শহর থেকে গ্রামে নারীদের শিক্ষার পরিবেশ ক্রমেই বাড়ছে। যদিও নারীদের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক কম। তবে মা শিক্ষক হলে সন্তান শিক্ষিত হবে। তাই মায়েদের শিক্ষার আলো দান করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একদল নারী নেমেছেন দ্বীনি শিক্ষাদানের যুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নারী-শিশু ও স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের মাঝে কুরআনের পাখি তৈরীর জন্য কাজ করছেন তারা। আর এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন স্থানীয় মুসলিমরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মধুখালী গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রয়েছে ব্যক্তিগত অর্থায়নে পরিচালিত একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। এতে স্থানীয় কর্মজীবি নারী, গৃহবধূ ও শিশুদের পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইসলামী রীতিনীতি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের জন্য আশপাশের ৬ গ্রামের নারী-শিশুদের মাঝে নূরানী, হেফজ, নাজেরা, প্লে বিভাগ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসা কারিকুলামে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে।
ধর্মীয় কাজে সহায়তা করেছেন মধুখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম মোল্লার ছেলে কামরুল হাসান মোল্লা। তিনি তার মরহুম মায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠা করেছেন নূরজাহান বেগম হিফজুল কুরআন মহিলা মাদরাসা। এ মাদরাসার পরিচালনা ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স, হাদিসে কামিল মাস্টার্সধারী নূরানী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুহতামিমা ফারহানা তাবাস্সুম। শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন হাফেজা জান্নাতুল মাওয়া, আলেমা সুমাইয়া আক্তার, আলেমা খাদিজা বেগমসহ অভিজ্ঞ উচ্চ শিক্ষিত নারীরা।
সাড়ে চার বছরের শিশু শিক্ষার্থী হা মীম সহিভাবে ২০টি হাদিস বাংলা অর্থসহ মুখস্ত বলতে পারে। শিশুটি জানাল সে নূরানী বিভাগে ৪০টি হাদিস মুখস্ত করবে। পাশাপাশি নাজেরা হিসেবে পবিত্র কুরআন পড়ার সক্ষমতাসহ নামাজ শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। একইভাবে ৭ বছরের শিক্ষার্থী সাদিয়ার পবিত্র কুরআন তেলোয়াতে প্রতিষ্ঠানের সবাই মুগ্ধ। শুধু সাদিয়াই নয়, প্রতিটি শিক্ষার্থীর কন্ঠে কুরআন তেলোয়াত শুনে মুগ্ধ হয় যে কেউ।
শিক্ষকরা জানান, নারীদের জন্য দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক কর্মে উদ্বূদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে মধুখালী, ভক্তবাড়ি, হারিন্দা, সুরিয়াবো, গুতিয়াবো, পিতলগঞ্জের বাসিন্দাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রতিষ্ঠানটি দ্বীনি ভীত মজবুত করতে সন্তানদের ইসলামি নিয়মে লালন পালন করতে গৃহবধূ ও মায়েদের জন্য আলাদাভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছে। এতে সকল বয়সী মহিলাদের জন্য নূরানী পদ্ধতিতে সহীহ কুরআন শিক্ষা, নামাযের নিয়ম কানুন, মাশয়ালা, সুরা কেরাত, মাশক, কুরআন হাদিসের আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে দ্বীনি শিক্ষার সুবিধা গ্রহণ করছেন তারা।
মধুখালী এলাকার গৃহবধূ মিথিলা আক্তার বলেন, আগে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে জানতাম না। তাই সন্তানদের পড়াতে পারতাম না। মাদরাসায় ভর্তির পর এখন নিজে শিখেছি। সন্তানদেরও পড়াতে পারছি। তাই প্রতিটি মায়ের আগে সহিশুদ্ধ করে কুরআন শিক্ষা করা জরুরি। মা ভুল পড়ালে সন্তান ভুল শিখবে। এতে শিশুদের ভবিষ্যত শিক্ষায় নেতবাচক প্রভাব পড়বে।
এসব বিষয়ে মাদরাসার মুহতামিমা ফারহানা তাবাস্সুম বলেন, মুসলিম হিসেবে প্রত্যেক নারী পুরুষকে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করতে হবে। যে কোন পেশায় যুক্ত নারীদের দ্বীনি শিক্ষা জরুরি। অনেক পরিবার মেয়ে সন্তান হলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। অথচ নারীরা শিক্ষিত হয়ে সকল কাজে সমানভাবে পর্দা রক্ষা করে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু নারীদের পড়াশুনাসহ প্রায় কাজে উপযুক্ত পরিবেশের অভাব রয়েছে। তাদের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। তাই মধুখালী এলাকায় সেই সুযোগ সৃষ্টিতে এ মাদরাসাটি পাঠদানের কাজ করছে। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের শিক্ষা অর্জন পদ্ধতি, দক্ষতা দেখে অন্যরাও উৎসাহী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত শতাধিক নারী ও শিশু এ মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কামরুল হাসান মোল্লার বলেন, আমার মা চাইতেন গ্রামের নারীরা যেন দ্বীনি শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু মায়ের জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠান করতে পারিনি। এখন সে স্বপ্ন পূরনে গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত বোনেরা এ প্রতিষ্ঠান গড়তে সহযোগীতা করেছেন। আর জীবনে যা করেছি সবচেয়ে সেরা কাজটি হচ্ছে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে নারীদের দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন