উত্তর : বাংলায় ব্যবসা ও বাণিজ্য ইংরেজি কমার্স এর প্রতিরূপ, যা ফরাসি কড়স’ৎবং শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ জীবিকা, বৃত্তি, পেশা, কারবার, যতœ, উদ্যম, চেষ্টা, অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, অনুসন্ধান, ব্যবহার, আচরণ, সওদাগরি ইত্যাদি। ব্যবসা শব্দের আরও একটি ইংরেজি প্রতিশব্দ ইঁংরহবংং, যা প্রাচীন ইুংরহম শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ যে কোন কাজে ব্যস্ত থাকা। তবে সব ব্যস্ততাকে ব্যবসা বলা যায় না। শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে সামাজিক ও আইনগতভাবে বৈধ কর্মপ্রচেষ্টাকে সাধারণভাবে ব্যবসা বলা যায়। এ ধরনের কর্মপ্রচেষ্টা চাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগঠিত হোক কিংবা হোক প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে। ব্যবসার আরবী তিজারাত পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত। এর অর্থ বাণিজ্য, কারবার ইত্যাদি।
ইমাম রাগিব (রহ.) তিজারত শব্দের অর্থ করেছেন, মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে মূলধন বিনিয়োগ ও ব্যবহার করা।
সাইয়্যেদ সাবেক রহ. বলেন, ‘পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পণ্যের বিনিময়ে পণ্যের হস্তান্তর অথবা অনুমোদিত উপায়ে বিনিময়ের দ্বারা মালিকানার স্থানান্তরকে ব্যবসা বলে।’
ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খলদুন রহ. বলেন, ‘সস্তায় পণ্য ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে মূলধনে প্রবৃদ্ধি ঘটানোর মাধ্যমে উপার্জনের প্রচেষ্টাই হল ব্যবসা।’
অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় ব্যবসা এক ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড (বিজ্ঞান), যেখানে নির্দিষ্ট সৃষ্টিশীল ও উৎপাদনীয় লক্ষ্যকে সামনে রেখে বৈধভাবে সম্পদ উপার্জন বা লাভের উদ্দেশ্যে লোকজনকে সংগঠিত করা হয় ও তাদের উৎপাদনীয় কর্মকান্ড রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। ব্যক্তির মুনাফা পাওয়ার আশায় পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের মাধ্যমে উপযোগ সৃষ্টি এবং মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত অভাব পূরণের লক্ষে সেগুলো বণ্টন এবং এর সহায়ক সবরকম বৈধ, ঝুঁকিবহুল ও ধারাবাহিক কার্যকে ব্যবসায় বলে।
অবশ্য আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্রয়-বিক্রয় কাজে জড়িত। তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সকল ধরনের ক্রয়-বিক্রয় কার্যকেই ব্যবসা বলা হয়।
হালাল শব্দের আভিধানিক অর্থ বিধিসঙ্গত, বিধিসিদ্ধ, আইনসঙ্গত, বৈধ। সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ এর কাছে হালাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে যা কিছু বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তাই হালাল।’ আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী রহ. বলেন, ‘হালাল অর্থ মুবাহ, যা নিষেধের অর্গলমুক্ত এবং শরী’আহ প্রবর্তক যা করার অনুমতি দিয়েছেন।’
কুরআন ও হাদীসে যেসব বস্তুকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব বস্তু ইসলামী শরী’আত প্রবর্তিত নিয়মানুযায়ী বাজারজাতকরণের মাধ্যমে পণ্য আদান-প্রদান করে উপার্জনের প্রচেষ্টাকে হালাল ব্যবসা বলে।
আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। শুধু নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত আদায় করার নামই ইবাদত নয়; বরং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের হুকুম অনুসারে যখন যা করা হবে তাই ইবাদতরূপে গণ্য হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে হালাল উপার্জনের অন্যতম পন্থা। তাছাড়া হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের আবশ্যিক পূর্বশর্ত। এজন্য রাসূলুল্লাহ্, খুলাফায়ে রাশেদীন, আশরায়ে মুবাশ্শারাসহ অধিকাংশ সাহাবী হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কারো ব্যবসা-বাণিজ্য ও আয়-রোজগার যদি হারাম হয় তার কোনো আমল ও দু’আ আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন