং অবস্থান ধরে রাখা যাবে। তরুণ শিল্পীরাও এ থেকে পিছিয়ে নেই। ফলে এক ধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের নাটকের পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় অভিনেতা অপূর্বর সঙ্গে। ইতিমধ্যে তিনি শুটিং শুরু করেছেন তিনি। শিডিউল দেয়াও শেষ। অপূর্ব বলেন, এবার কেউই তাড়াহুড়া করে কাজ করতে চাচ্ছেন না। সবাই সময় নিয়ে গুছিয়ে কাজ করছেন। এ কারণে এবার আমার নাটকের সংখ্যা কমে যাবে। কোয়ালিটির দিকে বেশি মনোযোগ থাকবে। এই পরিকল্পনা অন্য আর্টিস্টদের মধ্যেও দেখছি। এতে ভাল নাটক নির্মিত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ অভিনেতা বলেন, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা সবাই করেন। এর মধ্য দিয়েই তারা দর্শকের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটা বুঝে নেন। সেভাবেই নিজের কোয়ালিটি ধরে রাখেন। আজ আমার ক্যারিয়ার পড়ে গেলে কেউই কাজে ডাকবে না। সে কারণেই দর্শক যে গল্পগুলো পছন্দ করেন, সেগুলোই করছি। সিনিয়ররাও এগুলোই করছেন। তারাও ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা করছে। পরিচালক সাগর জাহান জানান, অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার বিষয়টি ইতিবাচক। একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এ প্রতিযোগিতা ভাল। তবে এ প্রতিযোগিতা যাতে ভাল নাটক নিয়ে হয়, তা দেখা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট বলয় গড়ে নির্দিষ্ট নির্মাতাদের কাজ করা সমর্থন করি না। এতে একঘেয়েমি চলে আসে। ভাল গল্পের নাটক যে নির্মাতাই নির্মাণ করুক, তার নাটক শিল্পীদের করা উচিৎ। নির্দিষ্ট বলয় থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ। ভিউ সংখ্যা ও বলয় গড়ে ভাল নাটক নির্মাণ সম্ভব নয়। একসময় গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মাতারা নাটকের জন্য শিল্পী নির্বাচন করতেন। গল্প ও চরিত্র অনুযায়ী, যথাযথ অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করে শুটিং শুরু করতেন। এখন কতিপয় ব্যবসায়ী শুধু তারকাদের পছন্দে প্রেম ও কমেডি গল্পের দিকে ঝুঁকছেন, ভাল গল্প নির্মাণের সংস্কৃতি নষ্ট করে দিচ্ছেন। প্রযোজক সাজু মনতাসির বলেন, নাটকের ভিউ নিয়ে তারকারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতেই পারে। সবাই চাইবে তার নাটকটি মানুষ দেখুক। কিন্তু ভিউ দিয়ে কে, কাকে ছাড়িয়ে যাবে, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম মনে করেন, একজন অভিনয়শিল্পীকে দায়বদ্ধতার জায়গায় পরিষ্কার থাকতে হয়। অভিনেতা সব সময়ের। সময়কে ধারণ করেই তাকে কাজ করতে হবে। এখানে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কিছু নেই। ভিউয়ের হিসাব আর বেশি দিন টিকবে না। শিল্পীকে বাঁচিয়ে রাখে তার কাজ। এক নির্মাতা জানান, কোন নির্মাতার নাটকের ভিউ ৫ মিলিয়ন হলেই ধরে নেওয়া হয় সে সবার সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ ধরনে বিবেচনা গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে সময় দেখা যায়, ভাল নাটকের চেয়ে নি¤œমানের নাটকের ভিউ বেশি হয়। ফলে ভিউ দিয়ে ভাল নাটকের মান বিচার করা ঠিক নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন