সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পঞ্চগড়ে নদী এখন ফসলের মাঠ

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির সেচ প্রকল্প বন্ধ নদী বাঁচাতে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে-বাপা

মো. সম্রাট হোসাইন, পঞ্চগড় থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ফারাক্কার বাঁধসহ অভিন্ন অন্যান্য নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারতের এক তরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের নদ-নদী এখন মৃত্যু মুখে। দেশের প্রায় সব নদীই এখন পানিহীন। নদীর বুকে ফসলের মাঠ, ধু-ধু বালুচর। অনেক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর মৃত্যুতে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া নদী কেন্দ্রিক জীবন জীবিকাও মারাত্মক হুমকির মুখে। দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা ধীরে ধীরে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওযায় উত্তাঞ্চলের বেশির ভাগ নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবনে অভিশাপ বয়ে এনেছে এই ফারাক্কা বাঁধ। নদীতে পানি কম থাকায় দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা।
ফারাক্কার মরণ ছোবলে পঞ্চগড় জেলার ৩৩টি নদ-নদী এখন পানি শূন্য। নদীর বুকে ধু-ধু বালু চর। আর এসব চর এখন ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। এ অঞ্চলের নদীগুলোর অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদীর দিকে হঠাৎ দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এটি নদী নাকি ফসলের মাঠ। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর। বেশির ভাগ নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। দু-একটি নদীতে সামান্য পানি আছে। তবে প্রবাহ নেই। নদীর বুকে জেগেছে বালুচর। এসব চরে কৃষক বোরোসহ আবাদ করছে নানা পসল। রবি শস্য থেকে শুরু করে ইরি, বোরো, পাট, গম, ভুট্টা, বেগুন, মরিচ, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন সবজিও নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে। নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে এই জেলার জেলেরাও বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছে।
পঞ্চগড় জেলার বুক চিরে করতোয়া, মহানন্দা, চাওয়াই, করুম, টাঙ্গন, পাথরাজ, তালমা, পাঙ্গা, পাম, ভেরসা, ডাহুক, বেরং, গোবরা, তীরনই, রণচণ্ডী, ছোট যমুনা, ছেতনাই, পেটকি, ঘোড়ামারা, মরাতিস্তা, নাগর এখন বিস্তীর্ণ বালিয়াড়িতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে মহানন্দা ও করতোয়া নদী বাদে প্রায় সবগুলোই মরে গেছে। এসব নদীর বেশির ভাগের উৎস ভারতে। এক সময় এ নদীগুলোতে সারা বছর স্রোত থাকায় জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধসহ অন্যান্য নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এসব নদী এখন মৃত। নদীগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে এখন মরে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-উদাসিনতা এবং ভূমিদস্যুদের কড়ালগ্রাসে পঞ্চগড়ের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব নদী।
জেলায় বিভিন্ন নদী ও খালে ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকার ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির আওতাধীন কৃষকের সুবিধার্থে বিগত কয়েক বছর আগে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নয়টি বাঁধ দেয়া হয়।
এক সময় এসব নদীর পানি সেচ দিয়েই খরা মৌসুমে নদীর আশপাশে হতো ফসলের চাষাবাদ। এখন সেচ নয়, নদীর বুকেই হয়েছে ফসলের ক্ষেত। তাই বাঁধগুলো কোন কাজেই আসছেনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেয়া তথ্যমতে, পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে ৩৩ টি নদী ও একটি খাল পঞ্চগড় জেলার বুক চিরে প্রায় ৬২১ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়। যার মধ্যে ৬ টি নদী ও একটি খাল ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬৮ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে খননের পর বছর না ঘুরতেই নদী আবার ভরাট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক এ্যাডভোকেট এ কে এম আনোয়ারুল খায়ের বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী যদিও নদী ৩৩ টি মুলত রয়েছে ৪৬ টি নদী। নদীর উৎসমুখে বাঁধ আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শুকিয়ে মরে গেছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। নদীতে বোরোসহ অন্যান্য ফসল আবাদে কীটনাশক ব্যবহার করে পানি দূষণ ও জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। তাই নদী বাঁচাতে দ্রুত উদ্যোগ না নিলে এ অঞ্চল ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, পঞ্চগড়ের নদ-নদীগুলো শুকিয়ে মরে গেছে। জীববৈচিত্রের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। মাছের বিচরণক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। মাছ বংশ বিস্তার করতে পারছে না।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুক হক বলেন, জেলার সব নদীর হালনাগাদ তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। মূলত বেশির ভাগ মৌসুমি নদী। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা ফসলের মাঠ। হারিয়ে যাওয়া নদীগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয়ে বলেন করতোয়া নদীতে গঠন কাঠামো করে সুপারিশ করা হয়েছে। যদি হয় তাহলে করতোয়ার উপনদী গুলোতে খরা মৌসুমে কৃষিক্ষেত্রে সেচসুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন