শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

রমজান: আমার প্রস্তুতি

মুন্সি আব্দুল কাদির | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৪ এএম

প্রিয়জনের সাক্ষাত, প্রিয় বস্তুর প্রাপ্তি, আকাংখিত ফল লাভের জন্য মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কখন আসবে সেই মধু চন্দ্রিমা! অপেক্ষার পালা শেষ হতে চায় না। রাত অনেক লম্বা, দিন অনেক অনেক দীর্ঘ বলে মনে হয়। সময় পার হওয়ার সাথে সাথে মনের আকাংখার তীব্রতা বাড়তেই থাকে। হৃদয়ের ধরফরানী, মনের উচ্ছ্বাস, উৎকন্ঠা আকাংখিত বস্তুর চাহিদা অনুযায়ী তীব্রতর হতে থাকে। অতি আনন্দে তার হৃদয়ের সাথে শরীরেও কম্পন অনুভুত হয়। চাহিত ব্যক্তি যত প্রিয় তার সাক্ষাতের আকাংখা ততই তীব্র হয়। সেই অনুযায়ী তাকে গ্রহন করার প্রস্তুতিও চলতে থাকে। বিয়ের বর যাত্রীকে যেভাবে গ্রহন করি, সাধারণ মেহমানকে কিন্তু এভাবে গ্রহণ করি না। প্রধান মন্ত্রি, অন্য কোন মন্ত্রি, এমপিকে যেভাবে সম্ভাষণ জানাই, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে কিন্তু এভাবে সম্ভাষণ জানাই না। অর্থাৎ ব্যক্তির পদ-পদবী, সম্মান, তার প্রতি দায়িত্ববোধ, ভালবাসা সব কিছু মিলিয়েই তাকে সম্ভাষণ, সম্মান, আদর- কদর নির্ভর করে।

রমজান খুব নিকটেই কড়া নাড়ছে। তাকে গ্রহণ করার জন্য আকাশ, বাতাস, পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, হাজারো তারার মেলা সব খানেই প্রস্তুতি চলছে। উর্ধ্ব জগতে তাকে নিয়ে কতো আয়োজন। এ তো সাধারণ কোন মাস নয়, এর প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত সাধারণ কোন রাত আর দিন নয়। এর প্রতিটি মূহুর্ত হিরা-জহরত-মনি-মুক্তা তার চেয়েও হাজার হাজার গুন দামী।

একটু কি ভাবতে পারি, একটি বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা প্রধান মন্ত্রির আগমনে আমাদের কত প্রস্তুতি, কত মেহনত, কত খরচ হয়। এই অল্প সময়ের অনুষ্ঠানের জন্য কত দিন ব্যস্ততায় কাটে। কত চিন্তা, কত পেরেশানী, কত জনের মেহনত এর সাথে জড়িত হয়। কোন একটি জায়গা যেন অপরিচ্ছন্ন না থাকে। সব জায়গা, সব কাজ যেন খুব সাজানো গোছানো থাকে। কষ্টদায়ক কোন বস্তু, কোন কাজ যেন না হয়। সকলে সচেতন থাকে। আর রমজানকে ঘিরে তামাম মাখলুক কত প্রস্তুতি নেয়। রজব সাবান থেকেই প্রস্তুতি চলতে থাকে কখন রমজান আসবে! রমজান কে সম্ভাষণ জানাতে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। নতুন সাজে সাজানো হয়। জাহান্নামের সকল কষ্টকে ঢেকে দেওয়া হয়। এমনকি সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোন কষ্টদায়ক চিত্র যেন কারো চোখে না পড়ে। শয়তান নামক চির দুশমন যেন কোন অন্যায় কাজে নিয়ে যেতে না পারে, উক্ত সবচেয়ে আনন্দঘন, জাকঝমক পূর্ণ অনুষ্ঠানে কোন ব্যাঘাত বা বিশৃংখলার সৃষ্টি করতে না পারে, এমনকি কোন দুষ্টকেও উস্কানি দিতে না পারে তাই তাকে বন্দি করে ফেলা হয়। তার পর শুরু হয় উপবাসের মাধ্যমে নফস নামক নিজ শত্রুকে কাবু করে ফেলার পালা।

এই অনুষ্ঠান এক দিনের বা এক মূহুর্তের নয়। পুরো মাস ব্যাপি এই অনুষ্ঠান। এক দিনের চেয়ে অপর দিনের আয়োজন, সৌন্দর্য বাড়তেই থাকে এ ভাবে চলতে চলতে বান্দা নাজাতের গ্যারান্টি পেয়ে যায়। তার জন্য রমজানে যেভাবে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়েছিল, তা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তাকে স্বাগত জানাতে জান্নাতকে যেমন মনোরম সাজে সাজানো হয়েছিল। চিরদিনের জন্য সে এই চির সুখের জান্নাতের মালিক হয়ে যায়। সবচেয়ে প্রিয় সে মহান রবের বন্ধু হয়ে যায়। রমজান শেষ করে বান্দা ঈদের দুই রাকাত নামাজের মাধ্যমে নাজাত প্রাপ্তির আনন্দ উৎযাপন করে মহান রবের শুকরিয়া আদায় করে।

এত সফলতা, এত প্রাপ্তি, এত পুরস্কার, এত আয়োজনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমার প্রস্তুতি, উচ্ছ্বাস, আকাংখা, আমার চাহিদা, আমার মেহনত কতটুকু এটাই চিন্তার বিষয়। মহান রব আমাকে মায়া করে বানিয়েছেন। তাঁর দয়ার ও কোন শেষ নেই। সে তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসুক এমন আকাংখা কি আমার মনে জাগরুক! তাকে পাওয়ার জন্য, তার প্রতিটি মূহুর্ত কাজে লাগানোর জন্য, তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য আমি কি আমার অন্য ব্যস্ততাকে কমানোর বা অন্য ব্যস্ততা ছেড়ে দেওয়ার কোন চিন্তা-ফিকির আমার মধ্যে আছে। আমাকে নিয়ে হ্যাঁ ভাই শুধু আমাকে তোমাকে নিয়েই মহান রবের এতো আয়োজন। আমি তাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য কি প্রস্তুত? উত্তর হ্যাঁ হলে আলহামদু লিল্লাহ এবং প্রস্তুতির কোন ঘাটতি আছে কি না? তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা। আর উত্তর না হলে বড়ই আফসোসের বিষয়। আমিই হব সবচেয়ে বড় কপাল পোড়া।

মহান রব এই রমজানে আমার ক্ষমার এতো ঘোষনা দিয়েছেন, আমি যেন হেরে না যাই। ক্ষমার বিজয় যেন আমার পায়ে চুম্বন করে। জান্নাতের সবুজ গালিজা যেন আমার পদতলে বিছিয়ে দেওয়া হয়। বান্দা তুমি যদি ইমান ও ইহতেসাবের সাথে রোজা রাখ তোমাকে মাফ করে দেওয়া হবে। এখানে যদি তোমার কোন ত্রুটি হয়ে যায় তুমি রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর তোমাকে মাফ করে দেওয়া হবে। আর এখানেও যদি তোমার কোন ত্রুটির কারণে ক্ষমা লাভে ব্যর্থ হও হতাশ হয়োনা রমজানের শেষাংশে তুমি লাইলাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদত করো তোমাকে মাফ করে দেওয়া হবে। মহান রব বার বার আমাকে ক্ষমার ঘোষনা দিচ্ছেন। আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলে আমাকে কি আর জাহান্নামের পথে চালাবেন? না তা হতেই পারে না।

আসুন আজ ক্ষমা, রহমতের দিকে এগিয়ে যাই। রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নেই। নিজের নফসকে প্রস্তুত করি। নিজের শত্রুকে চিনে নেই। নিজের আমলগুলো পরিশুদ্ধ করি। নিজের ইলম ও আমলের মধ্যে মিল করে নেই। নিজের রমজানের ফর্দ বাজার সওদার ফর্দটিকে একটু চিন্তা করে সাজিয়ে নেই। তবেই রমজান আমার জন্য বয়ে আনবে অগণিত রহমত ক্ষমা আর নাজাত।
লেখক : জেনারেল ব্যাংকিং ইনচার্জ আইবিবিএল, লালদিঘিরপাড় শাখা, সিলেট

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন