শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মোরা ভাডার সময় বাড়ি আই, জোয়ারের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩০ পিএম

জোয়ারের পানিতে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাগর ও নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অন্তত:২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বেঁচে অনেকের থাকার শেষ আশ্রয়টুকু। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে দুই দফা পানিতে প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে এলাকার মানুষ। ওইসব গ্রামে অধিকাংশ মানুষ এখন অনেকটাই জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৬টি গ্রাম। এছাড়া পুকুর,মৎস্য ঘের ও ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে ১৪ হাজার ৭১০টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাবনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে লালুয়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধানখালী ইউনিয়নের বেরিবাধ ভেঙ্গে ৩ গ্রাম, মহিপুর ইউনেয়নের ৩ গ্রাম ও চম্পাপুর ইউনিয়নের ৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বভাবিক জেয়েরের তোরে আরো বেশ কয়েকটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাঁধটি এখন ঝুঁকিপর্ন হয়ে পারেছে। জোয়ারের পানির চাপে যেকোন সময় বাঁধটি ছুটে প্লাবিত হতে পাড়ে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। লালুরা ইউনিয়নের চান্দুপাড়া গ্রামের নাজমা বেগম বলেন, গত দুই দিন ধইরর‌্যা চুলায় মোরা আগুন জ্বালাইতে পারি নাই। সব পানিতে তলাইয়া আছে। ক্যামনে কি খামু হেইয়াই কইতে পারি না। একই গ্রামের সোহরাব গাজী বলেন,মোরা ভাডা জোয়ারের গোন হিসাব কইরর‌্যা বাড়ি থাহি। মোরা ভাডার সময় বাড়ি আই আবার জোয়ারের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে যাই।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর ৫৪/এ পোল্ডার এলাকায় জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে, ধূলাসার ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের প্রায় একশত মিটার বিধ্বস্ত হয়েছে,মহিপুর ইউনিয়নের ৪৭/১ পোল্ডারের নিজামপুর ও কমরপুর এই দুই পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে,নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলার ৪৬নং পোল্ডারের দুইটি পয়েন্টে প্রায় একশত মিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া লালুয়র ইউনিয়নের ৪৭/৫ নং পোল্ডারের ৮ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করেছে। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.হালিম সালেহহীন জানান, কলাপাড়া উপজেলায় মোট সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ পাঁচশত ১৫ কিলোমিটার, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ২৩ দশমিক আট কিলোমিটার। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলায় বেড়িবাঁধ নেই (উম্মুক্ত) ১৪ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার।ঘূর্নিঝড় ইয়াসে ক্ষতির পরিমান প্রায় তিনকিলোমিটার। বর্তমানে লালুয়র ইউনিয়নের ৪৭/৫ নং পোল্ডারের ৮ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধটি পায়রা পোর্ট কতৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই অংশটুকুর মেরামতের দ্বায়িত্ব তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরুরী ভিক্তিতে সংস্কারের জন্য আমরা ব্যাবস্থা গ্রহন করছি। স্থায়ী সংস্করের জন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য উন্নয়ন কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, উপজেলায় ঘূর্নিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ইতোমধ্যেই ১৬শত পুকুর ও দুইশত ৮২টি সাগরের পানিতে প্লাবিত হয়। এর জায়গার পরিমান ছয়শত ১৬ একর । যার আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় দুই কোটি টাকা।

কলাপাড়ার মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.আবদুল কালাম আযাদ জানান, গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাজুরা বীটের দুইশতাধিক গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় শুকনো খাবার কেনার জন্য ২৫ হাজার করে টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় হয়েছে। আরো আড়াই লক্ষ টাকা করে দেয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন