কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গত দুই দিনের ঝড়ো আবহাওয়ায় হঠাৎ শুরু হওয়া গরম হাওয়ায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকায় এখন দিশেহারা কৃষক। আর মাত্র দু-তিনসপ্তাহ পর সোনালী ধান ঘরে তোলার প্রহর গুণছিলেন কৃষক। এর মধ্যেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকই গরম হাওয়ায় ধানের শীষ ধূসর বর্ণ হয়ে মরে যাওয়ায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশংকার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে করগাঁও, মুমুরদিয়া, চান্দপুর, বনগ্রাম ও সহশ্রাম ধূলদিয়া হাওর এলাকার একমাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভরশীল এলাকার সিংহভাগ কৃষক।
এ ফসলের উপর তাদের সংসারের ব্যয়ভার মিটিয়ে অতিরিক্ত ধান বিক্রি করে সংসারের অন্যান্য খরচ নির্বাহ করে থাকেন তারা। কিন্তু আচমকা গরম হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে তাদের সোনালী স্বপ্ন। বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে ধানের শীষ ধূসর বর্ণ হয়ে মরে যাওয়ার বিষয়টি রোদ উঠার সাথে সাথে আরও ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। ফসলহানীর আশংকায় ঘুম নেই কৃষকের চোখে। কি হবে আগামী দিনগুলো?
করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় জমি আবাদে অধিক খরচ হয়েছে এ বছর। শেষ পর্যায়ে এসে ফসলহানীর আশংকায় পড়েছেন তারা। এর প্রতিকার কি? ভেবে পাচ্ছেন না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবে আগামী দিনগুলো?
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে কটিয়াদী উপজেলায় ১২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৪শ’ মে.টন।
আচমকা বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে বোরো ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চান্দপুর ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামের বর্গাচাষী মুছলিম ও কুড়েরপাড় গ্রামের প্রান্তিক চাষী আবুল খায়ের জানান, সাড়ে পাঁচ বিঘা ও তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। গত পরশুদিনের গরম বাতাসে জমির প্রায় সমস্ত ধান ধূসর বর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। নূন্যতম ফসল ঘরে তোলার কোন সম্ভাবনা নেই।
মুমুরদিয়া ইউনিয়নের চাতল গ্রামের প্রান্তিক চাষী সিন্ধু মিয়া বলেন, চার বিঘা জমির প্রায় ৮০ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
বনগ্রাম ইউনিয়নের ওমর ফারুক বলেন, তার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যাশার অর্ধেক ফসলও ঘরে উঠবে না। তাছাড়া পেঁপে, সাজনা, কুমড়াসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
করগাঁও ভাট্টা গ্রামের তৌহিদ ভূইয়া জানান, গরম বাতাসে তার জমির অর্ধেকের বেশি ধানের শীষ সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে। বাকি অর্ধেক ধান কাটাতে যে খরচ হবে তা বিক্রি করেও সে খরচ মিটানো যাবে না।
চান্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝেও হতাশা দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তবে জমির মাঝখানে যেখানে বাতাস একটু কম লেগেছে সেখানে কিছু কিছু ধান ভালো রয়েছে।
করগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফত লস্কর পারভেজ জানান, তার ইউনিয়নটি হাওর অধ্যুষিত। বছরের একমাত্র বোরো ফসলই কৃষকের একমাত্র ভরসা। বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে এলাকার বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষক যে পরিমাণ ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন তার অর্ধেক ফসলও তুলতে পারবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুকশেদুল হক জানান, গত দুই দিনের বয়ে যাওয়া গরম বাতাসে ধানের শীষ বিবর্ণ ও মাটিতে নুয়ে পড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক জরিপে ধারণা করা হচ্ছে। আক্রান্ত জমির ২৫ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
তবে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে কাজ করছেন এবং এর প্রকৃত চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন