তিন দশক পার করে তিন যুগে পদার্পণ করলো দৈনিক ইনকিলাব, ৩৬ বছরে পা রাখলো। এত বছর কীভাবে গুজরে গেল তা ভাবতে গেলে বিশ্বাস হতে চায় না। শুরুতে এমন সব কথা শুনা যেত, যার সারমর্ম ছিল, ‘ইনকিলাব’ প্রকাশ-প্রকাশনা করতে যাচ্ছেন মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.), যিনি সাংবাদিক নন, তাঁর পরিবারেরও কেউ সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত নন। তিনি মোদার্রেছীনের প্রধান। তিনি কী সংবাদপত্র বের করবেন? বের করতে পারলেও তা হবে জমিয়াতের মুখপত্র মাত্র। তার পাঠক মোদার্রেছীন ছাড়া কেউ হবে না। অথবা অচিরেই তা অবলুপ্ত হয়ে যাবে। সাংবাদিক মহলে ইনকিলাব নিয়ে শুধু এ ধরনের গুঞ্জনই ছিল না, বরং গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে গুজবও ছিল। ইনকিলাবের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক প্রস্তুতির কথা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ও তার ঘনিষ্টরা ব্যতীত কেউ জানত না। সকল প্রস্তুতি নীরবে অতি সংগোপনে সম্পন্ন হয় এবং স্টাফ নিয়োগের পর্বও শুরু হয়ে যায়।
তখনকার বাংলা দৈনিকগুলোর মধ্যে প্রাচীন দৈনিক ‘আজাদে’ এক বড় ধরনের ধাক্কা আসে। এখানকার প্রশাসনিক ও বার্তা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েক জন প্রকাশিতব্য ইনকিলাবে যোগদান করেন। কেউ কেউ ইতস্তত বোধ করতে থাকেন, সময় মতো বেতন পাওয়া যাবে কি না এ নিয়ে। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে অনেকেই ছিলেন। যেহেতু নতুন দৈনিকে বিরাট স্টাফ প্রয়োজন এবং শিক্ষা নবীস সাংবাদিকের চেয়ে অভিজ্ঞ সাংবাদিক প্রয়োজন। সুতরাং বিভিন্ন সংবাদ পত্রে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের সাংবাদিকদের অনেকে ইনকিলাবে যোগদান করেন। বনানী অস্থায়ী অফিস হতে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু দিন পত্রিকা বের হতে থাকে এবং বাজারে আসতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। এ অন্তরবর্তীকালে গুজব কম ছিল না। অতঃপর সকল জল্পনা-কল্পনা, গুজব, গুঞ্জন এবং দ্বিধা-সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে ‘দৈনিক ইনকিলাবে’র আত্মপ্রকাশ ছিল এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। পত্রিকাটি ৩৫ বছর অতিক্রম করে ৩৬ বছরে পদার্পণ করা রীতিমত বিস্ময়। বিরুদ্ধবাদী ও সংশয়বাদী অনেকেই এখন ইনকিলাবের সম্মানিত লেখক-পাঠক।
একটি পত্রিকার জন্য তিন যুগ খুব বেশি সময় না হলেও একেবারে কমও নয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের নানা প্রকারের ঘটনা প্রবাহের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ইনকিলাব। অনেক ক্ষেত্রেই পত্রিকাটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে প্রয়াস চালিয়েছে। বিশেষত মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে তার মতামত দ্বিধাহীনভাবে ব্যক্ত করেছে। বিগত শতকের শেষ দশকে ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার খবর পরিবশেনকে উপলক্ষ করে দেশের সরকারের রোষানলেও পড়তে হয়েছিল। বিভিন্ন দেশে কোরআন অবমাননা, মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ এবং নানা স্থানে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ইনকিলাব সাধ্যমত ভূমিকা রেখে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন আরব দেশে ভ্রাতৃঘাতি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে পত্রিকাটি বৈপ্লবিক ভ‚মিকা পালন করেছে। যেখানে যখনই মুসলিম উম্মাহর স্বার্থবিরোধী তৎপরতা লক্ষ করেছে, সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করেছে। সর্বদা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করে আসছে এবং বিশেষভাবে ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অনুসরণ করে অধিকৃত এলাকা হতে ইসরাইলি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমানে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় যে ইসরাইলি বর্বর সেনাদের অকথ্য নির্যাতন ও তান্ডব চলছে; যাতে অগণিত নারী, শিশুসহ ফিলিস্তিনি জনগণের প্রাণহানী, ধ্বংসলীলা ও বর্বরতা চলছে তার কঠোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেখানে দুর্গত-দুর্দশা গ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রেরণের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। দৈনিক ইনকিলাব বরাবরের ন্যায় এ ইসরাইলি তান্ডবের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া পত্রিকাটি পবিত্র হারামাইন শরীফের মর্যদা রক্ষার্থে সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইনকিলাবে আন্তর্জাতিক পাতা শিরোনামে প্রত্যহ বিশ্বের নানা ঘটনা এবং খবরাখবর ছাড়াও মুসলিম দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী ও খবর প্রকাশিত হয়ে আসছে। এতে মুসলিম বিশ্ব সংক্রান্ত নানা প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় এবং নানা ফিচার নিয়মিত ছাপা হয়ে থাকে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের নানা স্থানে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, মসজিদ ও কোরআন অবমাননা, কোরবানিতে প্রতিবন্ধকতা, সীমান্তে উস্কানি ও হত্যাকান্ড, ফারাক্কা সমস্যা ও পানি বণ্টন সংকট ইত্যাদি বহু বিষয়ে এ পত্রিকার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। প্রতিবেশী বার্মায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য বার বার দাবি জানিয়ে আসছে। হজ্জ্ব যাত্রীদের সমস্যাবলী সমাধানে এখানে ও সেখানে এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, সৃষ্ট সমস্যাবলীর সমাধান, এজেন্টদের দুর্নীতি বন্ধে পত্রিকাটি সব সময় বাস্তব পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানগণ যেখানে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার, ইনকিলাব তা বন্ধের দাবি জানাতে কুণ্ঠাবোধ করে না। প্রবাসীদের দুঃখ, দুর্দশা এবং সমস্যাবলী সমাধানে তার কণ্ঠ সর্বদা সোচ্চার।
জাতীয় পর্যায়ে ইনকিলাবের বহুমুখী ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থে ইনকিলাব তার জন্মলগ্ন থেকেই আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর সর্বদাই আলাদা গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। সীমান্ত পথে অবৈধ যাতায়াত- যোগাযোগ, পাচার-চোরাচালান ইত্যাদি প্রতিহত করে সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনকে সব সময় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও এর প্রয়োজন ও গুরুত্ব উপস্থাপন করে যাচ্ছে।
এদেশের মুসলমান তরুণ-তরুণী তথা যুব সমাজের একটি অংশ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার এবং নানাভাবে বিপথগামিতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ইনকিলাব মনে করে, ইসলামী নৈতিক শিক্ষার অভাব, পিতা-মাতা, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা, অবৈধ মাদক ব্যবস্থা এবং অপসংস্কৃতি ইত্যাদি এজন্য দায়ী, এসব থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করতে বর্ণিত কারণগুলো দূর করতে হবে এবং ইসলামের আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে হবে। একজন মুসলিম সন্তানের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজন তা কেবল কোনো ফেকাহ বা কিতাব না পড়েও একজন সাধারণ পাঠকও ইনকিলাব পাঠ করে সম্যক রূপে অবগত হতে পারে। কেননা পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত পত্রিকাটির মালিক-কর্তৃপক্ষ ইসলামী আদর্শ শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার-প্রসারে যে বৈপ্লবিক ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে, তা বিশেষভাবে বাংলা দৈনিক সংবাদপত্র জগতে একক ও অনন্য। ইসলাম সংক্রান্ত প্রকাশিত সকল রচনা একত্রিত করা হলে বৃহদাকারের কয়েক খন্ডের ‘এনসাইক্লোপেডিয়া’ বা বিশ্বকোষ রচিত হয়ে যাবে। বিগত ৩৫ বছরের ইনকিলাবের ফাইলগুলো তার জীবন্ত সাক্ষী হয়ে আছে।
ইনকিলাব গোড়া থেকেই ধাপে ধাপে ইসলামী বিষয়গুলোর প্রকাশ ও প্রচার ধারাকে ক্রমেই সম্প্রসারিত করে আসছে। প্রথমে সাপ্তাহিক একটি ধর্মীয় ফিচার পাতা, অতঃপর সপ্তাহে দুটি ধর্মীয় ফিচার পাতা এবং সর্বশেষ প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম’ শিরোনামে বিশেষ ধর্মীয় কলাম ইনকিলাবের ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে। এছাড়া ইনকিলাবের সম্পাদকীয় পাতাসহ বিভিন্ন ফিচার পাতা ও সাধারণ পাতাগুলোতে ইসলাম বিষয়ক বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ইসলামের নানা দিকের ওপর প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বিশেষ ফিচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবন চরিত প্রভৃতি বিষয়ে অহরহ লেখা ছাপা হচ্ছে, খবরা-খবরের তো কথাই নেই। এ কথা বলা অনবাশ্যক, যে কোন ভাষায় দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ব্যবসায়িক-বাণিজ্যিক। প্রচারধর্মী উদ্দেশ্যাবলীও তার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলো আয়ের উৎস। বিজ্ঞাপন প্রচার, পত্রিকা বিক্রিলব্ধ আয় থাকে গৌণ। সুতরাং বলা যায়, ইনকিলাব ইসলাম প্রচারের জন্য তার পাতা, কলামগুলো ওয়াকফ করে দিয়েছে, সেগুলো বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ব্যবহার করলে প্রতি মাসের বিজ্ঞাপনের আয় দ্বারা সারা বছরের স্টাফ খরচসহ আরো বহু প্রয়োজনীয় খরচ বহন করতে পারত। ইসলামের জন্য ইনকিলাবের এ বিশাল ছাড় অতুলনীয়। তাই বলতে হয় ইসলামের এ সস্তা-সহজ প্রচার হতে যারা উপকৃত হতে পারছেন, তারা সৌভাগ্যবান এবং ইনকিলাবের উদ্যোগও সার্থক-সফল। সহজে স্বল্প ব্যয়ে ইসলামী শিক্ষা লাভ করা অবশ্যই সৌভাগ্যের বিষয় বলে গণ্য হবে। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ইনকিলাবের বহুমুখী ভূমিকার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। বিশেষভাবে যদি সমাজে মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতি দৃষ্টি পাত করা যায় এবং অপরাধ প্রবণতা ও পাপাচারগুলো পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে চোখের সামনে যে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠবে তা প্রকাশ করা কলমী শক্তির বাইরে, যার অন্তরালে মৌলিকভাবে সক্রিয় রয়েছে মাদকদ্রব্য সেবন এবং উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের বিপদগামী ও দুর্নীতি ইত্যাদি। বাবা-মা অভিভাবকদের উদাসীনতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতা, বিশেষত মুসলিম পরিবারগুলোর এক শ্রেণির যুবক ইয়াবা আসক্ত ও মাদকসেবী হয়ে কান্ডকজ্ঞান হারা হয়ে পড়েছে। আবার কিছু অজ্ঞ-মূর্খ যানবাহন চালকও মাদক সেবন করে প্রায় মাতাল অবস্থায় ধর্ষণসহ যেখানে সেখানে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। ইনকিলাব ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সর্বদা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং এগুলো প্রতিহত করার ধর্মীয় দিক দর্শন বলে দিচ্ছে।
সামাজিক অপরাধ প্রবণতার তালিকা খুবই সুদীর্ঘ। সরকারি পর্যায়ে এগুলো বন্ধ করার নানা ব্যবস্থা ও পদক্ষেপের পাশাপাশি বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে দৈনিক ইনকিলাবও সাধারণভাবে এবং বিশেষ ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোরআন ও হাদীসের আলোকে এক সুদূরপ্রসারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। যদি ধর্মীয় পাতা ও কলামগুলোর কেবল শিরোনামের প্রতি দৃষ্টিপাত করা যায় তাহলে অপরাধ প্রবণতা ও পাপাচারের অজানা বহু চিত্রও ভেসে উঠবে। ইনকিলাব ইসলামের দৃষ্টিতেই এসব অপরাধ দমনের দাওয়াই বলে দিচ্ছে। ইনকিলাব বলে দিচ্ছে, সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে ইসলামী অনুশাসনগুলো মেনে চলার বিকল্প নেই।
মানবতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সারা বছর মানবতা প্রদর্শনের সুযোগ উন্মুক্ত, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপদাপদের কালে মানবতা প্রদর্শনের প্রয়োজন তীব্রভাবে দেখা দেয়। খরা, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, ঝড়, তুফান, বন্যা, প্লাবন, কলেরা, বসন্ত, মহামারি প্রভৃতি প্রাকৃতিক আপদ কালীন সময়ে বিপদগ্রস্ত অসহায়, দুঃখী-দরিদ্রদের সাহায্যে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা মানবতা বোধের পরিচায়ক। তাই দেখা যায়, ইনকিলাব দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে শুরু থেকে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে আসছে এবং মানবতার ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য নানা আঙ্গিকে লেখনি পরিচালনা করছে, আবেদন নিবেদন রাখছে এবং ইসলামের আলোকে মানবতা প্রদর্শনের প্রয়োজন ও গুরুত্ব তুলে ধরছে। বৈশ্বিক প্রাণঘাতী ও চলমান মহামারি করোনার এ দুঃসময়েও ইনকিলাব চিরাচরিত ভূমিকা অব্যাহত রেখে চলেছে। এ ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, মানবিক তৎপরতার সকল প্রকারের খবরা-খবর ইনকিলাব যথাযথ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ ও প্রচার করে আসছে। সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরের, সর্বশ্রেণির তৎপরতার খবর-বিবরণ ইনকিলাবে অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে অনেকের মধ্যে মানবতা প্রদর্শনের আগ্রহ-উৎসাহও বেড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণের সমস্যার অন্ত নেই। এগুলো সমাধানের মূল দায়িত্ব সরকার ও সংশ্লিষ্টদের। ইনকিলাব যথাসাধ্য চেষ্টা করে থাকে সেগুলো যথাস্থানে উপস্থাপনের এবং প্রয়োজনে সমাধানের উপায়ও বলে দিয়ে থাকে। জনগণ কোথাও বঞ্চনা, বৈষম্য এবং নির্যাতনের শিকার হলে তা তুলে ধরা ইনকিলাব তার দায়িত্ব মনে করে। এ ব্যাপারে পত্রিকাটি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই ভূমিকা পালন করে আসছে। সব সময় জনগণের পাশে অবস্থান করে তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও হাসি-কান্নার সাথে একাত্ম হয়ে তাদের কথা বলা ইনকিলাবের নীতি। তবে ধর্মীয় ব্যাপারে ইনকিলাবের কোনো আপোস নেই। তাই দেখা যায়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিরাজমান কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস, অনাচার, পাপাচার প্রভৃতি সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তার সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিগত প্রায় তিন যুগ ইনকিলাবের বিপুল সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমনি ব্যর্থতাও থাকতে পারে। তবে ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা-প্রতিকূলতা, যার বর্ণনা দিতে গেলে রচনার কলেবর বেড়ে যাবে। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, ইনকিলাব সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে চলেছে তার নীতি-আদর্শের প্রতি অটুট বিশ্বাস ও অবিচল মনোভাব স্থির রেখে। তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকার এটাই মূল কারণ। দেশে বিরাজমান ইসলামবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে, কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস নিরসনে ইনকিলাব সংগ্রামরত। বহুধা বিভক্ত আলেম সমাজে ঐক্য স্থাপনে মাদরাসা তথা ইসলামী শিক্ষার উন্নয়ন-বিস্তার, শিক্ষক কর্মাচারীদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করণে ইনকিলাবের অব্যাহত প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য। বিশেষত এ দেশের মাদরাসা ছাত্র ও শিক্ষক, আলেম সমাজের শতবর্ষের প্রাণের দাবি ‘ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা’ একটি অনন্য ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করাতে দৈনিক ইনকিলাব পালন করেছে অসাধারণ ভূমিকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন