ভোটের আগে না হয়ে পরে কেন বহিষ্কার হলেন তৈমূর আলম খন্দকার। তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপির কোনও নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় প্রাথমিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদ হারান তিনি। ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনের দুদিনের মাথায় মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দলের প্রাথমিক সদস্যপদও হারাতে হয় তাকে। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনের আগে বাদ না দিলেও ভোটের দুদিন পর কেন তৈমুর আলমকে বাদ দেওয়া হলো
বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কারের কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষা।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে—বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদে শেষ বড় নির্বাচন ছিল নাসিক নির্বাচন। এই নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে এবং ভোটে কারচুপি হবে এমন আশঙ্কা শুরু থেকেই বিএনপি নেতাদের ছিল।নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হারলেও তৈমুর আলম বিষয়টিতে তেমন জোর দেননি। উপরন্তু নির্বাচনের পর ফলাফল মেনে পরদিন বিজয়ী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর হাতে মিষ্টি খেয়েছেন। সৌজন্যবশত তাকে জড়িয়েও ধরেছেন। এটা দল ভালোভাবে নেয়নি।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে কোনও চ্যালেঞ্জ করলেন না তৈমুর। বরং ইসিকে সুষ্ঠু ভোটের চেক দিয়ে দিলেন। এতে দলের পলিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল বলেন, ‘নতুন মেয়র মিষ্টি নিয়ে বাসায় গেলেন রাজনীতি করতে। কিন্তু তিনি সেটা বুঝতে না পেরে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। তৈমুর আলম খন্দকার কেবল নারায়ণগঞ্জের কথা ভাবলেন; দলের নেতাকর্মী, সারা দেশে দলের সেন্টিমেন্ট বুঝলেন না। এতে দল ও নেতাকর্মীরা রুষ্ট হয়েছেন।’
প্রভাবশালী ওই দায়িত্বশীলের দাবি, ‘তিনি মিষ্টি খেয়েছেন, খাইয়েছেন, মাথায় হাত বুলিয়েছেন, জড়িয়ে ধরেছেন, এসব কীসের ইঙ্গিত? তিনি দলকে একেবারেই গুরুত্ব দিলেন না।’
জানতে চাইলে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি যদি এটা না করতাম, তাহলে তো পাড়ায় পাড়ায় নৌকা আর হাতির সমর্থকদের মধ্যে ঝগড়া হয়ে যেতো। এটা তো নারায়ণগঞ্জের কালচার। একটা নির্বাচন গেলো, একটা সংঘর্ষও হয়নি। এটা তো বুঝতে হবে।’
‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বড় দল হিসেবে বিএনপিতে শৃঙ্খলা ধরে রাখা’ উল্লেখ করেন দলের একজন অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাইকমান্ড এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংগঠন পরিচালনার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, ঝুঁকি একটা থাকে। যারা অনেক দিন ধরে দলের প্রতি প্রতিশ্রুত, তারা বাদ পড়লে প্রশ্ন দেখা দেবে। কতখানি প্রভাব পড়বে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। এরচেয়েও বড় হচ্ছে, দলের নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ। এসব কারণেই এই সিদ্ধান্ত।’
তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করার প্রভাব নেতাকর্মীদের ওপর পড়বে কিনা, এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সব বিবেচনায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। আমাকে তো কেউ একবারও বলেনি দলের পক্ষ থেকে। কেউ তো বলতে পারতো। আমি নির্বাচনে হেরেছি ইভিএম আর নারায়ণগঞ্জের এসপির কারণে। ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয়। আমি এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবো। আর এসপি তো আমার ঘরের কাজের লোককেও ধরে নিয়ে গেছে। আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও সংগ্রাম করবো। অন্য কোনও দল করবো না। আমি দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।’
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির অনুমোদন দেয় বিএনপি। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি এ কমিটি প্রকাশিত হয়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর তাকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে আরেক নেতাকে ‘ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক’ করা হয়। এরপর ৩ জানুয়ারি চেয়ারপারসনের পদ থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয় তৈমুর আলমকে।
এক বছর আগে নতুন করে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতৃত্বে ফিরেন তৈমুর আলম খন্দকার। জেলার নেতৃত্বে আসার পেছনে শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ থাকলেও তিনি তা মূল্যায়ন করতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেন একজন দায়িত্বশীল।
তৈমুর আলম খন্দকারকে তাহলে দলে কবে নাগাদ ফেরানো হতে পারে, এমন প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘সহসাই হবে বলে মনে হচ্ছে না। এটা বলা কঠিন। নতুন কোনও পরিস্থিতি উদয় হলে প্রসঙ্গ আসতে পারে।’
তবে, তৈমুর আলম খন্দকার দলে ফিরতে কোনও আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘দলে ফেরার কোনও আবেদন করবো না। দল যদি মনে করে ফিরিয়ে নেবে, তাহলে নেবে। দলের বিরুদ্ধেও যাবো না। সমালোচনাও করবো না। আমরা আঞ্চলিক বাস্তবতায় নির্বাচন করেছি। দলের অনেকে তো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে। দল কী তাদের বাদ দেবে?’
প্রসঙ্গত : ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার আওয়ামীলীগের মনোনীত সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন