শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাজারবাগ পীরের সম্পদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব দিতে দুদকের প্রতি নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ২:২৬ পিএম

রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদের হিসাব বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ একটি প্রতিবেদন জমা দিতে দুদকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে সিআইডি ও কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট আলাদা আলাদা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন আংশিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাই পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে আগামী ১২ জুনের মধ্যে। ওই দিন এ বিষয়ে আবার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) এ বিষয়ে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতের আদেশের বিষয়টি করেন ভুক্তভোগী একরামুল আহসান কাঞ্চনের আইনজীবী এমাদুল হক বশির।

এর আগে পীর দিল্লুর রহমান এবং তার দরবারের (মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ) নামে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। আদালতের নির্দেশে তদন্ত শেষে আংশিক প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে। দুদকের দাখিল করা ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পীর দিল্লুর রহমান ও তার নানা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৩২ হাজার ২০৫.৯১ শতাংশ জমি। যার মধ্যে পার্বত্য বান্দরবানের লামায় (রাজারবাগ দরবার শরীফের নামে) ১২টি লিজমূলে রাবার বাগানের নামে রয়েছে ৩০ হাজার শতাংশ জমি। মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফের (রাজারবাগ দরবার শরীফ) নামে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮১৯.৯১ শতাংশ। যার বেশিরভাগই দান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে পৈত্রিক ও ক্রয় সূত্রে দেখানো হয়েছে ৩৮৬ শতাংশ জমির মালিকানা।

এর বাইরে মতিঝিলে যৌথ সম্পত্তি দেখানো হয়েছে ৬৬.২৮ শতাংশ। যাতে ৬ তলা করে তিনটি বিশাল ভবন রয়েছে। যেখানে রয়েছে রাজারবাগ পীরের মূল আস্তানা। রয়েছে মাসিক আল বাইয়্যেনাত ও দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার কার্যালয়। রয়েছে হাসপাতালও। এছাড়াও রয়েছে পুরাতন ৫৬টি গাড়ি। যা দিয়ে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য–দ্রব্য বিক্রি করা হয়। পীর দিল্লুর রহমানের আয়কর নথি এবং ব্যাংক–বীমাসহ বিভিন্ন সংস্থায় থাকা তথ্য থেকে সম্পদের এই বিবরনী প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।



প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফের (রাজারবাগ দরবার শরীফ) ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়কর বিভাগে দাখিলকৃত অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় যে–কক্সবাজার, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, গাজীপুর, চাঁপাইনবাগঞ্জ, জামালপুর, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, নিলফামারী, নেত্রকোনা, নরসিংদী, পাবনা, পঞ্চগড়, পিরোজপুর, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরগুনা, ভোলা, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর, লক্ষীপুর, লালমনিরহাট, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং খাগড়াছড়ির বিভিন্ন থানার বিভিন্ন মৌজায় ৯০টি দানপত্র দলিল মূলে মোট ১১৭৯.১৬ শতাংশ এবং ৬টি দলিল মূলে ৬৩৯.৯৫ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিকানা অর্জিত হয়। যা ২০২১-২০২২ করবর্ষের দরবারের আয়কর রিটার্নে অডিট রিপোর্টসহ প্রদর্শিত বলে দেখা যায়।

হাইকোর্টে দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালীন বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে কিছু তথ্য ও রেকর্ডপত্র পাওয়া গেছে। তবে পূর্নাঙ্গ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। অবশিষ্ট তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহের বিষয়টি চলমান রয়েছে। তাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো.সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দুদক কেবল আয়কর নথিসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য দিয়েছে। নিজেদের তদন্ত নেই।

এর আগে গত বছররে ৫ ডিসেম্বর রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমানের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পীর ও তার সঙ্গী-অনুসারীদের কার্যকলাপ এবং উদ্দেশ্য দেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত, তাদের প্রকাশিত আরও কয়েকটি বই এবং দরবারের অনুসারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা পর্যালোচনা করে সিটিটিসি জানিয়েছে, রাজারবাগ দরবারের নেতারা ধর্মভীরু লোকদের বিপথগামী করতে এবং ইসলামের নামে হত্যা ও জিহাদের দিকে প্ররোচিত করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নামে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করছে। তাদের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নানাভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। তাদের এসব কার্যক্রম সরাসরি সরকারি নীতিমালা, দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরোধী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে রাজারবাগ পীরের বিষয়ে দুই দফা প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি। গত ৪ জানুয়ারি দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশে অসংখ্য খানকা, মাদ্রাসা, মসজিদসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলে সহজ সরল মানুষকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে দরবারের অনুসারী করার চেষ্টা করা হয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার যে অভিযোগ উঠেছে, তারও প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে। ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদের ভাষায় মালাউনদের হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে ফতোয়া দেওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে। যা মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের ফতোয়ার অনুরূপ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯টি মামলার বিরুদ্ধে একরামুল আহসান কাঞ্চন দায়ীদের খুঁজতে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে একরামুলের বিরুদ্ধে হওয়া ৪৯ মামলার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রুলসহ আদেশ দেন।

এরপর সিআইডির প্রতিবেদনে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে পীর সিন্ডিকেটের করা হয়রানিমূলক মামলার তথ্য উঠে আসে। পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবার শরীফের সব সম্পদের তথ্য খুঁজতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), তাদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কিনা তা তদন্ত করতে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এবং উচ্চ আদালতে রিটকারী ৮ জনের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পীর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

পরবর্তীতে গতবছরের ২ ডিসেম্বর পীর দিল্লুর রহমানসহ চার জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর গত ৫ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় রাজারবাগ দরবার শরীফ নজরদারিতে রাখতে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমকে (সিটিটিসি) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে হাইকোর্ট তার আদেশে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি ও কাউন্টার টেরোরিজমের ইউনিটির প্রতিবেদনের জঙ্গি সম্পৃক্ততাসহ বেশকিছু অভিযোগ ওঠায় রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমানসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারবে বলে আদেশ দেন। এছাড়াও সরকারি সংস্থাগুলোর তদন্ত চলাকালে পীর ও তার অনুসারীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবেন বলেও আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে রিটকারীর আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মৌখিক নির্দেশ দেন আদালত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন