শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের দাবি

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাঙালির শত বছরেরর পুরনো ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। একেকটি শিল্প বিস্তারের পেছনে রয়েছে একেকটি দেশ বা জাতির অবদান। তেমনই একটি শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। যারা মাটি নিয়ে কাজ করে পেশায় তারা কুমার বা পাল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে তারা পেশা নিয়ে বেশ চিন্তিত। তারপরও দেশে এমন এলাকা বা গ্রাম আছে যেখানে এখনো বাংলার ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। এ কারণে চাহিদা কম, কাঁচামালের দু®প্রাপ্যতা ও চড়ামূল্য, সর্বোপরি পুঁজির অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মীরসরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকেরা। এখানে বসবাসকারী ৪০-৫০ পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও কর্মঠ মানুষের সংখ্যাই বেশি। ঐ পাড়ার সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখা গেল প্রায় ঘরগুলো মাটি, ছন ও টিনশেড দিয়ে তৈরি। বাড়ির সামনে ছোট্ট উঠান। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাদামাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, কলস, হাতি, ঘোড়া, মাছ পুতুলসহ ছোট-বড় নানা রকমের পাত্র।
তাদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মান অনুন্নত। আধুনিকতার প্রবল স্রোতে বাংলার প্রাচীন এই শিল্পের সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে বহু বছর ধরে জড়িত থাকা মানুষগুলো। বর্তমান সভ্যতার সাথে পেরে উঠছে না এই মাটির কারিগররা। আগে বিভিন্ন মাটির তৈরি দ্রব্যাদি ব্যবহার হলেও মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এসব সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নিপেন্দ্র চন্দ্র মাস্টার বাড়ির রাখাল চন্দ্র পাল জানান, ব্যবসা মন্দার কারণে আমাদের এখাকার মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। সামান্য আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে বলে অভিযোগ করেন এই কুমার। ব্যবসা না থাকায় অনেকে এখন অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। কাজেই এ মৃৎশিল্প ধরে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বাড়িতে ঢুকলে চোখে পড়বে মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস। কোনোগুলো কাঁচা, আবার কিছু শুকিয়ে রাখা হয়েছে, কিছু পুড়িয়ে রং করেও বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
গৃহবধূ শিউলি রানী পাল বলেন, মাটির এসব কাজ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমাদের কয়েক পুরুষ ধরে এ কাজ করে আসছে। আমরাও করছি। মাঠ থেকে মাটি এনে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে আমরা জীবিকা চালাই। কয়েকজন মৃৎশিল্পী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা আর এই সব কাজ করতে পারছি না। মেলামাইন, সিরামিক ও প্লাস্টিকের কারণে আমরা তাদের সাথে খরচ আর তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। যদি আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ আর সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমরা মনে হয় কিছুটা হলেও এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারব। মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন উপজেলার কুমার পাড়ার কুমাররা।
মৃৎশিল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আমাদের আদি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। মৃৎশিল্প আধুনিকায়ন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন