ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৬তম আসরের ২০তম দিনেও পূর্ণ হয়নি সবকটি স্টল। শুধু তাই নয়, মেলায় থাকা বিদেশি কারুপণ্যে বিক্রি না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এদিকে ক্রেতাদের দাবি দেশি পণ্যের তুলনায় বিদেশি পণ্যে অতিরিক্ত দাম নেয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
পূর্বাচল নতুন শহরে ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৬তম আসর। মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন বঙ্গবন্ধু চায়না-বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারের ২০তম দিনে দেখা যায়, মেলার পূর্বপ্রান্তে অস্থায়ী ৪টি স্টল এখনো খালি রয়েছে। আর মেলার মধ্যস্থলে এমন খালি থাকা স্টল দেখে অনেক দর্শনার্থী ও ক্রেতা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মেলায় ঘুরতে আসা গোলাকান্দাইল ৬নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী মানসুরা আক্তার বলেন, মেলার সামনের দিকে ও মূল প্যাভিলিয়নের অভ্যন্তরীণ স্টল দেখার পর পূর্বপ্রান্তে খালি স্টল দেখে আর পেছনে যাইনি। পরে শুনলাম খালি স্টলের পরে আরো অর্ধশতাধিক বিভিন্ন পণ্য ও খাবারের স্টল রয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন, আমার মতো অনেকেই ধোকা খেয়ে পেছনে আর ঘুরতে যাবেন না। এতে পূর্ব ও উত্তরপাশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলার খাবার স্টল পরিচালক বলেন, মেলায় স্টল পেতে সরকার নির্ধারিত টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে তা অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে ওই বরাদ্দপ্রাপ্তকে মুনাফা দিয়েই স্টল পেতে হয়েছে। এভাবে অনেক ব্যবসায়ী মেলায় প্রথম বছর লোকসান হবে ভেবে স্টল নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেলার পরিচালক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী বলেন, মেলায় স্টল যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তারাই স্টল পরিচালনা করছে। কেউ গোপনে কারো কাছে হস্তান্তর করে থাকলে তার দায় মেলার নয়। এ সময় তিনি আরো বলেন, পূর্বপ্রান্তে যে ৪টি স্টল খালি আছে তাতে সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বসে বিশ্রাম নেন। ফলে কোন স্টলই খালি নেই।
সূত্র জানায়, মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী থাকলেও বেচা বিক্রি তেমন হচ্ছে না। মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। মেলায় এবার স্টল রয়েছে ২২৫টি। বিভিন্ন ক্যাটাগরীর মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল, ১৫টি ফুট স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বছর দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ ১১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে মেলার অভ্যন্তরে বসেছে একাধিক বিদেশি কারুপণ্যের স্টল। কথা হয় ভারতের জয়পুরের রাজস্থান থেকে আসা নন্দি এক্সপোর্টের মালিক নরেন্দ্র রাথীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলার ২০তম দিনে এ মেলা থেকে তাদের কাক্সিক্ষত বিক্রি হয়নি। দর্শনার্থীরা দেখে কিন্তু কিনে কম। তারা দাম শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। অথচ একেকটি পণ্যের উৎপাদন ব্যয়, অন্যান্য খরচ মিলে পণ্যপ্রতি খরচ বেশি। ফলে মেলার স্টল বরাদ্দ খরচ ওঠাতেও হিমশিম খেতে হবে।
যুবা ফ্রাব্রিক্সের স্টল কর্মকর্তা হারুন মিরজু বলেন, মেলায় আশা নিয়ে স্টল দিয়েছিলাম। অতীতেও বাংলাদেশের আয়োজিত মেলায় স্টল দিয়েছি। তবে এবার ক্রেতার তুলনায় দর্শনার্থী বেশি। ফলে বিক্রি হয়েছে কম। ক্রেতাদের ধারণা পণ্যমূল্য বেশি চাচ্ছি। কিন্তু আমরা অন্যসব বাজারের তুলনায় অনেক কমদামে পণ্য ছাড়ার জন্য চেষ্টা করছি।
আবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে দেশি পণ্যের স্টলে। তারা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে দিচ্ছে বিশেষ ছাড় বা ডিসকাউন্ট। এদের মাঝে মেলায় থাকা যমুনা গ্রুপের প্রিমিয়াম স্টলের সেলস কর্মকর্তা নুসরাত জাহান অন্তু বলেন, মেলার শুরু থেকেই যমুনার সব ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বিক্রি হয়েছে বেশ। ক্রেতারা হোম ডেলিভারী সার্ভিস পেয়ে খুব খুশি হচ্ছে। কারণ দেখা যায় তাদের পছন্দের একটি পণ্য ক্রয় করে তা তাদের বাসায় নিয়ে যেতে আরো ১ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হতো। মেলা থেকে পণ্য কিনলে ওই খরচ লাগছে না। একই চিত্র দেখা গেছে মেলায় থাকা আরএফএল, ওয়ালটন, মিনিস্টারসহ বিভিন্ন দেশিয় পণ্যের স্টলে। তারা হোম ডেলিভারীসহ তাদের পণ্যের বাজার মূল্য থেকে বিশেষ ছাড় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন