বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

তাপদাহের চেয়ে বড় ভয় ব্রাশ ফায়ারের মত রোগের দামের কারনে মোটা জাতের চেয়ে চিকন জাতের আবাদ বেশী

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ৪:১২ পিএম

প্রচন্ড তাপদাহ বা হিট ষ্ট্রোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে চরাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলে এর প্রভাব বেশী হলেও অধিকতর উর্বর এলাকা হিসাবে চিহ্নিত দিনাজপুরে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশী চোখে পড়ছে না। তবে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে তাপদাহের চেয়েও বেশী আতংকিত করে রেখেছে ব্রাশ ফায়ারের (এক ধরনের প্রকার আক্রমন) রোগের। কৃষি বিভাগও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। গত আমন মওসুমে একেবারে শেষ মুহুর্তে এই ব্রাশ ফায়ারের কারণে কাঠারী (চিকন) ধানের ৭০ শতাংশ ধান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যার আতংক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছে না কৃষকেরা। চলতি ইরি-বোরো মওসুমে মোটা জাতের হাইব্রিড ধানের চেয়ে চিকন উফসি জাতের ধানের আবাদ বেশী হয়েছে। তবে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে কৃষি বিভাগ এর কাছে পরিপূর্ণ এবং স্বচ্ছ কোন হিসাব নেই কোন জাতের ধান কত হেক্টরে আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ ও মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে আলোচনার ফলাফলে ব্যাপক তারতম্য ফুটে উঠেছে। আর এ কারনে কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রার সাথে প্রকৃত উৎপাদনের কোন মিল থাকে না শেষ পর্যায়ে। কৃষি বিভাগ গতানুগতিকভাবে প্রতি বছর এক রেখে অথবা সামান্ন বাড়িয়ে আবাদ এর লক্ষমাত্রা নির্ধারন করে। আর মাঠ পর্যায়ে কৃষক ধানের মুল্য প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে আবাদ করে থাকে। হাইব্রিড ও চিকন জাতের ধান আবাদের উপর নির্ভর করে গড় মোট উৎপাদন।

পার্বতীপুর উপজেলার আমবাড়ী এলাকার কৃষক মোফাজ্জল হোসেন নিজের নয় বিঘা জমির মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেছে মাত্র চার বিঘা জমিতে। বাকি জমিতে উফসি চিকন জাতের ধান আবাদ করেছে। উফসি জাতের ধান ফলনে কম পেলেও দাম বেশী পাওয়া যায়। কিন্তু হাইব্রিড বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেলেও ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। তার মতে মোটা ধান আবাদ করলে ফলন ভাল পাওয়া গেলেও ধানের দাম পাওয়া যায় না সময়মত। যদিও এবার মোটা ধানের দামও ভাল পাওয়া গেছে। কিন্তু ঝুকি কমাতে এবারও মিনিকেট, স্বম্পা কাঠারী, চিনিগুড়া আবাদ করেছে বেশী করে। ফলনও ভাল হয়েছে। সেচ নির্ভর হওয়ায় এবার দিনাজপুর অঞ্চলে বোরো ধান গাছ তুলনামুলকভাবে ভাল হয়েছে এবং শীষও ভাল এসেছে। তবে নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে কিছুটা আবাদ খারাপ হয়েছে এবং হিট ষ্ট্রোকের প্রভাবে গাছের পাতা ঝলছে গেছে। গত আমন মৌসুমে কাঠারী (চিকন) ধানের শীষ দেখে বুে ভরে উঠেছিল এই কৃষকের। কিন্ত শেষ মুহুর্তে দেখা দেয়া অজ্ঞাত রোগ সব কেড়ে নেয়। এমনই রোগ যে যেখানে ধরে নিমিষেই সেখান থেকে একরের পর একর জমি নিঃশ্বেষ হয়ে যায়। বিরল উপজেলায় অনেক এলাকায় ব্রাশ ফায়ার এর শিকার শত শত বিঘা জমির ধানই কাটেনি কৃষক। আক্রমনের ধারা দেখে গ্রাম পর্যায়ে এই রোগটিকে ব্রাশ ফায়ার বলে অভিহিত করছে।
বিরামপুরের শিক্ষিত-সুচিন্তিত এবং সফলচাষী হিসাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মোঃ আবু তাহের তার মোট ৩০ বিঘা জমিতেই এবার চিকন জাতের নাজিরশাইল ধান আবাদ করেছে। ইরি-বোরো মওসুমে মোটা জাত বাদ দিয়ে চিকন জাতের ধান আবাদের কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকন জাতের ধানের ফলন কম হলেও এই আগে-ভাগেই কাটা-মারা যায় এবং ভাল দামও পাওয়া যায়। তার মতে অনাবৃষ্টি ইরি-বোরো’র যতটা ক্ষতি করতে পারে না তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করে ধানের দানা বা শীষ আসার পর নেক ব্লাষ্ট সহ বিভিন্ন পোকার আক্রমন। একই উপজেলার ঘিয়ার তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম ও আজিজার রহমান সর্দ্দার জানান, এবার তারা প্রায় ২০ একর জমিতে নাজির শাইল চিকন ধান আবাদ করেছে। প্রতি একর জমিতে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বোরো কোন ধরনের দূর্যোগ না প্রতি একর জমি থেকে ৭০ থেকে ৮০ মন ধান পাওয়ার আশা করছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ তোহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, এবার জেলায় এক লক্ষ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা রয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা রয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন।
মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, দিনাজপুরের পূর্বাংশে অর্থাৎ ঘোড়াঘাট, বিরামপুর, হাকিমপুর উপজেলায় আর কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা মারা শুরু হবে। পশ্চিমাংশের সদর বিরল, বোচাগঞ্জসহ ঠাকুরগাও জেলায় আরো একটু দেরীতে ধান কাটা মারা শুরু হবে। শেষ মুহুর্তে রোগ বালাই না দেখা দিলে কৃষক এবার হাসবে। তবে যেভাবে তাপদাহ চলছে তাতে যে কোন মুহুর্তে রোগ বালাই তথা ব্রাশ ফায়ারের মত রোগ দেখা দেয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন