দেড়শ বছরের পুরোনো মাইলেজ পদ্ধতিতে কাজ করছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফরা। সফটওয়্যারের মাধ্যমে রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে বিভিন্ন ভাতা ভিন্নতর হওয়ায় জটিলতার মুখে পড়েছে রেলওয়ে। এক বছর ধরে চলে আন্দোলন। কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় তারা। প্রায় প্রতিনিতই আন্দোলন চলে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের। তবে পুরোনো পদ্ধতিতেই কাজ করতে চান রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।
এ নিয়ে তারা রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সাথে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। গত ২০ জানুয়ারি রানিং স্টাফদের বেতনের সঙ্গে মাইলেজ দেয়ার কথা থাকলেও তারা মাইলেজ রীতিতে বেতন-ভাতা না পাওয়ার আশঙ্কায় আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। অবশেষে গত রোববার রেল সচিবের সঙ্গে আলোচনায় দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেয়া হয়। এজন্য পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান।
জানা যায়, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন রেলচালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিকিট টেকার (টিটি), গার্ড(ট্রেন পরিচালক), টিটিই (ট্রাভেলিং টিকেট এক্সামিনার)। যারা চলন্ত রেলে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রেল চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে এসব রানিং স্টাফের দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ডিউটি শেষে পরবর্তী ১৬ ঘণ্টা বিশ্রামে যেতে পারেন বা ব্যক্তিগত কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। কিন্তু একজন লোকোমাস্টার ডিউটি শেষ করার পরেও সবসময় অতিরিক্ত ডিউটির জন্য তৈরি থাকতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ফোন পাওয়া মাত্রই সাড়া দিতে হয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদের ছুটি, পূজার ছুটি, রাষ্ট্রীয় অসহযোগের সময় রেলওয়ে লোকো মাস্টারকে ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। তাদের কোনও ছুটি নেই। সমস্ত মানবসৃষ্ট আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে তাদের ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। বছরে ৩৬৫ দিন তাদের ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে জয়। সেই বিবেচনায় বৃটিশ আমল থেকেই ট্রেনের লোকোমাস্টাররা মাইলেজ পান।
গত ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলন্ত ট্রেনে দৈনিক ১০০ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করলেও ওই দিনের বেতনের ৭৫ শতাংশের বেশি মাইলেজ ভাতা পাবেন না সংশ্লিষ্ট রানিং স্টাফ। আর মাস শেষে এই মাইলেজ মূল বেতনের বেশি হবে না। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতেই ক্ষিপ্ত হন রেলের রানিং স্টাফরা। ফলে তাদের বেতন নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। এই বেতন জটিলতার নিরসন ও মাইলেজ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে রেলের রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান বলেন, প্রায় দেড়শ বছরের বেশি সময় আগে থেকে রেলওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছেন রানিং স্টাফরা। হঠাৎ করে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেখানে আমাদের বেতন-ভাতা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেল সচিবের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়েতে রানিং স্টাফদের মাইলেজ ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বাতিল দাবিতে চলমান আন্দোলন লিখিত আশ্বাসে স্থগিত করা হয়েছে। রেল সচিবের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এজন্য আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশ শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন রেলওয়ে রানিং কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগে থেকে। চেয়েছি আমাদের কষ্টের ন্যায্যতা ফিরে পেতে। রেলওয়েতে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে যা অর্থ মন্ত্রণালয় উপলব্ধি করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন দেয়ার আগে আরো দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক নেতা বলেন, মাইলেজ পদ্ধতি বৃটিশ আমল থেকে চালু। এ জটিলতা নিরসনের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি, যাতে দেশের সম্পদের কিঞ্চিৎ পরিমাণ ক্ষতি না হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা রেলের রানিং স্টাফদের সঙ্গে বসেছিলাম। তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেবো। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন