বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সম্মানিত মাস মুহাররাম

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মুহাররম মাসের হেলাল দেখা গেছে এবং নতুন চান্দ্রবর্ষ শুরু হয়েছে। সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর, যিনি আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করেছেন এবং নতুন একটি মাস ও বছরের সূচনায় আমাদের পৌঁছে দিয়েছেন।

নতুন বছর, নতুন মাস, নতুন সপ্তাহ এবং প্রতিটি নতুন দিন ও রাত আমাদের জীবনের অংশ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্বতন্ত্র নিয়ামত। এগুলোর জন্য স্বতন্ত্রভাবে শোকর আদায় করা দরকার। নতুন নতুন সংকল্প ও প্রত্যয়ে এগুলোকে বরণ করা দরকার। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে : এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন। (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সূরা ফুরকান : ৬২)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : পবিত্রতা ঈমানের অংশ। ‘আলহামদু লিল্লাহ’ মীযানের পাল্লাকে ভরে দেয়। ‘সুবহানাল্লাহ ও আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান-যমীনের মধ্যস্থ শূন্যতাকে ভরে দেয়। সালাত হলো নূর। সদকা হলো দলিল। সবর হচ্ছে আলো। কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রতিটি মানুষ সকাল যাপন করে; অতঃপর কেউ নিজেকে (আল্লাহর আনুগত্যে) নিয়োজিত করে জীবনকে রক্ষা করে। আর কেউ (নফস ও শয়তানের আনুগত্যে নিয়োজিত করে) নিজেকে ধ্বংস করে। (সহীহ মুসলিম : ২২৩)।

সৌভাগ্যবান তো সেই ব্যক্তি যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া যায়। দুর্ভাগা সেই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত হয়, যা তার ধ্বংস টেনে আনে।

মুহাররম চান্দ্রবছরের প্রথম মাস। সম্মানিত চার মাসের তৃতীয় মাস। হাদিস শরীফে এ মাসের অনেক ফজিলতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোযা ও তাওবা ইসতিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : রমযানের পর সবচেয়ে উত্তম রোযা হলো আল্লাহর মাসের রোযা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরয নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম নামায হলো রাতের নামায। (সহীহ মুসলিম : ১১৬৩)।
এই হাদিসে লক্ষণীয় বিষয় হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) মুহাররম মাসকে বলছেন ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস। জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এরপরও কোনো এক মাসকে আল্লাহর মাস বলার রহস্য কী? রহস্য হলো, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সে জন্যই তাকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমনÑ দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না।

মুহাররমের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফজিলত হলো, এর সঙ্গে তাওবা কবুলের ইতিহাস যুক্ত। মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদিসে আছেÑ এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল : আল্লাহর রাসূল! রমযানের পর আপনি আমাকে কোন্ মাসে রোযা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে নবী (সা.) বললেন, তুমি যদি রমযানের পর আরো কোনো মাসে রোযা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোযা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরো মানুষের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী : ৭৫১)।

এই হাদিসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে খুব সম্ভব সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইসতিগফার করবে।

ইসতিগফারের জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত ইসতিগফার বিষয়ক দুআগুলো বুঝে বুঝে মুখস্থ করবে। সেই দুআগুলোর মাধ্যমে রাব্বে কারীমের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তবে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে ইসতিগফার করলেও ঠিক আছে। কারণ আল্লাহ সকল ভাষারই ¯্রষ্টা। তিনি সবার কথা বোঝেন। সকলের আরজি কবুল করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md. Monirul Islam ৫ আগস্ট, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
প্রবন্ধটি খুবই সুন্দর অর্থবহ। সত্যই মুহাররম মাস আমাদের কে উদ্বুদ্ধ করে তওবা করতে। আর তওবা করা সকল মুসলমানের জন্য জরুরী। মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক কে ধন্যবাদ, তিনি সংক্ষেপে অনেক সুন্দর কথা তুলে ধরেছেন। সে সাথে পত্রিকার সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Amin ullah ৫ আগস্ট, ২০২২, ৩:৫০ এএম says : 0
Muharram month is very special for all Muslim , we need to pray much more as a regular month. May Allah forgive all Muslims,.
Total Reply(0)
Omar Faruk ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
Total Reply(0)
Ismail Sagar ৫ আগস্ট, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা পালনসহ ইসলামের কল্যাণে আশুরার ঘটনাবহূল আলোচনা মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন