শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রংপুরে বোরোর বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে স্বস্তির হাসি

আমন সংগ্রহে ব্যর্থ বোরোতে আশাবাদী খাদ্য বিভাগ

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান ঘরে তোলা শুরু করেছেন কৃষক। বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠেছে। তবে ধানের ন্যায্য মুল্য নিয়ে অনেকেই শঙ্কায় আছেন।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের ১৬ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ২৭ লাখ ১৬ হাজার ৩৫৪ হেক্টর। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে আছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯শ’ ৬৪ হেক্টর জমি। এসব আবাদী জমির মধ্যে চলতি বছর বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে। চাষ করা হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় বিভাগের সর্বত্রই ধান ভালো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে হেক্টর প্রতি ৬ মণের বেশি ফলন পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধানের প্রায় ২০টি জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ফলন বেশি হওয়ায় উফসি জাতের ধান বেশি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর অঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার কিছু কিছু এলাকায় বছরে আমন ধান ছাড়া আর কোনো ফসল হতো না। তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের পর পাউবো ক্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী থেকে পানি সরবরাহের মাধ্যমে এসব এলাকায় বোরো ধান চাষের পরিকল্পনা নেয়া হয়। তবে ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় সে পরিকল্পনা কাজে আসে না। পানির অভাবেই এসব এলাকায় বোরো ধান চাষ করতে পারছিলেন না কৃষকরা। কিন্তু এ বছর শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি থাকায় তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে পানি পায় ঐসব এলাকার কৃষকরা। ফলে সেচ কমান্ডিং এরিয়ার মধ্যে নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, রংপুরের তারাগঞ্জ ও গঙ্গাচড়ার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়।
এদিকে, বিভাগের প্রায় সর্বত্র বোরোর বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষক। মৌসুমি শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়াসহ করোনা মহামারীর কারণে মারাত্মক শ্রমিক সঙ্কটে পড়েছেন তারা। চাষিরা জানিয়েছেন, কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা। কিন্তু হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ মাত্র ৩ হাজার টাকা। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে খুবই অল্প সময়ে শত শত বিঘা জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি শ্রমিকের চেয়ে অনেক কম দামে ধান কাটা সম্ভব এই মেশিনের সাহায্যে। কিন্ত এই মেশিন সবখানে বা সবার কাছে নেই। তারপরও ফুরফুরে মেজাজে আছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
অন্যদিকে গত আমন মৌসুমে রংপুরে ন্যায্যমূল্যে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহের অভিযান পুরোদমে ব্যর্থ হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহের মেয়াদ পর্যন্ত অর্জন হয়েছিল মাত্র ২ মেট্রিক টন। ১৭ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত থাকলেও মিলাররা মাত্র ১ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন চাল হস্তান্তর করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ধানের ক্রয়মূল্য ছিল কেজি প্রতি ২৬ টাকা আর চালের মূল্য ছিল ৩৬ টাকা। এবার সরকারিভাবে ধানের ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ টাকা এবং চাল ৪০ টাকা।
আমনের ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে গত ৪ মে থেকে চলতি বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছে খাদ্য বিভাগ। রংপুর জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় খাদ্য বিভাগের নিবন্ধিত অটোরাইস মিলসহ হাসকিং মিলার রয়েছেন ৮৮০ জন। এরমধ্যে চাল দেয়ার জন্য ৮১ জন চুক্তিবদ্ধ হলেও গত আমন মওসুমে চাল দিয়েছেন মাত্র ৩০ জন মিলার। তাদের অজুহাত সরকারি ক্রয় মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় চুক্তি করেও মিলাররা লোকসানের ভয়ে চাল দেয়নি। সে কারণেই সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এবারে সরকার নির্ধারিত মূল্য বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন