শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রধান কারণ রাজনীতি

মেহেদী হাসান পলাশ | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু রাজনীতি’ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি। অন্তত বাইশটা জেলায় শতাধিক ঘটনা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলি, সাধারণত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ বা নির্যাতন পরিচালিত হয় না। বাংলাদেশে যেটি হয় তা হচ্ছে ‘সংখ্যালঘু রাজনীতি’। ইংরেজিতে বলা যায়, ‘দ্য মাইনোরিটি কার্ড’। নানাকারণে সংখ্যালঘুরা এই রাজনীতির শিকার হচ্ছে কয়েক দশক ধরে।
‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ শব্দটি মূলত এ দেশের নাগরিক সমাজ ও মিডিয়ার সৃষ্টি। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজে বোঝানো যাবে। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের খবর মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই ঘটনা যখন কোনো মাদ্রাসায় বা মসজিদে ঘটে, তখন মিডিয়ার শিরোনাম হয় মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক/ মসজিদের ইমাম কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন শিরোনাম হয় না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ। বাগেরহাট পিসি কলেজের ছাত্রী ও রামপালের বাসিন্দা এক হিন্দু নারী, যার স্বামীকে বেঁধে রেখে তার চোখের সামনে গণধর্ষণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। ধর্ষিতা ওই নারী ও তার স্বামী আমাকে জানিয়েছিলেন, ধর্ষকরা সকলেই তাদের পূর্ব পরিচিত এবং সকলেই একই সম্প্রদায়ের। কিন্তু মিডিয়া ধর্ষকদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে শিরোনাম করেছিল। এরকম অসংখ্য ঘটনা পেয়েছি আমি।
রাজনৈতিক কারণে, সামাজিক কারণে এই দেশে ক্ষমতাশালী বা বলদর্পী লোকেরা দুর্বলের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও শোষণ-নিপীড়ন চালিয়ে থাকে। সামাজিক অপরাধের অংশ হিসেবে এখানে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, জমি দখল, লুটতরাজ প্রভৃতি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। প্রতিদিনকার গণমাধ্যমের সংবাদে চোখ বুলালেই এ সত্য প্রতিভাত হবে। এখানে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ, পেশী বা অন্যভাবে ক্ষমতাশালী লোকেরা দুর্বলের উপরে এহেন অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়ে থাকে। এ ছাড়াও অপরাধের সাথে জড়িত বা পেশাদার অপরাধীরাও নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ কর্ম সংঘটিত করে থাকে। সামাজিকভাবে দুর্বল অবস্থান বা বিবিধ কারণে একটি শ্রেণী এসব অপরাধের শিকার হয়। অর্থাৎ অপরাধের বিচারে আমাদের সমাজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি শোষক, অন্যটি শোষিত; একটি নির্যাতক, অপরটি নির্যাতিত; একটি অপরাধী, অপরটি ভুক্তভোগী। যেটা বলতে চাইছি তা হলো, ধর্ম এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। ক্ষমতাশালী ও বলদর্পী শ্রেণীর হিন্দু বা মুসলিম কর্তৃক দুর্বল ও ক্ষমতাহীন হিন্দু বা মুসলিমরা এখানে নানাভাবে নির্যাতিত হয়, তবে সেটা কখনোই ধর্মীয় বিবেচনায় নয়। কিন্তু এই নির্যাতিত বা ভুক্তভোগী ব্যক্তি যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয় তখন মিডিয়া ও এক শ্রেণীর মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজ তাকে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ শিরোনামে ইনবক্স করে। এমনকি যদি নির্যাতকও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও নির্যাতকের পরিচয় না দিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে শিরোনামে বিশেষায়িত করে। যেমন, পীরগঞ্জের ঘটনায় ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকারী পোস্টদাতা যুবক পরিতোষ সরকারের পরিচয় আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত অধিকাংশ গণমাধ্যম চেপে গিয়েছে। একইসাথে চলমান ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের কথা গণমাধ্যমে তেমন আলোচিত হয়নি।
অতীতেও সংখ্যালঘুদের উপর বিভিন্ন হামলার ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে যখনই কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নাম এসেছে, তখন তদন্তের আগেই মিডিয়া ও পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের আইডি হ্যাক হয়েছে বলে প্রচার করে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতিত হওয়ার অধিকাংশ ঘটনার পেছনে কারণ থাকে রাজনীতি, এরপর সোশ্যাল ক্রাইম, লোভ, দ্বন্দ্ব বা ষড়যন্ত্র। হিন্দু ও নাগরিক সমাজের একাংশের দাবি, এই দেশে এমন একটি ধারণা বিদ্যমান রয়েছে যে, সংখ্যালঘুরা এখানে থাকলে ভোট আমাদের; চলে গেলে জমি আমাদের। অর্থাৎ এখানে রাজনীতি ও লোভের কারণ রয়েছে। টেকনাফে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ইয়াবা পাচার নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে ঘটনার সূত্রপাত। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঙালি ইয়াবা পাচারকারীদের একটি টিম ইয়াবা নিয়ে চাকমা গ্রামের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছিল। এসময় চাকমা যুবকরা তাদের থামিয়ে জোরপূর্বক ইয়াবা কেড়ে নেয়। পাচারকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার স্মরণাপন্ন হলে তিনি বিষয়টা মীমাংসার উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে একাধিক সালিশী বৈঠক হয়। চাকমাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতারা তাদের মেয়েদের অসম্মান করেছে। ফলে এ নিয়ে তর্কাতর্কি হাতাহাতিতে গড়ায়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনার পরে রাতে মন্দিরের অস্থায়ী বর্ধিতাংশে আগুন লাগে, ভাংচুর হয়। চাকমাদের দাবি বাঙালিরা এর জন্য দায়ী। বাঙালিদের দাবি, রাতে তাদের পক্ষে ওইদিকে যাওয়া সম্ভব নয়। এ ঘটনার সূত্রপাতের কারণ স্যোশাল ক্রাইম, সাম্প্রদায়িকতা নয়। কিন্তু মিডিয়াতে শুধু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি হাইলাইট করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে বলতে পারি, এ ধরনের ঘটনা পাহাড়ে মাঝে মধ্যেই ঘটতে দেখি। পাহাড়ি-বাঙালি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই পাহাড়ি পাড়ায় জ্বলে ওঠে হিংসার আগুন। উপজাতীয় কুটির, মন্দির পোড়ে। কখনো বাঙালি ঘরবাড়িও পোড়ে। তদন্ত শুরুর আগেই পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের একতরফা বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। এরপর সরকারি, বেসরকারি, দেশি-বিদেশি সাহায্যে পাহাড়িদের পর্ণ কুটিরের জায়গায় ওঠে টিনশেড, পাকা ঘর। কিন্তু একই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। কুমিল্লায় ঘটনাতেও নিহত ৮ জনের মধ্যে ৫ জন বাঙালি মুসলিমদের খোঁজও কেউ নিচ্ছে না। অথচ, যারা নিহত, আহত বা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা এ ঘটনার সাথের কেউ নয়। তারা হুজুগে বাঙালি বা নোংরা রাজনীতির শিকার।
খাগড়াছড়ির ইতি চাকমার কথা বলা যায়। ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বোনের ফাঁকা বাড়িতে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হন তিনি। এ ঘটনার পর পাহাড়ে এবং রাজধানীসহ দেশে-বিদেশে প্রবল বাঙালি বিরোধী আন্দোলন হয়। শুধু উপজাতীয়রা নয়, জাতীয় পর্যায়ের কথিত নারীনেত্রী, মানবাধিকার কর্মীরাও সরব, সোচ্চার হন। মিডিয়াতে আলোচিত হয় প্রবলভাবে। পুলিশ তদন্তের পর জানতে পারে, ইতি চাকমার প্রেমিক রাজু চাকমা নিজেই এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত। রাজু চাকমা আটক হলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর সব আন্দোলন, আলোচনা চুপসে যায়। পাহাড়ে কোনো শ্লীলতাহানীর সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর ন্যূনতম নামগন্ধ পাওয়া গেলে রাজধানী থেকে দলে দলে মিডিয়া কর্মী, নারীনেত্রী, মানবাধিকার কর্মীরা ছোটেন পাহাড়ে। কিন্তু সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ না দেয়ার অভিযোগে মিতালী চাকমারা যখন মাসের পর মাস ধর্ষিত হয় এবং সেখান থেকে পালিয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, সে ঘটনা প্রকাশের জন্য মিডিয়া খুঁজে পাওয়া যায় না। তার পাশেও কোনো নারী/মানবাধিকার নেতানেত্রীকে দেখা যায় না। রংপুরে পরিমলের ঘর কোনো মানুষের লাগানো আগুনে পোড়েনি, পুড়েছে তাদের ঘরে থাকা কলা পাকানোর আগুনে। বিষয়টি তাদের নিজেদের স্বীকারোক্তিতেই বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ মিডিয়াই এ সংবাদ চেপে গিয়েছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িকতার এটাই কমন চরিত্র। আফগানিস্তানে নারীদের পর্দা করে শিক্ষাঙ্গনে যাওয়ার নির্দেশ দিলে এরা স্যোশাল মিডিয়ায় লিখে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা পরার কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলে এরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকে। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত থেমিসের মূর্তি অপসারণের দাবি তাদের কাছে তালেবানী মনে হয়, কিন্তু হজ্বের পবিত্র তালবিয়ার সাথে ব্যান্ড বাজিয়ে নাচ গান করা এদের কাছে উন্নত সংস্কৃতির পরিচায়ক। হিন্দু মহাসভা বাংলাদেশের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক যখন অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য মোদীর প্রতি আহ্বান জানান, তখন তিনি নাগরিক সমাজের লোক থাকেন, কিন্তু কুমিল্লার ঘটনার পর সরেজমিনে তদন্ত করে এসে যখন তিনি শাসকদলকে দায়ী করেন, তখন তিনি জামায়াতে ইসলামের হিন্দু শাখার সভাপতি হয়ে যান। কুমিল্লা থেকে পীরগঞ্জ, নোয়াখালি, লামা কিম্বা কক্সবাজার, টেকনাফ- এবারের প্রতিটি ঘটনার সাথে একটি রাজনৈতিক গন্ধ রয়েছে। এই গন্ধ পূর্বের এ ধরনের ঘটনার পেছনেও সক্রিয় ছিল। কিন্তু তখন এ বিষয়টিকে সামনে আনা হতো না, কিন্তু এবারে আনা হয়েছে। এটা পরিকল্পিত। চিত্রনাট্যের রচয়িতাদের মূল লক্ষ্য বাস্তবায়নে এটি করা হয়েছে। স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ছত্রছায়া টেনে আনা হয়েছে, যাতে উৎসে বার্তাটি পৌঁছে দেয়া যায়। টেকনিক্যাল কারণে এখন গার্মেন্টে আগুন লাগানোয় কিছু অসুবিধা আছে। এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতির কারণে এই মাইনরিটি কার্ড খেলা হলো। এর মধ্যদিয়েই উদ্দিষ্ট বার্তাটি ভরকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হলো। বার্তাটি অনেকটাই এমন, বাংলাদেশে চাইলে খুব সহজেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায়। সেটা চাল-পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে হোক, তিস্তা-ফারাক্কার গেট খুলে হোক কিম্বা ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে হোক- এদেশকে অস্থিতিশীল করা কোনো কঠিন নয়। তাই কারো স্বার্থ ও ইচ্ছার বাইরে যেভাবেই হোক, যাওয়ার চেষ্টা করলে এমনটাই দেখতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশে সরাসরি হামলা করার ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যও। বিজেপির প্রভাবশালী সাংসদ সুব্রাহ্মনিয়াম স্বামী যেভাবে এ ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে বাংলাদেশে হামলা করার হুমকি দিলেন, তাতে এ আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। তবে এটাই যে একমাত্র কারণ, সেটা নিসংশয়ে ভাবার অবকাশ নেই। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের পরে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনার পর আরও তিনগুণ বেশি ভোটে জিতবে বিজেপি।’ অর্থাৎ ভারতের ভোটের রাজনীতির জ্বালানিও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কুমিল্লার ঘটনার পর পশ্চিমবাংলার বিজেপি সমর্থক তারকা রাজনীতিবিদরা যেভাবে চাপান-উতোর করেছে তাতেও বিষয়টি স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বার্তা থেকে বোঝা যায়, তিনি এ বিষয়টি শুরুতেই বুঝতে পেরেছেন এবং কৌশলে তা জানিয়েও দিয়েছেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু রাজনীতির পেছনে কারা তা এখনো তদন্তাধীন। তবে ভারতের বিভিন্ন ফেসবুক আইডি থেকে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে তাকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বলে প্রচার করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়েছে। এ বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে দেশের বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কোনো বহির্শক্তির কাছে জিম্মি রাখতে পারি না। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন দেশপ্রেমে উজ্জীবিত দায়িত্ববোধ।
ধরে নেই, আজ যদি বাংলাদেশে খিলাফত রাষ্ট্র ও শরিয়্যাহভিত্তিক বিচারব্যবস্থা থাকতো, সেক্ষেত্রে কোনো মূর্তির পায়ের ওপর কোরআন পাওয়া গেলে মুসলিমদের করণীয় কী হতো? দলবেঁধে মন্দিরে হামলা করা, নাকি খলিফার উপযুক্ত প্রতিনিধির স্মরণাপন্ন হওয়া? ইসলামী রাষ্ট্রে যদি এভাবে জনগণকে আইন হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স বলে কিছু থাকতো না। খিলাফত রাষ্ট্রে বা শরিয়্যাভিত্তিক বিচার ব্যবস্থায়ও এ ধরনের ঘটনায়ও জনগণকে কানুন অনুযায়ী আচরণ করতে হতো। কাজেই যে বা যারা ইসলাম অবমাননার ধুয়া তুলে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বা জনগণকে আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য করছে বা প্ররোচিত করছে তারা প্রকারান্তেরে ইসলামের শত্রু। ইসলামপ্রিয় জনগণকে এই শত্রুর চক্রান্তের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
সরকার দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার তরান্বিত করতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি শুভ উদ্যোগ। কিন্তু এ আইনের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভয়ঙ্কর বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন হয় না মূলত সাক্ষীর অভাবে। সেখানে প্রাণভয়ে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউই সাক্ষী দিতে চায় না। ফলে অপরাধ করেও বছরের পর বছর বিচারের ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছে তারা। এতে নির্ভয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচারের সাক্ষীদের সুরক্ষা দেয়াও এই আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (15)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কোনো বহির্শক্তির কাছে জিম্মি রাখতে পারি না। সেজন্য আমাদের প্রয়োজন দেশপ্রেমে উজ্জীবিত দায়িত্ববোধ।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ২:৩১ এএম says : 0
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা দেশ ও ইসলামবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র
Total Reply(0)
Sazzadur Rahman Sabbir ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৩:১৪ এএম says : 0
আপনার এই লেখার সাথে আমি পুরোপুরি সহমত জ্ঞাপন করছি
Total Reply(0)
রফিক ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
লেখাটির মধ্যে লেখক বেশ কিছু তিক্ত সত্য কথা তুলে ধরেছেন। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করছি
Total Reply(0)
জসিম ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
দীর্ঘদিন পর সাম্প্রদায়িক-সহিংসতা বা সংখ্যালঘু-নির্যাতন ইস্যুতে একটি সুন্দর তথ্য উপাত্য ভিত্তিক সঠিক বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা পড়লাম, সেখানে লেখক অত্যান্ত দক্ষতার সাথে প্রকৃত রহস্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:০৮ এএম says : 0
এক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ মিডিয়ার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
Total Reply(0)
ইলিয়াস ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১০ এএম says : 0
দেশের কর্তাব্যক্তিরা যদি এই বিষয়টি নিয়ে এভাবে ভাবতো, তাহলে আর দেশের ভাবমূর্তি কখনও ক্ষুন্ন হতো না
Total Reply(0)
মনিরুজ্জামান ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১০ এএম says : 0
সরকার দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার তরান্বিত করতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সাক্ষী সুরক্ষা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ।
Total Reply(0)
পাবেল ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১২ এএম says : 0
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচারের সাক্ষীদের সুরক্ষা দেয়াও সরকার দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার তরান্বিত করতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সাক্ষী সুরক্ষা আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
Total Reply(0)
জহির ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১২ এএম says : 0
ইসলামপ্রিয় জনগণকে এই শত্রুর চক্রান্তের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
Total Reply(0)
শরীফ খুরশীদ আলম ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৪ এএম says : 0
যে বা যারা ইসলাম অবমাননার ধুয়া তুলে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বা জনগণকে আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য করছে বা প্ররোচিত করছে তারা প্রকারান্তেরে ইসলামের শত্রু।
Total Reply(1)
৩১ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪০ পিএম says : 0
Nayan Khorshed ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৩ পিএম says : 0
১০০% খাটি কথা
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৫ পিএম says : 0
বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে কোন অমুসলিমদের উপর হামলা হয় না
Total Reply(0)
Md Mansur ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৬ পিএম says : 0
কথাটা পুরোপুরি সঠিক। ধর্মের ব‍্যাপারে মানুষের মনে কষ্ট দেয়াও অপরাধ। ইসলামে অবৈধ। যা ঘটছে সবই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা/ সম্পদ দখল করা। তদন্তে এটাই প্রমাণিত। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া একান্ত দরকার।
Total Reply(0)
Ahmedullah Misbah ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৪:১৮ পিএম says : 0
এই কথা চির সত্য। রাজনৈতিক কারণেই হামলা সংঘটিত হয়। লেখককে ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন