শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পিনাক-৬ লঞ্চডুবির ৭ বছর আজ

দোষীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ

শিবচর (মাদারীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবি। এক ভয়াবহ ট্রাজেডির নাম। সরকারি হিসেবে ৪৯ যাত্রীর লাশ উদ্ধার ও ৫৩ জন নিখোঁজ হলেও ৭ বছরেও বিচার সম্পন্ন হয়নি এ ঘটনার। দুর্ঘটনায় জড়িত সন্দেহে করা ২টি মামলার আসামিরা রয়েছেন জামিনে। ৭ বছর অতিবাহিত হলেও দোষীদের বিচার না হওয়ায় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিখোঁজ অর্ধশতাধিক পরিবারের কাউকেই দেয়া হয়নি কোন অনুদান। আর অজ্ঞাত হিসাবে ২১ জনের লাশ দাফন হলেও ডিএনএ নমুনাই রয়ে গেছে, মেলেনি পরিচয়। আজও সন্ধান মেলেনি লঞ্চটিরও।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ঈদুল ফিতরের পর ৪ আগস্ট ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝাই আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটি পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মাওয়া অংশে ডুবে যায়। সরকারিভাবে ওই ঘটনায় ৪৯ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ থাকে ৫৩ জন। শিবচর পৌর এলাকার মো. নুরুল হক মিয়ার ঢাকার শিকদার মেডিকেলে পড়–য়া মেয়ে নুসরাত জাহান হিরা ও রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এবং তার ভায়রার মেয়ে চীনের জইনুস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী শরিয়তপুরে গঙ্গানগর এলাকার জান্নাতুল নাঈম লাখী মারা গেলেও উদ্ধার হয়েছে ২ জনের লাশ। ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্ণা এখনো নিখোঁজ। এছাড়া শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা গ্রামের প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের এক ছেলে মিজানুর রহমান, পুত্রবধূ রোকসানা বেগম, আড়াই বছর বয়সের নাতি মাহিন এবং এগার বছর বয়সের নাতনি মিলিসহ একই পরিবারের ৪ জন নিখোঁজ হন।
এ দুর্ঘটনার পরপরই মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা ও মেরিন কোর্টে ২টি মামলা হয়। আসামিরা গ্রেফতার হলেও বর্তমানে আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। দুর্ঘটনায় উদ্ধারকৃত ৪৯টি লাশের মধ্যে ২৮টি লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয় আর ২১ জনকে শিবচর পৌরকবর স্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। রেখে দেয়া হয় ওই ২১ জনের ডিএনএ টেস্টের নমুনা। তবে এই ৭ বছরেও কেউ শনাক্ত করতে আসেনি লাশগুলোর। মাটির নিচে গলে পঁচে নিঃশেষ হয়ে আছে পরিচয়টুকুও। সরকারি হিসেবেই নিখোঁজ আরো ৫৩ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে অন্তত শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। যে সকল পরিবারে এখনো স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন সরকারি অনুদান। যদিও ২৮ পরিচয়ধারী নিহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে ও পরিবর্তিতে ঘোষিত ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। ঘটনার পর লৌহজং ও শিবচরে স্থাপন করা হয় অভিযোগ ও তথ্য কেন্দ্র। এ ঘটনার পরপরই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে।
নিহত হিরা ও স্বর্নার বাবা ওই লঞ্চের যাত্রী নূরুল ইসলাম মিয়া বলেন, লঞ্চের মালিকসহ ঘাট সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমার মেয়েসহ অনেক যাত্রী নিহত ও নিখোঁজ হয়। ঘটনার ৭ বছরেও দোষীদের কোন বিচার হলো না। গ্রেফতার হলেও তারা জামিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকার যদি দ্রæত দোষীদের বিচার সম্পন্ন না করে তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা এ ঘটনার দ্রæত বিচার চাই।
বিআইডবিøউটিএ কাঁঠালবাড়ি ঘাট পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর এ নৌরুটে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আগে একজন পরিবহন পরিদর্শক তিনটি ঘাটের দায়িত্ব পালন করতো। পিনাক দুর্ঘটনার পরে প্রতিটি ঘাটে একজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়াসহ অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, অজ্ঞাত ২১ জনের লাশ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে ডিএনএ শনাক্ত করে যদি কেউ আসে তবে পরিবারের কাছে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পিনাক ৬ লঞ্চ ডুবিতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এ দুর্ঘটনার পর থেকে এ নৌরুটে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। এমন দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য লঞ্চের চালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাট ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা হয়েছে। কোনভাবেই লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ আইন অমান্য করলে সাথে সাথে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন