পদ্মা দক্ষিণ-পশ্চিমের নদ-নদীর হৃদপিন্ড। এই অঞ্চলে পদ্মার অর্ধশত শাখা প্রশাখা এখন প্রায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। যশোর ও খুলনাসহ ১০ জেলার ২২ হাজার ৭৩৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় চলছে প্রচন্ড খরা ও মরুকরণ প্রবনতা। পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বহুমুখী আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেছে, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জীবন-জীবিকার উপর প্রচন্ড আঘাত পড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হাইড্রোলজি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু নদ-নদী নয়, এ অঞ্চলের, ১ হাজার ৭৮১টি খাল-বিল ও ৯৫ হাজার ৮৭৯টি পুকুর-দীঘির সিংহভাগই প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। চারদিকে পানির জন্য রীতিমতো হাহাকার পড়ছে। যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, মৌসুসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় গত ২৫ এপ্রিল।
সরেজমিন দেখা গেছে, পায়ে হেটে অনেক নদী পার হওয়া যায়। নদপাড়ের মানুষের কানে ভেসে আসে নদ-নদীর কান্না। এসব কথা দক্ষিণ-পশ্চিমের নদপাড়ের বাসিন্দাদের। ভারতের পানি আগ্রাসনে এ অঞ্চলের নদ-নদীর হৃদপিন্ড পদ্মা এখন স্পন্দনহীন। পদ্মার শাখা-প্রশাখার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়ার পদ্মাপাড়ের ভেড়ামারার তসলিম উদ্দীন ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানি আসে না পদ্মায়। মরণফাঁদ ফারাক্কা আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি করছে’। নড়াইলের চিত্রা পাড়ের নিত্য গোপাল বললেন, ‘নদ-নদীর অবস্থা খুবই কাহিল। আরে ভাই নদীর কথা বলবো কী, দেখতেই তো পারছেন নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে’।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মো. সাইবুর রহমান মোল্যা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, নদ-নদী নাব্যতা হারানোর কারণে সামগ্রিক পরিবেশের উপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জীবন-জীবিকায় চরম সঙ্কটাবস্থা বিরাজ করছে। অনেক নদীর তলদেশ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। নদীকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মাথাভাঙ্গা, গড়াই, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, নবগঙ্গা ও অভিন্ন ইছামতি ও কোদলাসহ সব নদী কার্যত খালে পরিণত হয়েছে। নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ফারাক্কার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। এবারের গ্রীষ্মে সবখানে পানির জন্য হাহাকার রব উঠেছে। নদ-নদীর চেহারা বলে দিচ্ছে কতটা ভয়াবহ।
নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ ও অনিল বিশ্বাস জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদী এখন মৃত্যুযন্ত্রনায় কাঁদছে। নদ-নদীর অস্তিত্ব সঙ্কট পরিবেশের উপর নেমে এসেছে মারাত্মক বিপর্যয়। এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নির্ভরশীল পদ্মার শাখা প্রশাখা এবং অভিন্ন নদ-নদীর উপর। অথচ নদ-নদী বাঁচাতে কখনোই জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন সেতু পয়েন্টের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে ধু ধু বালুচর। নদী নয়, খালের মতো শীর্ণ পদ্মা দিয়ে কোনরকম পানি প্রবাহ হচ্ছে। শৈলকুপার কুমার নদী, নড়াইলের চিত্রা ও মধুমতি, কালীগঞ্জের চিত্রা, যশোরের কপোতাক্ষ, ভৈরব ও মুক্তেশ্বরীসহ গোটা অঞ্চলের ছোট-বড় নদ-নদীর পানিও দ্রæত কমে যাচ্ছে।
এদিকে, ভুপৃষ্টের পানি সঙ্কটের পাশাপাশি ভুগর্ভস্থ পানি সংকটও মারাত্মক হয় গ্রীষ্মে। এবারও তার ব্যতয় ঘটেনি। ক্রমাগত মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে উর্বর জনপদ। সবুজ ঘেরা প্রান্তর হচ্ছে বিবর্ণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন