ফসলের মাঠে সোনালি রোদে বাতাসে দুল খাওয়া ধানের পাতায় চিকচিক করছে। সবুজ মাঠে বেগুনি রঙের ধান। সবুজের সাথে পাল্লা দিয়ে এ জাতের ধান বেড়ে উঠছে। আকর্ষণীয় বেগুনি রঙের ধান গাছ সবার দৃষ্টি কাড়ছে। এ ধানের জাত ‘দুলালী সুন্দরী’। মাত্র এক কেদার ধান এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন এলাকার কৃষক।
দুলালী সুন্দরী জাতের ধান সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়নের চৌকা গ্রামের উত্তরের মাঠে চাষাবাদ করা হয়েছে। এ ধান চাষ করেছেন চৌকা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আজির উদ্দিন। গত বছরের বোরো মৌসুমে তিনি ১০ শতাংশ জমিতে এ ধান চাষাবাদ করেছিলেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের মৃত সুরুজ্জামানের স্ত্রী দুলালী বেগম। তিনি রামজীবন ইউনিয়নের আইপিএম কৃষক ক্লাবের নারী কৃষক সদস্য। দুলালীর স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজের সংসারের হাল ধরতে দু’মুটো ভাতের জন্য নিজের জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। ২০১৭ সালে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন। এ জাতের মধ্যে জমিতে ১৫/২০টি গোছায় বেগুনি পাতার ধান গাছ দেখতে পান। ধানের ভিন্নতা দেখে কৌতুহলবশত ধান পাকার পর এ বেগুনি গাছের ধান আলাদাভাবে সংগ্রহ করে বীজ রাখেন। সংগ্রহ করে রাখা ধান বীজ থেকে পরের বছর ১৮ শতাংশ জমিতে চাষা করেন। দুলালীর ব্যতিক্রমী এ ধান চাষ দেশে চমক সৃষ্টি হয়। সাধারণ জাতের ধানের চেয়ে বেগুনি পাতার ধানের একটি ছড়ায় কুশির সংখ্যাও বেশি। ধানও ভাল হয়। এ ধান আমন ও বোরো মৌসুমে রোপন করা যায়। তবে বোরো মৌসুমে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। এ ধানের গোছা প্রতি ২৫-৩০ টি কুশি হয়। প্রতিটি কুশির শীষে ১৬০ হতে ৩১৩টি পর্যন্ত ধান পাওয়া যায়। বোরো মৌসুমে ১৪০ দিনে ধান কর্তন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মন ধান উৎপাদন হয়। ধান গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কৃষানীর নাম দুলালী বেগম ও উপজেলার নাম সুন্দরগঞ্জ হওয়ায় এ ধানের নাম দেয়া হয়েছে ‘দুলালী সুন্দরী’। চাষি আজির উদ্দিন জানান, নিজস্ব উদ্যোগেই গাইবান্ধা থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। প্রতিদিন তার ক্ষেত দেখতে কৃষকরা আসেন। তারা তার কাছ থেকে পরামর্শও নেন। কেউ কেউ ধানের গোছা তুলে নিয়ে যায়। ক্ষেত রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার তদারকি ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, দুলালী সুন্দরী জাতের ধান প্রথমবারের মতো গত বছর ১০ শতক জমিতে এ কৃষক চাষ করেছিলেন। ভাল ফলন হয়েছিল। এ বছর তিনি ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। এটি দেখতে বেগুনি হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কৃষককে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার তৌফিক হোসেন খান জানান, ধানের জীবনকাল অন্যান্য উফশি ধানের মতই। আবহাওয়া ভাল থাকলে ফলন ভাল হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন