রমজান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানের জন্য শ্রেষ্ট উপহার। রমজানে রয়েছে রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন নাজাত। এ মাসে মহান রবরে পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে সিয়াম তথা রোযা। রোযা ধর্মীয় ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রোযায় নিহিত রয়েছে আত্মিক নৈতিক মানবিক গুনাবলি অর্জনের বিশাল সুযোগ।
মহান আল্লাহ পাক বলেন: অনুবাদ : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা মুত্তাকী অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা ২:১৮৩)।
আল্লাহপাক আরো বলেন: রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। -সূরা বাকারা (২) : ১৮৫
আল্লাহ পাক বলেন: রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোযা রাখে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সুরা বাকারা ২:১৮৫)
এ মাসে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাদীস শরীফে এসেছে- রমযান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯/২)।
অন্য এক হাদীসে এ মাসের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে- যখন রমযান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।( বুখারী, হাদীস ৩২৭৭; মুসলিম, হাদীস ১০৭৯/১)।
হাদীস শরীফে এসেছে- আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২২২০২)।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- রমযানের ওমরা হজ্ব সমতুল্য। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৩৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৯৮৬)।
অন্য এক বর্ণনায় (যা সনদের দিক থেকে দুর্বল) এসেছে- রমযান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরয আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরয আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩০৫-৩০৬)। অর্থাৎ এ মাসে নফল আদায় করলে অন্য মাসের ফরযের ন্যায় ছওয়াব হয়। আর এ মাসের এক ফরযে অন্য মাসের ৭০ ফরযের সমান ছওয়াব হয়।
রোযার ছওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই ইরশাদ করেন- নিশ্চয় রোযা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১/১৬৫)।
হাদীস শরীফে এসেছে- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে আমীন, আমীন, আমীন বললেন। তাঁকে বলা হল, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল অথচ সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমীন। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৬৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯০৮)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আ.-এর সাথে রমযানের প্রত্যেক রাতে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে- হযরত জিবরীল (আ.) রমযানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁকে কুরআন মাজীদ শোনাতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২
নবী (সা:) বলেন- যখন মাহে রমাযানের আগমন হয় তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯)
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তবে রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং এর প্রতিদান দিব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ : এক. ইফতারের মুহূর্তে দুই. রবের সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্তে। আর রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম। (সহিহ মুসলিম হাদিস : ১১৫১)।
হজরত সাহ্হল ইবনে সাদ (রা:) থেকে বর্ণিত, জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা রয়েছে। এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। ঘোষণা করা হবে, রোজাদার কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন ওই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। ( বুখারি হাদিস : ১৮৯৬।)
অন্য অন্য বর্ণনায় রয়েছে: জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। শুধু রোজাদারগণ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যে তাতে প্রবেশ করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না। (জামে তিরমিজি ৭৬; ইবনে মাজাহ : ১৬৪০)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন: ‘রোজা এবং কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দুজনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ হাদিস : ৬৫৮৯; তাবরানি, মাজমায়ু যাওয়াইদ ৩/৪১৯)।
রোজাদারের করণীয় :
রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোজা থাকে সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের ন্যায় কাজ না করে। কেউ যদি গালি দেয় বা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয় তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার। (বুখারি হাদিস : ১৯০৪; সহিহ মুসলিম হাদিস : ১১৫১)।
অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ বর্জন করল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। ( বুখারি হাদিস : ১৯০৩)।
নিয়মিত তারাবিহরে নামাজ পড়ুন :
রমজান মাসে তারাবিহের নামাজ পড়–ন। এ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়। এ নামাজ সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা:) বলেন: যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে দন্ডয়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি হাদিস : ২০০৯)।
লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন