আষাঢ়ের বৃষ্টিহীনতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষির উপরে। পানির অভাবে যেমন আমনসহ বিভিন্ন ফসলের বীজতলা তৈরীতে ব্যাঘাত ঘটেছে। তেমনি আবাদ হওয়া পাট নিয়েও বেশ বিপাকে রয়েছে কৃষক। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানাগেছে, এবার গতবারের চেয়ে বৃষ্টি কমেছে তিনশত পনের মি:মিটার। গত বছর এর পরিমান ছিল পচিশ দিনে তিনশত চুয়ান্ন মি:মিটার। চলতি বছর বৃষ্টি হয়েছে মাত্র উনচল্লিশ মি:মিটার। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় খাল বিল ডোবা ভরেনি। ফলে পাট কাটার মওসুমে তা জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে। পাট কাটার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষক তা কাটতে পারছে না। যারা কেটেছেন তারাও পড়েছেন জাগ দেয়া নিয়ে বিপাকে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত এ পাট বপনের উপযুক্ত সময়। আঁশের ফলন এবং মানের মধ্যে সমতা পেতে হলে ১শ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই পাট কাটার প্রকৃত সময়।
এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। জেলায় এবার ১৮ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছর ১৮ হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। এবার পবা উপজেলায় ২ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট চাষে লক্ষমাত্রা অতিক্রম না হলেও এখন পাট কাটা মৌসুমে পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষক।
পবা উপজেলার পাটচাষিরা জানান, গত বছর তাঁরা সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন। এক বিঘা জমিতে সাধারণত ১০ থেকে ১২ মণ পাট হয়ে থাকে। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার পবা উপজেলার চাষিরা বেশি করে পাট চাষ করেছেন। কিন্তু খরার কারণে পাট যেমন পুড়ে নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পাট জাগ দেওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য এবার পাটচাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
পবা উপজেলার বাঘাহাটা গ্রামের পাটচাষি সাজু জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি কিন্তু অতিরিক্ত খরায় পানির অভাবে অধিকাংশ পাট গাছ শুকিয়ে গেছে। তবে, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে সমস্যা থাকায় মাঠ থেকে দূরে বারনই নদীতে পাট নিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যাবে। এছাড়াও নদীর পচা পানিতে জাগ দিলে, পাটের রং ও গুণগত মান ভালো হবে না। আর পাট শুকিয়ে যাওয়ার কারণে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাটের ছাল ছড়াতে সমস্যা হবে এবং ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এই পদ্ধতিতে পাট প্রস্তুত করতে চান না বলে জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, সারাদেশের ন্যায় প্রায় বিশ বছর থেকে রিবন রেটিং পদ্ধতির সাথে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা পরিচিত। এটি পাটের ছাল পচানোর একটি বিকল্প পদ্ধতি। স্বাভাবিক পদ্ধতির তুলনায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকরা কোনোভাবেই এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায় না। এই পদ্ধতিতে পাট গাছ কাঁচা থাকা অবস্থায় ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ছাল ছড়াতে হয়। পাট গাছের বয়স একটু বেশি হলে ছাল তুলতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়াও বহুবিধ সমস্যার কারণে রিবন রেটিং পদ্ধতি এখন পর্যন্ত রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায় নাই। ফলে কৃষকরা অভ্যাসগতভাবে স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই পাট জাগ দিয়ে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, পাট জাগ দেয়ার জন্য এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় আছে। রাজশাহী অঞ্চলে অনেক খাস পুকুর আছে, যেগুলো পাট জাগ দেয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এর মধ্যে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাবে এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পাট পচনে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
এদিকে নাটোরের বড়াইগ্রামে অনাবৃষ্টি আর খরায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হাজারো পাটচাষী। সোনালী আঁশ ঘিরে দেখা সোনালী স্বপ্ন এখন পানি সংকটে মলিন হতে বসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার লাভের আশায় উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক। কিন্তু অনাবৃষ্টির ফলে পাটের গাছ শীর্ণকার ধারণ করেছে। অনাবৃষ্টির কারণে পাটের গড়নটা দুর্বল হয়েছে। ফলে পাটের ফলন কমে যাবে আংশকাজনক হারে। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হলে এবং পানি সংকট না কাটলে পানচিং পদ্ধতিতে পাট পঁচিয়ে আঁশ ছাড়ানো যাবে। পাট নিয়ে এমন দুশ্চিন্তার কথা এ অঞ্চলের সর্বত্রই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন