চারদিকে চলছে যৌন হয়রানী। চলছে যৌন সন্ত্রাসীদের হামলা। খবরের কাগজে ফেসবুকের টাইমলাইনে একই খবর ‘ধর্ষণ’। মহামারী করোনা ভাইরাসের পর পরই এ যেনো আরেক ভাইরাসে ভাসছে দেশ।
সা¤প্রতিককালে বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে ‘ধর্ষণ’ নামের ব্যধিটি।প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে ধর্ষনের নানা ঘটনার খবর। গ্রামে কিংবা শহরে, বাড়িতে কিংবা রাস্তায়, অফিসে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনকি চলমান বাসে পর্যন্ত, একথায় বলা চলে প্রায় সর্বত্রই ঘটছে এমন ন্যাক্কাড় জনক ঘটনা। ধর্ষণ এখন ডাল-ভাতের মত হয়ে উঠেছে। ধর্ষণ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে আমাদের জানা দরকার ধর্ষণ বলতে আমরা কী বুঝি বা ধর্ষণ কী?
ধর্ষণ বলতে আমরা যা বুঝি তাহলো ’কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যৌন তৃপ্তি লাভ করা।’ বর্তমান সমাজে অহরহই ঘটছে এমন লজ্জাজনক ঘটনা। নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে যেখানে সেখানে।দিন দিন বেড়েই চলেছে এমন ন্যাক্কাড়জনক কাজ।
এ সকল কাজের নেপথ্যে কী কী কারণ রয়েছ কে বা কারা দায়ী তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? নানামুখি কারণে ধর্ষনের মত এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
ধর্ষনের পিছনে যেসকল কারণকে দায়ী করবো তাহলো নৈতিকতার অভাব বা অবক্ষয়, নারীদের সচেতনতার অভাব, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না দেয়া, পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের অভাব, নারীর খোলামেলা ও আবেদনময়ী পোশাক পরিধান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার উদাসহীনতা ইত্যাদি। এরকম নানান কারণে ঘটছে ধর্ষনের ঘটনা লাঞ্ছিত হচ্ছে নারীরা। বর্তমানে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি কারো একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব না প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন বলে মনে হয় তাহল সকলের মাঝে নৈতিকতাবোধ জাগরণ। ইসলাম সহ কোন ধর্মেই ধর্ষনের মতো কাজকে উৎসাহিত করা হয়নি। সুতরাং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর প্রবল গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সৃষ্টিই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখতে।
এছাড়া নারীদের ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতন করে তুুলা এবং হঠাৎ করে ধর্ষণের শিকার হলে নিজেদের বাঁচাতে পারে এমন আত্মরক্ষামূলক কৌশল শিখানো উচিত। অন্য আরেকটি ব্যাপার যা ধর্ষণ প্রতিরোধে অনন্য ভুমিকা রাখতে পারে আর তাহল পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সতর্কতা।
অনেক মেয়েই আছে যারা নিজ পরিবারেই ধর্ষণের মত পাষবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর জন্যে অনেক ক্ষেত্রেই পিতা-মাতা বা অভিবাবকের উদাসহীনতা দায়ী। অনেকেই চাচা, মামা বা চাচাতো-মামাতো, খালাতো-ফুফাতো ভাই-বোনদের অবাধে মেলামেশা করতে দেন। যার ফলে এক সময় মেয়েটি শিকার হয় ধর্ষণ নামের নগ্ন নির্যাতনের। অনেক পরিবারে কোন পুরুষ আত্নীয় এলে মেয়েটিকে একাই দেয়া হয় আদর আপ্যায়নে।অনেক সময় এসব ক্ষেত্রেও ঘটে ধর্ষণ।তাই পিতা-মাতা বা অভিভাবকের এসব ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে যাতে মেয়েটি কোন পুরুষ আত্মীয়ের কাছে সবার অগোচরে যাবার সুযোগ না হয়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ধর্ষনের মূল কারন হচ্ছে কোন ব্যক্তির মানসিক বিকৃতি, পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাব, দৃষ্টি ভঙ্গির ভিন্নতা, সামাজিক অসচেতনতা, সমান অধিকারের নামে খামুকা আন্দোলন।
দেখুন একজন মানুষ হিসেবে একজন নারী বা পুরুষ অবশ্যই তার ইচ্ছেমাফিক পোষাক পড়তে পারে। এটা তার অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার ব্যাপার। তবে তিনি কিভাবে এই অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রয়োগ কিভাবে করছেন সেটা বিবেচনার বিষয়। যেমন ধরুন, আপনি প্রকাশ্যে কোন মূল্যবান জিনিস প্রদর্শন করে নিয়ে যেতেই পারেন। এটা আপনার নাগরিক অধিকার। সেই সাথে আপনার সেই মূল্যবান জিনিসকে সঠিক নিরাপত্তার মাধ্যমে আপনার গন্ত্যবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আপনার সচেতনতা এবং দায়িত্ব। এখন কোন কারনে নিরাপত্তাজনিত কোন সমস্যায় আপনি যদি আপনার মূল্যবান জিনিসটি হারিয়ে ফেলেন, তাহলে রাষ্ট্র যেমন দায়ী হবে তেমনি সচেতনতার অভাবে আপনিও কম দায়ী হবেন না। তখন যদি আপনি এক তরফা ভাবে রাষ্ট্রকে দায়ী করেন তাহলে সেটা খুব বেশি গ্রহন যোগ্য হবে না।
অপরাধী শাস্তি না পেলে সে বার বার অপরাধমুলক কাজ করে তাতে অপরাধ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অন্যরা অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত হয়।তাই ধর্ষণকারীকে বিচরের মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যাতে অন্যেরা ভবিষ্যতে এমনটি করার সাহস না পায়।
উপরের কারণ ছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো মেয়েদের খোলামেলা পোশাক পরিধান।বর্তমানে মেয়ারা এমনভাবে পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করে যার ফলে শরীরে বেশির ভাগ এমনকি অনেকের পুরোটাই দৃশ্যমান। এমন খোলামেলা পোশাক পুরুষদের উত্তেজিত করে তুলতে সহায়ক। এর ফলে পুরুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ধর্ষণ করে। তাই বলা যায় যে ধর্ষনের জন্যে মেয়েরাও কম দায়ী নয়।এজন্যে ইসলামিক আইন অনুযায়ী সকল মুসলিম নারীদের পর্দা বিধান বাধ্যতামূলক করা হলে এবং অন্যান্য ধর্মের নারীরা শালীন পোশাক পরিধান করলে নিশ্চিত ধর্ষণ অনেকাংশেই কমে আসবে।
লেখক: আলেম, সাংবাদিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন