সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। খাল বিল ও নদীর পানি শুকিয়ে,ফসলের জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে । পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে ফসলের মাঠ। পানির কারণে কৃষকের আমন ধান রোপণের সময় বিলম্ব হওয়ায় অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ পাম্প দিয়ে আমন ধান রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বছরের অন্যান্য সময় ঠিক এই মুহূর্তে মাঠ-ঘাট বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর থাকে। কৃষক আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাধারণত আষাঢ় মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে এই অঞ্চলের কৃষকরা আমন রোপান করতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কিন্তু এবছর এই এলাকায় তেমন বৃষ্টিপাত নেই। প্রচন্ড তাপদাহ তীব্র খরা আর অনাবৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন যেমন অতিষ্ঠ তেমনি হুমকির মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র সহ ফসলের চাষাবাদ। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখছেন কৃষক। এতে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৩৪,ব্রি-৪৯, সম্পা কাটারী, ব্রি-৯৩, ৯৪, সোনামুখি, রঞ্জিত এবং হাইব্রিড জাতের টিয়া, ধানিগোল্ড, এজেড ৭০০৬ জাতের রোপা আমন ধান চাষাবাদ হয়ে থাকে। এবছর এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় মোট ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৬১ হাজার ৯১৬ মেট্রিকটন রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বীজতলা রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০৯হেক্টর জমিতে, যার লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে পুরণ হয়েছে। প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক। কিন্তু এবার মাস ব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে ফসলের মাঠে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে অনেক কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না।
উপজেলার পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের কৃষক দুলাল রায় বলেন, ফুলবাড়ীতে এবছর আষাঢ় মাস জুড়েই চলছে স্বরণ কালের খরা। ১৫ আষাঢ় থেকে আমন ধান রোপন করা শুরু হয়। তার ৩ বিঘা জমিতে আমন লাগানোর কথা বীজতলাও প্রস্তুত কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না তিনি। একইকথা বলেন কৃষক কমল রায় । একই এলাকার কৃষক অশিস রঞ্জন দাস বলেন, তিনি ১৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। আষাঢ় মাস শেষ এখনও বৃষ্টি নেই। তাই তিনি শ্যালো মেশিন প্রস্তুত করছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে আমন ধানের জমি প্রস্তুত এবং রোপন শুরু করবেন তিনি । তিনি আরও বলেন, তার নিজের ১৩ বিঘা জমি ছাড়াও অন্যের জমিতে প্রতি ঘন্টায় ১০০ টাকায় পানি সরবরাহ করবেন।
উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে ধান রোপণের চিন্তা করছেন। সেচ দিয়ে ধান লাগানোর ফলে আমন উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে এমনটিই বলছেন কৃষকরা।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। জেলায় চলতি মাসে ১৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বিগত বছরে ১৫৫ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। যা অন্য বছরের তুলনায় এবছর অনেক কম। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহানুর রহমান বলেন, সাধারণত আষাঢ় মাসের ২০ থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাসের শেষ পর্যন্ত রোপা আমন চাষাবাদ করা হয়। অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকদের সামান্য অসুবিধা হলেও তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন মোটা ধানের জন্য একটু অসুবিধা হলেও চিকন জাতের ধান একটু দেরিতে রোপন করলেও তেমন ক্ষতি হবেনা। এখনও সময় আছে যদি দুই এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হয়, তবে প্রয়োজনে গভীর নলকূপ গুলো চালু করার জন্য বলা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন