যে কোনো দিন জন্ম নিচ্ছে- এমন খবর প্রচার হতেই চারদিকে আলোচনার ঝড়। যে করেই হোক জন্মটা আটকাতে হবে। শত চেষ্টার পরও নেতিবাচক আলোচনাকারীদের মুখে ছাই ছিটিয়ে ৪ জুন ভোরের সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হওয়ার আগেই তার জন্ম হলো। সালটা হচ্ছে ১৯৮৬। তারপর শিশু থেকে কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের ঝলকানি দিয়ে পার করেছে ৩৫ বসন্ত। আজ ৩৬ বছরে পা রেখেছে ১৯৮৬ সালের ৪ জুন জন্ম নেয়া বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব। সহকারী সম্পাদক মুনশী আবদুল মাননান ফোন করে আমাকে বললেন, ‘ইনকিলাবের সাথে কীভাবে জড়িত হয়েছিলেন- অনেকের মধ্যে একজন হিসেবে ফেলে আসা সেই স্মৃতি নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যায় লিখতে হবে। আর লেখাটা এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে হবে।’ এটুকু বলেই তিনি ফোন রেখে দিলেন।
ইতোমধ্যে সময় এক সপ্তাহের চারটি দিন অতীত হয়ে গেছে। লেখা দেয়ার জন্য হাতে আর মাত্র তিন দিন সময়। ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যায় লেখার জন্য ভাবতে ভাবতে মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা ফেলে আসা অতীতের স্মৃতির রেকর্ডকে সামনে টেনে আনার চেষ্টা করি। সেই স্মৃতির রেকর্ড হাতড়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই একই ছাদের নিচে বসে একত্রে যারা কাজ করেছিলাম- সেসব চেহারা ভেসে উঠল। অনেকেই বেঁচে আছি। তবে এক ছাদের নিচে আর কেউই কাজ করছি না। তাতে কী? সহকর্মীদের কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে দেখা ও কথা হয়। আবার অনেকে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
যা বলছিলাম, ইনকিলাবের জন্মটা এত সহজ ছিল না। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সারাদেশে সামরিক শাসন জারি করেন। ক্ষমতা দখল করেই এরশাদ ঘোষণা করেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেবেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর দেশ কাঁপানো গণআন্দোলনে পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে যে, এরশাদের ওইসব অঙ্গীকার সত্য ছিল না।
জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের চার বছর পার হওয়ার পর্যায়ে মিডিয়া জগতে প্রায় সবার মুখে একটি কথাই উচ্চারিত হচ্ছিল, ‘নতুন একটি দৈনিক নাকি বাজারে আসছে?’ আলোচনা হলেও প্রথম দিকে কেউই বলতে পারেননি কারা কোথা থেকে নতুন পত্রিকা বের করছেন। ওই সময় (১৯৮৫ সাল) পুরান ঢাকার লালকুঠি এলাকা থেকে নবঅভিযান নামে একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত হতো। সেই পত্রিকার চিফ রিপোর্টার ছিলেন আজকের যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম। আমি ছিলাম স্টাফ রিপোর্টার। এক রাতে কাজ শেষে ফেরার সময় নতুন দৈনিক পত্রিকার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ হচ্ছিল। সাইফুল ভাই বললেন, ‘সাকির কথা আছে, কাল দুপুরে প্রেসক্লাবে আসিস।’ পরদিন দুপুরে প্রেসক্লাবে যাওয়ার পরই সাইফুল ভাই বাইরে বের হয়ে বললেন, ‘নতুন পত্রিকার নাম ইনকিলাব। বনানী ১০ নম্বর রোডে অফিস। আমার সিভি দিয়েছি। তোরটা দিয়ে আসিস।’
নবঅভিযানে আমরা উভয়ে কাজ করলেও এ নিয়ে আর কথা হয়নি। পরদিন ৬ নম্বর রুটের বাসে চড়ে বনানী বাজারে নেমে ১০ নম্বর রোডে প্রকাশিতব্য দৈনিক ইনকিলাব অফিসে যাই। ভেতের প্রবেশ করার পর মাথার চুল ব্যাকব্রাশ করা ফর্সা চেহারার এক ভদ্রলোককে বসে থাকতে দেখি। টেবিলের এক পাশে কালো ব্রিফকেস। সালাম দিতেই জানতে চাইলেন, কাকে চাই? জবাবে সরাসরিই বললাম, রিপোর্টার হিসেবে কাজ করার জন্য সিভি দিতে চাই। সামনের চেয়ারে বসার ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, ‘আমি দৈনিক ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদক সুলতান আহমদ। আপনার সিভিটা দিন।’
এরপর হ্যান্ডশেক করে চলে আসার সময় জানতে চাইলাম, আমি কি খোঁজ নিতে পারি? সুলতান আহমদ বললেন, ‘না তার দরকার হবে না। আপনিই খোঁজ পেয়ে যাবেন।’ সময়টা ছিল শীতকাল ১৯৮৫ সালের শেষ দিক। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাত্রা শুরু করেছে নতুন বছর ১৯৮৬। আস্তে আস্তে শীতও বিদায় নিয়েছে। অপরদিকে ইনকিলাব পত্রিকা নিয়ে সাংবাদিক মহলে দিন দিন আলোচনা বেড়েই চলেছে। সাংবাদিকদের মধ্যে কে বা কারা নতুন পত্রিকায় যোগদান করতে পারেন সে নিয়েও কথাবার্তা শোনা যেত। কিন্তু নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছিলেন না, কে বা কারা যাচ্ছেন ইনকিলাব পত্রিকায়। আবার কেউ কেউ বলাবলি করতেন, দৈনিক পত্রিকার অফিস অভিজাত এলাকায় কী করে হয়?
মার্চের ২৬, ১৯৮৬ সাল। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সংবাদপত্র বন্ধ। পরদিন নবঅভিযান অফিসে যাওয়ার পর সাইফুল ভাই বললেন, ‘কাজ শেষ হলে হুট করে চলে যাবি না। একসাথে গুলিস্তান হয়ে বাসায় ফিরব।’ ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে মধ্যরাত পেরিয়ে তারিখ ২৮ মার্চ। গুলিস্তানের পথে পা বাড়াতেই সাইফুল ভাই দ্বিতীয়বার ইনকিলাব নিয়ে কথা বললেন। তিনি যা বললেন সেটি হচ্ছে, এপ্রিলের প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ফটো কম্পোজে ইনকিলাব প্রকাশিত হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পত্রিকা বের হতে পারে।
আমার স্মৃতিতে যতটুকু মনে পড়ে, তখন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ ১৯৮৬ সাল। সন্ধ্যার পর নবঅভিযান পত্রিকায় ফোন এলে চিফ রিপোর্টার সাইফুল ভাই ধরলেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘সাকির তোর ফোন।’ রিসিভার হাতে নিয়েই সালাম দিলাম। অপর প্রান্তের কণ্ঠ, ‘আমি সুলতান আহমদ বলছি। কেমন আছেন? আগামীকাল দুপুরের দিকে আসতে পারবেন?’ আমি জ্বি আচ্ছা বলার পরই তিনি সংযোগ কেটে দিলেন।
বনানীতে ইনকিলাব অফিসে যাওয়ার পরই বার্তা সম্পাদক সুলতান আহমদ আমাকে নিয়ে গেলেন মহাসম্পাদক এ কে এম মহিউদ্দিন সাহেবের রুমে। সালাম বিনিময়ের পর আমার হাতে একটি লম্বা খাম দিয়ে টেবিলের উপর রাখা ফাইল খুলে বললেন, ‘এখানে সই করুন।’ আমি সই করার পর রুমে প্রবেশ করলেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি সহকারী সম্পাদক। পরে জানতে পেরেছিলাম, হাফিজ ভাই আমার সিভি দেখার পর বলেছিলেন, ‘হি ইজ এ প্রমিজিং বয়।’ এরপর চিফ রিপোর্টার নূরুদ্দীন ভুইয়া ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বার্তা সম্পাদক সুলতান আহমদ।
হাফিজ ভাই যখন রাজারবাগে দৈনিক কিষাণ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক তখন মাঝে মধ্যে সেই পত্রিকা অফিসে গিয়ে আড্ডায় মেতে থাকতাম। কিষাণ পত্রিকার স্পোর্টস রিপোর্টার মুর্শিদ আলম ভাই ও আমি খিলগাঁও আনসার হেড কোয়ার্টারের পাশে মেসে থাকতাম। যা বলছিলাম, নিয়োগপত্র নিয়ে ফিরে হোটেলে দুপুরের খাবার সেরে বিকেলে নবঅভিযান অফিসে যাই। ইনকিলাবে ১০ এপ্রিল আমার যোগদানের তারিখ। দু’দিন আগে ৮ এপ্রিল রাতে নবঅভিযান পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে চলে আসি। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ১০ এপ্রিল, ১৯৮৬ দুপুরের পর বনানীতে ইনকিলাব অফিসে গিয়ে যোগদানপত্র বার্তা সম্পাদক সুলতান আহমদের কাছে দেই। তিনি হাজিরা খাতা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘নিজের নামের পাশে সই করুন। প্রতিদিন অফিসে এসে আগে হাজিরা খাতায় সই করবেন।’
ইনকিলাব পত্রিকায় আমরা তিনজন পূর্বপরিচিত ছিলাম। হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, সাইফুল আলম ভাই ও আমি। অন্যদের সাথে প্রথম দিনই পরিচয় পর্ব সেরে নিয়েছিলাম। সবাই নিয়মিত অফিস করছি, কিন্তু পত্রিকা কবে প্রকাশিত হবে তা আমরা কেউই জানতে পারিনি। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এক সন্ধ্যায় ছিল কর্তৃপক্ষের মিটিং। সবার উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক।
আমরা প্রত্যেকে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে নিজেদের পরিচয় দেই। এই পর্ব শেষ হওয়ার পর ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) আসসালামু আলাইকুম বলে দাঁড়িয়ে গেলেন। দুই পাশে দু’জন বসা। একজন সম্পাদক এবং অপরজন মহাসম্পাদক। আমার স্মৃতিতে ৩৫ বছর আগের কথা যতটা মনে পড়ে, আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) বললেন, ‘সংবাদপত্র জগতে এত কম বয়সী সম্পাদক আছে বলে আমার জানা নেই। সম্পাদকের বয়স আপনাদের অনেকের সমান হবে, আবার অনেকেই বয়সে বড় হবেন। আমি মনে করি, এটি কোনো সমস্যা নয়। টিম ওয়ার্কের মধ্যদিয়ে চলার মানসিকতা থাকলে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।’
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মহাসম্পাদক এ কে এম মহিউদ্দীন। এরপর সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিলেন। তিনি বললেন, ‘আপনারা সবাই মনে করবেন, ইনকিলাব মানে একটি পরিবার। আর পরিবারের সবাই মিলেমিশে কাজ করলে, যত বাধা আসুক না কেন তা অতিক্রম করা মোটেই কঠিন নয়। আমরা কে কী কাজ বা কী দায়িত্ব পালন করছি সেটি বড় কথা নয়, খবর নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করা জরুরি। একজন খবরের উৎস পেতে পারেন। অপরজন নাও পেতে পারেন। তাতে কিছুই যায় আসে না। নিজেরা সেই খবরের উৎস নিজেদের মধ্যে শেয়ার করলে পত্রিকায় পরিবেশন অত্যন্ত চমৎকার হবে।’ আরো বললেন, ‘আমরা একটি আদর্শ নিয়ে ইনকিলাব বের করতে চলেছি। আর সেটি হচ্ছে, যত বড় আঘাতই আসুক না কেন ইসলামের ব্যাপারে ইনকিলাব কখনোই আপোস করবে না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জনগণের কথা ইনকিলাব বলবেই। আপনারা সাংবাদিকতা পেশায় নতুন নন। অন্যত্র কাজ করেছেন এবং ইনকিলাবে নতুন। তবে একটি কথা মনে রাখা খুবই দরকার; আর সেটি হচ্ছে, সাংবাদিকতা মানেই প্রচুর পড়াশোনা করা। পড়াশোনা না করলে সাংবাদিক হিসেবে উপরের দিকে ওঠা খুবই কঠিন। তাছাড়া ইনকিলাবের আদর্শকে লালন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনারাই হচ্ছেন সেই বীর সৈনিক। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না ইনশাহআল্লাহ।’
যা বলছিলাম, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইনকিলাবের ডামি বের হতে শুরু করে। আমাদের সবার মাঝে কাজের স্পিরিট ছিল অনেক বেশি। কবে বাজারে আসবে ইনকিলাব সে অপেক্ষায় ছিলাম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পত্রিকা বের হবে কি না সে বিষয়েও আমরা পরিষ্কার কোনো ধারণা পাইনি।
জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের সময় ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে এবং সামরিক শাসনের অবসানসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এমন অবস্থায় সরকার নির্বাচনের তারিখ ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল পুনঃধার্য করে। বিরোধী দলগুলো ঘোষিত নতুন তারিখও প্রত্যাখ্যান করে।
আমাদের ধারণা ছিল, সংসদ নির্বাচন যেহেতু ২৬ এপ্রিল হয়নি, তাই নতুন তারিখের আগেই ইনকিলাব বাজারে যাবে। এক-দুই করে দিন গড়াতে থাকে। নিয়মিত ডামি বের হচ্ছে। কিন্তু সবুজ সঙ্কেত আমরা পাচ্ছি না। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচন বর্জন করে। পরে ১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জেনারেল এরশাদের দল ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তবে এ নির্বাচন আদৌ অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সরকারি সন্ত্রাসযুক্ত এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বলে মত দেন।
নির্বাচনের পর জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসে। আমরাও আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। নিয়মিত বিশেষ রিপোর্ট করার জন্য চিফ রিপোর্টার ও বার্তা সম্পাদক ব্রিফিং দেয়া শুরু করেন। আর রাতের বেলায় প্রায়ই সম্পাদক সাহেব এসে সবার খোঁজ-খবর নিতেন। তিনিও বিশেষ রিপোর্টের ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে জানতে চাইতেন। আমরা সাবজেক্ট বলার পর তিনি সেই সাবজেক্টের বিষয়ে আরো গভীর ধারণা দিতেন।
এভাবেই কেটে যায় পুরো মে মাস। আমার যতদূর মনে পড়ে, জুন মাসের ২ তারিখ দুপুরের দিকে অফিসে মিটিং ডাকা হয়। মিটিংয়ে সবার উদ্দেশে মাননীয় সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বক্তব্য রাখবেন। মিটিং শুরু হলে সম্পাদক সবাইকে সালাম জানিয়ে ইনকিলাবের ডামি নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। নিয়মিত ডামি প্রকাশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘সামনে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম। বনানী অফিস থেকে কাজ শেষে পত্রিকা প্রকাশের জন্য ছুটতে হবে আর কে মিশন রোডের অফিসে। আমাদের জন্য প্রতিটি মুহুর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটু এদিক-সেদিক হলে পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে। আর সময়মতো পত্রিকা ঢাকার বাইরে পৌঁছানোর টার্গেট নিয়ে কাজ করতে হবে। আল্লাহর মেহেরবানিতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের লক্ষ্যকে অবশ্যই সামনের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সারা দেশের পাঠকের হাতে ইনকিলাব তুলে দিতে চাই ৪ জুন। তাই আগামীকাল আপনাদের প্রতিটি রিপোর্ট হতে হবে অত্যন্ত চমৎকার ও পাঠকের কাছে সমাদৃত।’
ইনকিলাবের জন্মলগ্ন থেকে টানা এক যুগ কাজ করার পর আমি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগদান করি। সেখানে ১৫ বছর কাজ করার পর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় ইনকিলাবে যোগদান করি ২০১৮ সালে। স্মৃতিচারণমূলক লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সকল সহকর্মীদের নাম লিখতে পারিনি। প্রতিষ্ঠাকালীন স্টাফ রিপোর্টার, বর্তমানে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। লেখায় আমার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার সেই সময়কার যেসব সহকর্মী বেঁচে আছেন তাদের জন্য দোয়া করছি।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন