ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ এর প্রথম ধাপের স্থগিত নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণায় এলাকায় নির্বাচনী আমেজ না থাকলেও জনবান্ধব প্রার্থী খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী বিপদগ্রস্ত অসহায় ভোটারদের পাশে কে কতটুকু কিভাবে দাঁড়িয়েছেন সে হিসেব-নিকেশ কষছেন ভোটাররা। ভোটাররা বলছেন, ‘বিপদ-আপদে যাদের কাছে পাবো না, তাদের ভোট দিয়ে লাভ কি? পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে জনবান্ধব প্রার্থীকেই ভোট দিবেন তারা।’
সম্প্রতি উপকূলে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বরগুনা জেলার বিভিন্ন জনপদ প্লাবিত হয়ে জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হলে দূর্যোগকবলিত মানুষদের পাশে ছিলেন না প্রার্থী। দেড়হাজারেরও বেশী প্রার্থীর মধ্যে গুটিকয়েক প্রার্থী দূর্যোগকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সামর্থ থাকা সত্তে¡ও অনেকেই প্রদর্শন করেছেন উদাসীনতা। কোন কোন চেয়ারম্যান বর্তমান নির্বাচনে প্রার্থী না হয়েও দুর্গত মানুষের পাশে ছিলেন সোচ্চার। দুর্যোগকবলিত মাঠে ছিলেন বরগুনা সদর ইউনয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আহাদ সোহাগ। নির্বাচনী মাঠে না থেকেও তার এজনহিতকর ভূমিক সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। বরগুনা সদও উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ সফিকুজ্জামান মাহফুজ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় আমি বিপদাপন্ন মানুষের পাশেই ছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় শুকনো খাবার, খিঁচুরী, সাধ্যমত নিরাপদ পানি পৌঁছে দিয়েছি। সাধ্যমত আমি মানুষের পাশে ছিলাম।’
করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ১ এপ্রিল ৩৭১ ইউপি ১১ পৌরসভাসহ লক্ষীপুর-২ আসনে নির্বাচন স্থগিত করে। চলতি মাসের ২ তারিখ নতুন করে আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ঘোষণা করে। প্রথম পর্যায়ের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরগুনা জেলার ২৯টি ইউনিয়ন নির্বাচনে ১ হাজার ৬শ’ ১২ জন প্রার্র্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
বরগুনা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪২ জন, আমতলীর ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫১ জন, বেতাগী ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন, পাথরঘাটার ৩টি ইউনিয়নে ২৭ জন, বামনার ৪টি ইউনিয়নে ২১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়াও সংরক্ষিত পদে ৩৪৬ এবং সাধারণ সদস্য পদে ১,০৭৯জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ১৮ মার্চ, যাচাই ১৯ মার্চ, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৪ মার্চ আর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল ১১ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীদের আঁটঘাঁট বেঁেধ মাঠে নামেন। ভোটাদের মনোযোগ আকর্ষণে চলে প্রচার প্রচারণা, মাইকিং, উঠান বৈঠক ও পথসভা। প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ও সমর্থকের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে বেশকিছু ইউনিয়নে। কুপিয়ে যখম, ককটেল নিক্ষেপ, গুলিসহ মারধরের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা। সংহিংসতায় বরগুনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন, অর্ধশতাধিক মামলা হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায়।
বৈশি^ক করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১এপ্রিল নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সে থেকেই বন্ধ রয়েছে প্রচার প্রচারণা। মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান প্রার্থী-সমর্থকরা। প্রার্থীরা বলছেন, ‘নির্বাচনে একটা গতি ছিল, ভোটারদেরও সাড়া ছিল, কিন্ত স্থগিত হওয়ায় পুনরায় তারিখ ঘোষণার পর আর সে আমেজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে টানানো পোস্টার ব্যানার লিফলেটগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে সেগুলো আবার করতে হলে খরচের পরিধি বাড়বে।’ বুড়িরচর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্র্থী এডভোকেট মোঃ হুমায়ুন কবির নির্বাচন স্থগিতকরন ও পুনরায় তারিখ ঘোষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন নতুন প্রার্থী হিসেবে আমার অনেক সুবিধা হয়েছে। নির্বাচন বন্ধ ঘোষণার পর আমি মাঠ ছাড়িনি, ভোটারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। দীর্ঘদিন মানুষের পাশে থেকে নির্বাচনী মাঠ ভালোভাবেই গুছিয়েছিলাম, স্থগিত করায় আরো ভালোভাবে মাঠ গুছাতে পেরেছি। পক্ষ-বিপক্ষ সকল ভোটারদের কাছেই বারবার যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রচার প্রচারণার নির্দেশ পেলে আবার ঘোষিতভাবে মাঠে নামব।’
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিতকরণ এবং নতুন তারিখ ঘোষনার বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বলেন, তারিখ ঘোষণা হলেও নতুন কোন দিক নির্দেশনা আসেনি। প্রচারণার ধরণ, প্রার্থীদের করণীয় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হওয়ার পর আমরা সে অনুসারে কাজ শুরু করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন