শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করাই শ্রেয়

এ.কে.এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

চলমান বিশ্বের সর্বত্র মহামারি করোনার ছোবল জেঁকে বসেছে। কেউ বলছেন, এটা আল্লাহর গজব। আবার কেউ বলছেন- এটা মানুষের। নিজ হাতের কামাই। কেউবা বলছেন, এটা আল্লাহ পাকের দেয়া শাস্তি। করোনা মহামারিকে জ্ঞান বিজ্ঞানের অধিকারী পন্ডিত ব্যক্তিরা যে যাই বলুক, আমরা বলব, করোনা হলো ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ পাকের পরীক্ষাস্বরূপ। তিনি এর দ্বারা প্রকৃত মোমিনদের পরীক্ষা করছেন। পাপেভরা পৃথিবীর পাপাচারী দাম্ভিকেরা যে হারে, সীমালঙ্ঘন করে চলেছে এবং অন্যায় ও অবিচারের যে জমজমাট আসর জমিয়ে তুলেছে, তা থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যেই এই পরীক্ষার ব্যবস্থার করা হয়েছে।

এটা নিছক পরীক্ষাই নয়, বরং সতর্কতা সঙ্কেতও বটে। এই সঙ্কেত উপলব্ধি করে যারা ন্যায় ও কল্যাণের পথে প্রত্যাবর্তন করবে, অথবা যারা পরীক্ষায় নিপতিত হবে না, তারা প্রকৃতই সৌভাগ্যবান। হাদীস শরীফে এতদসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। যথা : (ক) হজরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন : “নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্যবাদ, যাকে পরীক্ষার ফিতনা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। নিশ্চয়ই সে সৌভাগ্যবান যাকে পরীক্ষার ফিতনা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। আর যাকে পরীক্ষা করা হয়েছে, অতঃপর সে ধৈর্যধারণ করেছে, তার জন্য রয়েছে অশেষ সুসংবাদ।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪/৪২৬৩)।

(খ) হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘বিপদ ও পরীক্ষা যত কঠিন হবে, তার প্রতিদানও তত বড় হবে। আর মহান আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তাদেরকে পরীক্ষায় নিপতিত করেন। যে ব্যক্তি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে খুশি থাকে, আল্লাহ তায়ালা ও তার ওপর খুশি হন। আর সে অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ পাক ও তার উপর অসন্তুষ্ট হন।’ (জামেয়ে তিরিমিজি : ৪/২৩৯৬)।

(গ) হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আদম সন্তানের নেতা ও সর্দার রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘মানুষের ওপর এমন একটি যুগ আসবে, যখন দ্বীনদার লোকদের জন্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে রাখার মতো কঠিন হবে।’ (জামেয়ে তিরিমিজি : ৪/২২৬০)।

(ঘ) হজরত খাববাব ইবনুল আরাত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা হাবিবে কিবরিয়া মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট আমাদের উপর নির্যাতন সম্পর্কে অভিযোগ করলাম এমন অবস্থায় যে, তিনি তখন তার চাদরটিকে বালিশ বানিয়ে বাইতুল্লার ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা তাকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আমাদের জন্য কি দোয়া করবেন না? তখন তিনি বললেন : ‘তোমাদের আগেকার ঈমানদার লোকদের অবস্থা ছিল এই যে, তাদের কারো জন্য গর্ত খোঁড়া হত। অতঃপর গর্তে নিক্ষেপ করা হত। তারপর করাত নিয়ে এসে মাথার উপর স্থাপন করা হত এবং তাকে দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হত। কিন্তু এত কিছুর পরও তাকে দ্বীন থেকে সরানো যেত না।

কারো শরীর লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে হাঁড় থেকে গোশত ও স্নায়ু তুলে ফেলা হত। কিন্তু এতে তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! অবশ্যই এই দ্বীন পূর্ণতা লাভ করবে। এমনকি তখন যে কোনো আরোহী সানআ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত দীর্ঘপথ নিরাপদে পাড়ি দিবে। এ দীর্ঘ সফরে সে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে কেউ ভয় করবেন না এবং মেষ পালের ব্যাপারে নেকড়ে বাঘ ছাড়া আর করোও ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা বড়ই তাড়াহুড়া করছ।’ (সহিহ বোখারি :৪/৩৬১২)।

অতএব, এই পবিত্র মুহাররমে করোনা পরীক্ষা হতে নিস্তার লাভের জন্য কায়মনে আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পণ করাই শ্রেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন