বরেন্দ্র অঞ্চলের চারিদিকে সবুজের সমারোহ। মাঠ ভরা পাকা সোনালী আমনের বিস্তীর্ণ ক্ষেত। ধানের গোছা দেখে কৃষকের চোখ ভরা স্বপ্ন এবার আমনের ফলন ভালই হবে। আর কটাদিন পর থেকে শুরু হয়ে যাবে আমন কাটাই মাড়াই হুলস্থুল কর্মকান্ড। ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে।
একদিকে আমনের অন্যদিকে শীতকালীন শাকসবজির ক্ষেত। যেদিকে চোখ যাবে শুধু ফসল আর ফসল। চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষক। আগাম লাগানো কিছু আমন কাটা হচ্ছে। আর আগাম শাকসবজি তোলার পাশাপাশি নতুন করে শীত মওসুমের সবজি ফুলকপি বাধাকপি, টমেটো, গাজর, মূলা, বেগুন, সীম, ব্রোকলিসহ নানান স্বব্জির আবাদ নিয়ে ভীষন ব্যস্ততা।
এবার বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায় রাজশাহী, নওগা, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রোপা, আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিনলাখ পচানব্বই হেক্টর জমিতে। বাস্তবে আবাদ হয়েছে চারলাখ হেক্টরের বেশী জমিতে। যা থেকে উৎপাদন হবে দশলাখ তেষট্টি হাজার মে:টন চাল। সবচেয়ে বেশী আবাদ হয়েছে ধান উৎপন্ন এলাকা হিসাবে পরিচিত নওগা জেলায় একলাখ সাতানব্বই হেক্টরে। এরপর রাজশাহীর আশী হাজার হেক্টর, চাপাইনবাবগঞ্জে তিপান্ন হাজার হেক্টর আর নাটোরে বাহান্ন হাজার ছয়শো হেক্টর জমিতে।
এবার বান বর্ষন বেশী হলেও বরেন্দ্র অঞ্চল উচু হওয়ায় তেমন একটা বিরুপ প্রভাব পড়েনি আমন উৎপাদনে। বরং ভাল বৃষ্টি হওয়ায় তা সেচের ক্ষেতে উপকার বয়ে এনেছে। যা কৃষকের কাছে আল্লাহর রহমতের বর্ষন। আবহাওয়া অনুকুল ছিল আমন আর স্বব্জি আবাদে। এবার গমের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পচানব্বই হাজার হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে তিনলাখ মে:টন গম। আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় বাষট্টি হাজার হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে আলু পাওয়ার আশা তেরলাখ টনের বেশী আলু। শীতকালীন শাকস্বব্জির আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক চল্লিশ হাজার হেক্টর জমিতে। যেখানে আবাদের আশা প্রায় সাড়ে আটলাখ টন বিভিন্ন ধরনের শাকস্বব্জি।
কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ হবে এমন কথা জানান মাঠ পয্যায়ের কৃষকরা। কারন হিসাবে বলছেন এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে আছে। আর গাও গ্রামে শীতের আমেজ আগেভাগেই অনুভুত হচ্ছে। কুয়াশা নামছে। যা শীতকালীন সবজির জন্য বেশ সহায়ক। তাছাড়া কৃষক এখন আর কোন জমি খালি রাখতে নারাজ।
যদি তাদের চিরাচরিত সমস্যা সার, বীজ, আর কীটনাশক নিয়ে। ভাল বীজের নামে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। এবার বিভিন্ন ধরনের সারের কৃত্রিম সংকট করা হচ্ছে আবাদের শুরুতে। যদি কৃষি বিভাগের মতো এটা সাময়িক সংকট। নজরদারী বাড়ানো হচ্ছে।
রাজশাহীর তানোর, নবাবগঞ্জে নাচোল আর নওগার পোরশা এলাকা ঘোরার সময় কৃষকের পাশপাশি কৃষান বধুর ব্যস্ততা নজর এড়ায়না। শুরু হয়ে গেছে আমনের জন্য বাড়ির আঙ্গিনার খৈলান ঝাড়া মোছার কাজ। আর ক’দিন পরই শুরু হবে আমন কাটার মহাউৎসব। তখন দম ফেলার ফুরসত থাকবেনা কারো। কাকডাকা ভোরে উঠে শুরু হবে দলবেধে মাঠে মাঠে ধানকাটা, খৈলানে মাড়াই, ঝাড়াই আর বস্তাবন্দী। ফড়িয়াদের আনাগোনা।
এ অঞ্চলের কৃষকের সব স্বপ্ন আমন আবাদকে ঘিরে। ধান বেচেই অনেক স্বপ্ন সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় করে মেটাবে। শুরু হবে পিঠা পুলির উৎসব। মেয়ে জামাইকে নায়রে নিয়ে আসাসহ আরও কত কি। এমনিতে গেল দু’বছর ধরে করেনোর কারনে অনেক কিছু করা যায়নি। এবার অবস্থা ভাল। মেতে উঠবে নতুন ধানের সোদাগন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উৎসবের মেজাজে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন