শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে ইসলাম

খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০০ এএম

নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহ তায়ালার নিকট মনোনীত ধর্ম। ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য নিয়ে এসেছে মুক্তির পয়গাম। গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে ইসলাম। আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার বিষয়ে যাতে কোনো প্রকার উগ্রতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য খুৎবা পূর্ব বয়ানে ইমাম-খতিবরা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। জায়গার অভাবে অধিকাংশ মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম আল্লাহ তায়ালার নিকট মনোনীত ধর্ম।’ ইসলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য নিয়ে এসেছে মুক্তির পয়গাম। ইসলামে মানব জাতি আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে স্বীকৃত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেছি এবং তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মানবজাতি আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে, পরে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হতে পার।’

ইসলাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় যে উদাহরণ ও বিধি-বিধান প্রদান করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বেনযীর। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত মঠ, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম।’ কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, অন্যথায় তারা সীমালঙ্ঘন করে অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে।’

ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘দ্বীন সম্পর্কে জোর-জবরদস্তি নেই।’ তাইতো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানে নিযুক্ত শাসনকর্তা হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) কে চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন ইহুদি বা খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী কাউকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না। ইসলাম মানবজীবনকে একান্তই সম্মানজনক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মানুষের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠীর হত্যার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করে জীবনের নিরাপত্তার গুরুত্ব প্রদান করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে কেউ হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’

পেশ ইমাম বলেন, কোনো সংকীর্ণতা নয়, হিংসা-বিদ্বেষ নয়, উদারতা ও মহানুভবতা হচ্ছে ইসলামের বৈশিষ্ট্য। ইসলাম গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সওগাত নিয়ে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইসলামী অনুশাসন মানার ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম আদর্শে আদর্শবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, এই রবিউল আউয়াল মাসে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এই পৃথিবীতে আগমন করেন। আল্লাহ পাক বলেছেন, আমি আপনাকে মুহাম্মদ (সা.) জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)। তিনি ছিলেন দয়ার নবী। তিনি মানুষকে জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরো বলেন, জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী (সা.) আমাদের আদর্শ। কোরআন শরিফে আল্লাহ পাক বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনেই তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ রয়েছে। (সুরা আহজাব, আয়াত-২১)। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে প্রিয় নবীর সীরাত আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, সৃষ্টিকুলের ওপর স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী পবিত্র কোরআনের মর্যাদাও পৃথিবীর সমস্ত বাণীর শীর্ষে ও ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। আর এ কোরআনই একমাত্র কিতাব যা বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ হিসবে প্রমাণিত। এ কিতাব নাযিল করা হয়েছে সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মহামানব সমগ্র জগতের মুক্তির দিশারী বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।

তিনি বলেন, এ গ্রন্থ শুধু মুসলমান নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য এক মহাপাথেয়। ইহকালের শান্তি ও পরকালের মুক্তি এর মাঝেই নিশ্চিত। কোরআনই হলো রাসুলের পবিত্র জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এর প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণে দশটি নেকি। কোরআন তিলাওয়াতে মুমিন অনুভব করে অসাধারণ প্রশান্তি। কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণে ও গবেষণা অধ্যায়নে ধন্য হয়েছে অসংখ্য অগণিত কাফের, মুশরিক, ঈমানহারা বিজ্ঞজনরাও। পবিত্র কোরআনের অবমাননার পরিণাম দুনিয়া ও আখিরাতে খুবই খারাপ ও ভয়াবহ। যারা আমার আয়াত (কোরআন) কে উপহাস (অবমাননা) ও ব্যর্থ করার চেষ্টা করে, তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। (সূরা হজ্ব-৫১)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন : যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ওপর অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন এমন শাস্তি, যা (দুনিয়া ও আখিরাতে) লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। (সুরা আহজাব-৫৭)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেন। আমীন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, রবিউল আউয়াল মাসে আমরা নিয়মিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাত পাঠের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি। পবিত্র সীরাত যুগে যুগে অসংখ্য মানুষকে ঈমানের পথ দেখিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে বা এ বিষয়ে আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহযাব : আয়াত-২১)। খতিব আরও বলেন, ইসলাম সহনশীলতার ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ফলে এদেশের অমুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশেই বসবাস করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন