২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থীদের শ্রদ্ধার স্থান হয়ে ওঠেছে বঙ্গবন্ধু গ্যালারী। মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের ঠিক মাঝখানে স্থাপন করা দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের উপর বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা, দেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সাজানো এ গ্যালারী দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো দর্শনার্থী।
মেলা সূত্র জানায়, সরকারি ছুটির দিনে সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। উদ্বোধনের পর শুরুতে তেমন না জমলেও ক্রমেই বাড়তে শুরু করেছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। এদিকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যে ডিসকাউন্ট দেয়া শুরু করায় প্রাণ ফিরেছে মেলায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেলার ৯ম দিনেও উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত দর্শনার্থী থাকায় আরো বড় পরিসরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে পার্কিং জোন। এতে শৃঙ্খলা ফিরেছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশেও।
গতকাল রোববার মেলা ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু গ্যালারীতে নারী পুরুষসহ শিশুদের ভিড়। তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর বিভিন্ন বই ও প্রামাণ্যচিত্র পরিদর্শন করছেন। অনেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বই। মেলায় ঘুরতে এসে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, বাইরের উন্নত দেশের আদলে এবার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে জমজমাট বাণিজ্য মেলার আসর বসেছে। এটা আমাদের রূপগঞ্জবাসীর জন্য গৌরবের। এমন খোলামেলা ও সুন্দর পরিবেশে মেলা হওয়ায় তুলনামূলক দর্শনার্থী বেড়েছে।
এদিকে মেলার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে বিভিন্ন পণ্যের স্টলগুলোতেও সমানতালে ভিড় দেখা যায়। কেনাকাটা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকা বাইপাস সড়কের ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান থাকায় ধুলোবালিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। এমনটাই জানালেন মেলায় ঘুরতে আসা অপর দর্শনার্থী মাহিরা তাসফি প্রভা। মেলায় অভ্যন্তরীণ খাবার হোটেল ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন নাদিম ভুইঁয়া বলেন, প্রথমবার এ মেলা হচ্ছে রূপগঞ্জে। ফলে এ মেলা জমাতে স্থানীয়দের ভূমিকা রয়েছে। আমরা খাবারের দাম কমিয়ে দিয়েছি। পিতলগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান ভুইয়া বলেন, মেলায় যাতায়াত পথে ভোগান্তি ছিলো এখন আর নেই। তাই দর্শনার্থী বাড়ছে। তাছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সব রকম সহযোগিতা থাকায় দর্শনার্থীরা নিরাপদ পরিবেশ পাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, মেলার নিরাপত্তায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপি সদস্যসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের দাবি, মেলার পাশে থাকা এশিয়ান বাইপাস সড়ক থেকে আসা ধুলায় দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হয় তাই পানি ছিটালে ধুলা কিছুটা কমবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়া দেশে গত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়লেও মেলায় মাস্ক ব্যবহারে তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি। মাস্ক না পড়ার এ বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
মাসব্যাপী মেলায় এবার দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কসমেটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ-সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে।
বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে খোলা থাকছে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা ও শিশুদের ২০ টাকা।
এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াতের জন্য ৩৫টি বিআরটিসির বাস চলাচল করছে। যাতে ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। ইপিবি জানিয়েছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এসব বিষয়ে মেলার পরিচালক ও বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলায় এখন আস্থার সঙ্গে দর্শনার্থীরা কেনাকাটা করছেন। এখানে পর্যাপ্ত নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন