শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ইয়াসের প্রভাবে কক্সবাজার উপকূল ব্যাপক প্লাবিত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ৪:৫০ পিএম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল এখন উত্তাল। স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চতায় কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়ে জোয়ারের পানি উপকূলে আছড়ে পড়ছে। এতে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, উত্তর ধূরুং, লেমশীখালী, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও কক্সবাজার সদরের গোমাতলীসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে স্থানীয় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে।

জেলা প্রশাসন বিপদাপন্ন সময়ে নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে উপকূলের সাইক্লোন শেল্টার ও উঁচু ভবনগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে । ইতিমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন। জরুরি মুহূর্তে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে সহযোগিতার লক্ষ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবক, এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস কক্সবাজার উপকূল থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে (২৫ মে সন্ধ্যা নাগাদ)। ঘূর্ণিঝড়টি উৎপত্তিস্থল হতে আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার (২৬ মে) দুপুরের দিকে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।’

আবহাওয়ার ১২ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়েছে। ফলে অতিরিক্ত জোয়ারের উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর এসেছে। ইয়াসের প্রভাবে ঘণ্টায় ৮৯ হতে ১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে। ডিসি আরও বলেন, ‘ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষতি ও দুর্যোগ মোকাবিলার সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খালি রাখার পাশাপাশি কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও পানি মজুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।’ এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজারের আকাশ কোথাও মেঘলা, কোথাও ঝকঝকে। কোনো কোনো এলাকায় দাবদাহ বইছে, আবার কোথাও কোথাও হালকা বাতাসের সাথে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। সাগর রয়েছে উত্তাল। সৈকত তীরের সাগরে যেন কেউ নামতে না পারে, সে জন্য পাহারা বসিয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহানা আকতার পাখি গণমাধ্যমকে বলেন, পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরারটেক উপকূলের অন্তত অর্ধলাখ মানুষকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ জন্য খোলা রাখা হয়েছে শহরের ২০ থেকে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হোটেল। আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের খাবারের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হবে পৌরসভা থেকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্বীপের ছয় হাজার মানুষকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেওয়া আছে। দ্বীপে দুটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বহুতল ভবনের ২৩টি হোটেল খোলা রাখা হয়েছে। সোমবার সকাল হতে সাগর প্রচণ্ড রকম উত্তাল থাকায় দ্বীপের অন্তত ৩০০ মাছ ধরার ট্রলার ৩০ কিলোমিটার দূরে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদীতে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সোমবার বিকেলে সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে ঢেউয়ের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে দ্বীপের মানুষ আতঙ্কে, কারণ বেশির ভাগ লোকজনের ঘরবাড়ির ছাউনি পলিথিন ও ছনের। ঝড়ো হাওয়ায় নড়বড়ে ঝুপড়ি ঘরগুলো উপড়ে পড়তে পারে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চতায় তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের উত্তর, পশ্চিম দিকের ঘরবাড়িতে প্লাবিত হচ্ছে। কয়েকটি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়ছে বেশ কয়েকটি নারকেল গাছ।’

 

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, মহেশখালীপাড়া, বাহারছড়া এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকিতে আছে। তাদের সরিয়ে এনে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অন্তত ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র।’কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ. স. ম শাহারিয়ার চৌধুরী জানান, দ্বীপের উত্তর ধূরুং, লেমশীখালী ও আলী আকবর ডেইলের বেড়িবাঁধগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিও মাঝে মাঝে এলাকায় প্রবেশ করে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের বাড়ন্ত পানি এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করছে। পানি ঢুকেছে অনেক বাড়িতে। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র মানুষগুলো। এদিকে কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের উপকূলীয় গোমাতলীর লবণ চাষি রিদুয়ান জালাল ও আবদুল্লাহ পাশা জানান, মঙ্গলবার দিনের জোয়ারের পানির তোড়ে মহেশখালী চ্যানেলের পূর্বাংশ গোমাতলীর বেড়িবাঁধের ডি-ব্লক ও মাঝের ঘোনা এলাকায় ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে এলাকার সি-ব্লক, রেইজ্যাকাটা, ডি-ব্লক, কাটা ঘোনা, কাটাখালীসহ একাধিক চিংড়ি ঘেরের প্রায় ১৫ হাজার একর লবণ মাঠ প্লাবিত হচ্ছে।

জেলার আটটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৫৭৬টি। এসব কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৬ লাখ ৫ হাজার ২৭৫ জন। উপকূলে ঝুঁকিতে থাকা আরও অন্তত কয়েক লাখ মানুষের জন্য পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বহুতল ভবন খোলা রাখা হবে। এ জন্য পুরো জেলায় ৬ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, এখন কক্সবাজার উপকূলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। ৪ নম্বর সংকেত পড়লে স্বেচ্ছাসেবীরা মাঠে নেমে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতনমূলক প্রচারণা শুরু করবেন। ৬ নম্বর সংকেত পড়লে স্বেচ্ছাসেবীরা শুরু করবেন ঘরবাড়ি থেকে লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজ। গত সোমবার এ ব্যাপারে সব স্বেচ্ছাসেবীকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন